সংক্ষিপ্ত
করোনা আক্রান্ত পুরুষদের রয়েছে বন্ধাত্বের ঝুঁকি
টিকাও অনেকটা ভাইরাসের মতোই কাজ করে
তাহলে টিকা নিলেও বাবা হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে
কী বলছেন মার্কিন গবেষকরা
করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন নেওয়া নিয়ে অনেকের মধ্যেই দ্বিধা রয়েছে। শুধু সাধারণ মানুষ নন, বিজ্ঞানীদের মধ্যেও কেউ কেউ করোনার টিকার বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সন্দিহান। করোনা আক্রান্ত হলে পুরুষদের জীবনে বন্ধাত্ব নেমে আসতে পারে, এমন প্রমাণ আগেই পাওয়া গিয়েছে। তাই অনেক জায়গাতেই প্রশ্ন উঠেছে, করোনার টিকা নিলেও বন্ধাত্ব নামতে পারে পুরুষদের জীবনে? ভ্যাকসিন নিলে বাবা হওয়া যাবে তো?
এই নিয়েই গবেষণা চালিয়েছে আমেররিকার মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। শুক্রবারই জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকাল অ্যাসোসিয়েশন (JAMA)-এ তাঁরা সেই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন। ৪৫ জন পুরুষকে করোনা টিকা দেওয়ার আগে ও পরে তাদের শুক্রানুর সংখ্যার মূল্যায়ন করেছেন তাঁরা। ২১ জন পেয়েছিলেন বিএনটি১৬২বি২ (BNT1612b2) অর্থাৎ ফাইজার-বায়োনেটেক'এর তৈরি করোনা টিকা। আর ২৪ জনকে দেওয়া হয়েছিল মডার্না সংস্থার তৈরি করোনা টিকা, এমআরএনএ-১২৭৩ (mRNA-1273)।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের পর স্বেচ্ছাসেবকদের গড় বেসলাইন শুক্রাণু ঘনত্ব (BSC) এবং মোট চলমান শুক্রাণু গণনা (TMSC) ছিল যথাক্রমে প্রতি মিলিলিটারে ২ কোটি ৬০ লক্ষ এবং ৩ কোটি ৬০ লক্ষ। দ্বিতীয় ডোজ পড়ার পর, শুক্রাণুর ঘনত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে হয়েছিল প্রতি মিলিলিটারে ৩ কোটি এবং টিএমএসসি ৪৪ মিলিয়ন। বীর্যের পরিমাণ এবং শুক্রাণুর গতিশীলতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই দাবি করেছেন গবেষকরা।
তাঁরা জানিয়েছেন এই বৃদ্ধি একেববারে স্বাভাবিক এবং সম্ভবত প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মধ্যের সময় আগে বৃদ্ধি করার ফলেই এটা ঘটেছে। অন্তত এটা বলা যেতে পারে, কোভিড -১৯'এর এমআরএনএ টিকার দুটি ডোজের আগে এবং পরে শুক্রাণুর পরামিতিগুলির কোনও উল্লেখযোগ্য হ্রাস ঘটেনি। এর কারণ, এই টিকাগুলিতে এমআরএনএ (mRNA) থাকে, লাইভ ভাইরাস থাকে না। তাই করোনার টিকা শুক্রাণুর পরিমিতিগুলিকে প্রভাবিত করবে, এমন সম্ভাবনা কম। এমনকী, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্রাজেনেকার তৈরি করোনা টিকা কোভিশিল্ড বা রাশিয়ার গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি স্পুটনিক ভি, অর্থাৎ যেগুলি অ্যাডেনোভাইরাস ভেক্টর টিকার ডোজে যে অ্যাডেনোভাইরাস ব্যবহার করা হয়, সেটিও যাতে প্রতিলিপি তৈরি না করতে পারে এমনভাবে পরিবর্তিত করা হয়। ফলে এতে করে প্রকৃত সংক্রমণ ঘটে না শুধুমাত্র, সার্স-কোভ-২'এর স্পাইক প্রোটিন-এর বাহক হিসাবে কাজ করে।
২০২০-র নভেম্বরেই বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছিলেন, কোভিড-১৯ সংক্রামিত হলে পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। চিন-এর এক গবেষণায়, ৬ জন কোভিড-১৯'এ মৃত পুরুষ রোগীর থেকে নেওয়া নমুনায় উচ্চমাত্রায় কোষ এবং প্রোটিন পাওয়া গিয়েছিল। এটা টেস্টিস এবং এপিডেমিসে প্রদাহ এবং কোষের মৃত্যুর ইঙ্গিতবাহী বলে জানিয়েছিলেন গবেষকরা। আরও এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কোভিড-১৯ থেকে সস্থ হয়ে ওঠা পুরুষদের মধ্যে ৩৯ শতাংশের দেহে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে গিয়েছে। আর ৬১ শতাংশের ক্ষেত্রে তাদের বীর্যতে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা শুক্রাণুর কার্যক্ষমতা হারানোর প্রমাণ।