সংক্ষিপ্ত
জাঁকজমকপূর্ণ মেলা না করে শহিদদের স্মরণে ঝালদার কংগ্রেস নেতা কর্মীরা শহিদ বেদিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে শেষ করলেন এবছরের সত্য মেলার কর্মসূচি। পুরুলিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের মেলায় তৈরি হল ইতিহাস।
শহিদ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণে আয়োজিত শহিদ মেলায় করোনার তৃতীয় তরঙ্গের কোপ। পরাধীন ভারতবর্ষের সময় থেকে শুরু হওয়া মেলা বন্ধ করে ইতিহাস তৈরী করল কংগ্রেস।
কোভিড বিধি মেনে মেলা করার অনুমতি দিয়েছে নবান্ন। রাজ্য সরকারের মেলা করার অনুমতি থাকলেও পুরুলিয়ার ঝালদায় কংগ্রেসের উদ্যোগে আয়োজিত হওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণে আয়োজিত হওয়া সত্য মেলা বন্ধ রাখল কংগ্রেস। সারা রাজ্যের সাথে পাল্লা দিয়ে পুরুলিয়াতেও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, তাই স্বাধীনতার আগে থেকে হয়ে আসা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বলিদানের ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে সত্য মেলার আয়োজন আগে থেকেই বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস।
জাঁকজমকপূর্ণ মেলা না করে শহিদদের স্মরণে ঝালদার কংগ্রেস নেতা কর্মীরা শহিদ বেদিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে শেষ করলেন এবছরের সত্য মেলার কর্মসূচি। পুরুলিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের মেলায় তৈরি হল ইতিহাস।
বিষয়টি নিয়ে জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল চট্টরাজ জানান, প্রতি বছর তিন দিন ধরে ঝালদার গোকুলনগর গ্রামের কাছে পলাশের জঙ্গলে স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের স্মরণে সত্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এবছর কোভিডের কারণে মেলা বন্ধ রেখে শুধুমাত্র শহিদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল ঝালদা ব্লকের সত্যমেলা প্রাঙ্গনে একসময় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিপ্লবীদের লাঠিখেলার আখড়া ছিল। এখানকার পলাশ জঙ্গলে চলত লাঠিখেলার প্রশিক্ষণ। এই আখড়ার ওস্তাদ ছিলেন ঝালদার সত্যকিঙ্কর দত্ত। সত্যকিঙ্কর দত্ত ইংরেজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ১৯২৮ সালে এই পলাশের জঙ্গলে ঋষি নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্তের আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলনের সদস্য হন ও কালী মূর্তি স্থাপন করে লাঠি খেলার প্রশিক্ষণ শুরু করেন। সেই সময় ইংরেজরা সত্যকিঙ্কর দত্তকে পুলিশের চাকরির প্রস্তাব দেন।কিন্তু সেই প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
পরে ১৯২৯ সালে ইংরেজদের হাতে শহিদ হন স্বাধীনতা সংগ্রামী সত্য কিঙ্কর দত্ত। তাঁর স্মৃতিতে শুরু করা হয়েছিল সত্যমেলা। কিন্তু ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে হওয়ায় সত্য মেলা মেনে নিতে পারেনি ব্রিটিশরা। ১৯৩১ সালে সত্যমেলাতে ১৪৪ ধারা লাগু করা হয়। সেই সময় ঝালদা এলাকার আরও পাঁচ জন গোকুল মাহাতো,শীতল মাহাতো, মোহন মাহাতো,গণেশ মাহাতো ও সহদেব মাহাতোরা ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। সেটাই ছিল" ফার্স্ট ফায়ারিং ইন বিহার"।
তৎকালীন বিহার রাজ্যে থাকাকালীন মানভূম বর্তমান পুরুলিয়ার ইতিহাসে সেটাই ছিল ব্রিটিশদের প্রথম গুলি চালানোর ঘটনা। যেখানে শহিদ হয়েছিলেন পাঁচজন। সেই গুলি চালানোর ঘটনায় ফাস্ট ফায়ারিং ইন বিহার নামে উল্লেখিত রয়েছে। সেই সময় থেকে বন্ধ হয়ে যায় সত্যমেলা। ১৯৫৬ সালে বিহার রাজ্য থেকে মানভূম পশ্চিমবঙ্গের সাথে যুক্ত হয়। কিন্তু তারও প্রায় তিন দশক পরে পুরুলিয়া জেলাতে ঝালদা অন্তর্ভুক্ত হলে ১৯৭৪ সালে তৎকালীন সাংসদ দেবেন্দ্র নাথ মাহাতোর উদ্যোগে ঝালদা বাসস্ট্যান্ডে শহিদ বেদি ও পুনরায় শুরু হয় সত্যমেলা।
সত্য মেলাপ্রাঙ্গণে বাগমুন্ডির প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর উদ্যোগে শহিদদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তৈরি করা হয় সংগ্রহশালা। সেই সময় থেকেই প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে সত্য মেলা। যদিও এই বছর কোভিড সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে মেলার আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র শহিদ বেদীতে মাল্যদান করে এবছরের কর্মসূচি সমাপ্ত করেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।