সংক্ষিপ্ত
এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যেই করোনার চিকিৎসার থেকে মলনুপিরাভির বা মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপিকে বাদ দিল স্বাস্থ্য দফতর। এগুলিতে অনুমোদন দেওয়ার ৭২ ঘণ্টা পরই সিদ্ধান্ত বদল করলেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা।
রাজ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ (Corona Cases)। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিকিৎসকদের (Doctor) মতে, রাজ্যে আছড়ে পড়েছে করোনার তৃতীয় ঢেউ (Corona Third Wave)। পাশাপাশি আবার চোখ রাঙাচ্ছে করোনার নতুন রূপ ওমিক্রন (Omicron)। পরিস্থিতি ক্রমশই হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। আর এর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না প্রথম শ্রেণির করোনা যোদ্ধা, অর্থাৎ চিকিৎসক ও পুলিশকর্মীরা (Police)। একের পর এক তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে আসছে। আর এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যেই করোনার চিকিৎসার থেকে মলনুপিরাভির (Molnupiravir) বা মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপিকে (Cocktail Therapy) বাদ দিল স্বাস্থ্য দফতর (Health Department)। এগুলিতে অনুমোদন দেওয়ার ৭২ ঘণ্টা পরই সিদ্ধান্ত বদল করলেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা।
রাজ্যের চিকিৎসা প্রোটোকলে মলনুপিরাভির বা মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপির উল্লেখ ছিল না। এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। তাঁকে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপি দেওয়া হয়েছিল। তারপরই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। রাজ্যের চিকিৎসা প্রোটোকলে না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে মলনুপিরাভির বা মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের দেওয়া হচ্ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন একাধিক চিকিৎসক। তারপরই তড়িঘড়ি ৩১ ডিসেম্বর তড়িঘড়ি রাজ্যের চিকিৎসা প্রোটোকলে এই দুই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
যদিও এই দুই পদ্ধতি অনেক আগে থেকেই প্রয়োগ করা হচ্ছিল বলে জানান স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। আগে নাকি অনেকের শরীরেই এর প্রয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু, সেগুলিকে কখনও রাজ্যের চিকিৎসা প্রোটোকলের আকারে প্রকাশ করা হয়নি। আর বিতর্ক তৈরি হতেই তা তড়িঘড়ি প্রোটোকলের আকারে বের করা হয় বলে অনুমান ওয়াকিবহাল মহলের। এদিকে অনুমোদন দেওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই আবার তা প্রত্যাহার করা হয়। এ প্রসঙ্গে অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এই দুই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা এখনও প্রকাশ হয়নি। তাই মলনুপিরাভির এবং মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিকে করোনা চিকিৎসার প্রোটোকল থেকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
যদিও বিষয়টি এতটাও সহজ নয় বলে মনে করছেন রাজ্যের চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের মতে, স্বাস্থ্য দফতরের প্রোটোকলে লেখা হয়েছে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ওমিক্রনের চিকিৎসায় খুব একটা কার্যকর নয়। তাহলে যা কার্যকর নয় সেটা কীভাবে গাইডলাইনে দেওয়া হল? এমনকী, মলনুপিরাভির এখনও পর্যন্ত বাজারে আসেনি। তাহলে যে ওষুধ বাজারে নেই সেই ওষুধকে কীভাবে রাজ্যের চিকিৎসা প্রোটোকলের মধ্যে লেখা হল? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন- করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তৃণমূল নেতা বাবুল সুপ্রিয় ও তাঁর পরিবার
তবে এখানেই শেষ নয় আরও অনেক প্রশ্নই তোলা হয়েছে, আসলে দেশের মধ্যে এই দুই পদ্ধতিকে কোথাও প্রোটোকলে যুক্ত করা হয়নি। এনিয়ে আইসিএমআর-ও কোনও নির্দেশিকা দেয়নি। তাহলে হঠাৎ করে কীভাবে শুধুমাত্র বাংলাতেই এগুলিকে প্রোটোকলের মধ্যে দেওয়া হল? এছাড়া এই দুই পদ্ধতি ঠিক কোন ধরনের করোনা রোগী ও কোন বয়সের রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে তা নিয়ে স্পষ্টভাবে কোনও উল্লেখ করা নেই। আর এই সব প্রশ্ন তোলার পর চিকিৎসকদের একাংশের মতে, তাহলে শুধুমাত্রই বেরসকারি হাসপাতালগুলিকে মুনাফা পাইয়ে দেওয়ার জন্যই এই দুই পদ্ধতিকে প্রোটোকলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। আর সৌরভ উডল্যান্ডসে ভর্তি হওয়ার পরই বিষয়টি আলোচনার মধ্যে চলে আসে।