সংক্ষিপ্ত
গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লু বুশ
খোঁজ পেয়েছিলেন নতুন শত্রুর - প্যান্ডেমিক বা অতিমারি
তারপর সম্ভাব্য অতিমারি ঠেকাতে প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন
বলেছিলেন, মহামারি আসার অপেক্ষা করলে খুব দেরি হয়ে যাবে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছুটিতে যান না। আবার রাহুল গান্ধী প্রত্যেক বছর নিয়ম করে ছুটিতে যান। রাজনৈতিক নেতাদের আদৌ ছুটি কাটানো উচিত কিনা, তাই নিয়ে বিতর্ক আছে, থাকবে। তবে ২০০৫ সালে গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে গিয়েই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লু বুশ, সন্ত্রাসবাদের তীব্র আবহেও খোঁজ পেয়েছিলেন নতুন শত্রুর - প্যান্ডেমিক বা অতিমারি।
টেক্সাসের ক্রফোর্ডে ছুটি কাটাতে গিয়ে তিনি ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু সম্পর্কিত একটি নতুন বইয়ের সন্ধান পেয়েছিলেন, যা তাঁকে বাধ্য করেছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিরে এসে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য অতিমারির প্রস্তুতি নিতে। আর ১৫ বছর আগেই তিনি এক বক্তৃতা দিয়েছিলেন, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউসে ফিরে এসেই বুশ তৎকালীন মার্সিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা ফ্রেঞ্চ টাউনসেন্ড'কে ডেকে জন এম ব্যারির 'দ্য গ্রেট ইনফ্লুয়েঞ্জা' বইটি পড়তে দিয়ে বলেছিলেন, প্রতি ১০০ বছর পর পর একটি করে অতিমারির ঘটনা ঘটে। তাই আমেরিকার এই বিষয়ে একটি জাতীয় কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এরপরই প্রেসিডেন্ট বুশের নেতৃত্বে তৈরি হয়েছিল মহামারী মোকাবিলার এক বিস্তীর্ণ পরিকল্পনা। যার মধ্যে ছিল, দ্রুত নতুন ভ্যাকসিন বিকাশের জন্য তহবিল গঠন, ফেস মাস্কস এবং ভেন্টিলেটরের মতো যন্ত্রের শক্তিশালী মজুত-এর মতো ব্যবস্থা। তাহলে আমেরিকা করোনা প্যান্ডেমিকে এমন নাকানি চোবানি খেল কেন? তৎকালীন আধিকারিকরা বলছেন, সন্ত্রাসবাদ দমন, আফগানিস্তান-ইরাকের যুদ্ধের মতো অন্যান্য সংকট অগ্রাধিকার পাওয়ায়, সেই পরিকল্পনা পিছনে পড়ে গিয়েছিল।
জানা গিয়েছে বুশ প্রথম যখন একটা বিশ্বব্যাপী মহামারির সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন, কেউই বিষয়টিকে আমল দিতে চাননি। কিন্তু, ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসবাদী হামলা, পরে তাদের মনে আপাত অসম্ভব ঘটনাকেও গুরুত্ব দিতে বাধ্য করেছিল। ২০০৫ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ-এ এই বিষয়ে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন বুশ। মহামারিটি কীভাবে আমেরিকাকে আঘাত করতে পারে, কীভাবে তা মোকাবিলার প্রয়োজন - সব দিকই তুলে ধরেছিলেন তিনি। আর দর্শকাসনে ছিলেন ডা. অ্যান্টনি ফাউচি। বর্তমান কোভিড সংকটের সময় আমেরিকার স্বাস্থ্য প্রতিক্রিয়াকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
বুশ বলেছিলেন, মহামারি অনেকটা দাবানলের মতো। যদি তাড়াতাড়ি ধরা যায়, তবে অল্প এলাকার মধ্য়েই তাকে সীমিত রাখা যায়। তিনি আরও বলেন, অন্য়ান্য বিপর্যয়ের প্রতিক্রিয়ার থেকে এই বিপর্যয়ের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হবে। প্রচুর স্বাস্থ্যকর্মী এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামের প্রয়োজন হবে। সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে হাসপাতালের শয্যা, ফেস মাস্ক, পিপিই কিট-এর টান পড়বে। আর বিজ্ঞানীদের রেকর্ড সময়ে ভ্যাকসিন তৈরি করতে হবে।
তবে, তাঁর ওইদিনের বক্তৃতার যে লাইনগুলি এখন সবথেকে প্রাসঙ্গিক মনে করা হচ্ছে, তা হল - 'আমরা যদি মহামারিটির আসার অপেক্ষায় থাকি, তাহলে প্রস্তুতি নিতে দেরি হয়ে যাবে। আর একদিন অজান্তেই অনেক লোকের প্রাণহানি হতে পারে, কারণ আমরা আজ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছি।'