সংক্ষিপ্ত

গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পরেছে করোনাভাইরাস

ডাক্তাররা সকলকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন

কিন্তু, একটি দেশে নিষিদ্ধ মাস্ক পরা

ব্যবহার করা যাবে না করোনাভাইরাস শব্দটিই

 

বাসস্যান্ডে দাঁড়িয়ে হয়তো বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। সহযাত্রীর সঙ্গে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ে কথা বলতে গেলেন। একবার শুধু করোনাভাইরাস কথাটি উচ্চারণ করলেন না করলেন না, আপনাকে এসে গ্রেফতার করবে পুলিশ। একই অবস্থা হবে করোনা-কে ঠেকাতে যদি নাক-মুখ ঠাকা মাস্ক পরেন। কারণ, 'করোনাভাইরাস' শব্দটিকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। আর মাস্ক পরাও চলবে না। এমনই তুঘলকি সিদ্ধান্ত নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ তুর্কমেনিস্তান।

এই দেশটির দক্ষিণ সীমান্তে রয়েছে ইরান। বিশ্বে কোভিড-১৯ সংক্রমণে সবচেয়ে বিধ্বস্ত দেশগুলির অন্যতম। আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭৫৯৩, এবং মৃত ৩০৩৬ জন। এছাড়া প্রতিবেশি দেশ হিসাবে রয়েছে আফগানিস্তান ও উজবেকিস্তান, যে দুই দেশের আক্রান্তের সংখ্যা ২৩৯ এবং ১৯০। অথচ তুর্কমেনিস্তান সরকার-এর দাবি তাদের দেশে একটিও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি।

বুধবার সেই দেশের সরকার ঘোষণা করেছে, করোনাভাইরাস শব্দটির ব্যবহার সেই দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের কোথাও করোনাভাইরাস শব্দটি লেখা যাবে না। হাসপাতাল, স্কুল এবং কর্মক্ষেত্রে এর আগে সতর্কতামূলক যেসব প্রচার চালানো হয়েছে সেই সব জায়গা থেকেই করোনাভাইরাস শব্দটি সরিয়ে দিতে হবে। শুধু তাই নয়, সারা বিশ্বে যখন করোনার সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য মানুষ মুখ নাক ঢাকার মাস্ক কিনছেন, তখন এই দেশের নাগরিকরা সেই মাস্ক-ও ব্যবহার করতে পারবেন না। এইভাবে দেশের ইতিহাস থেকে করোনাভাইরাস-কে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতে হবে।  

বস্তুত, তুর্কমেনিস্তানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম বলে একাধিক সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে এই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে বসে রয়েছেন, গুরবাঙ্গুলি বেরদিমুখমাদভ। যিনি আবার দন্ত বিশেষজ্ঞ এবং র‌্যাপ-সঙ্গীতশিল্পী। কিন্তু, একই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী, ডোনাল্ড ট্রাম্প বা এখনকার অন্যান্য রাষ্ট্রনেতাদের মতো নিজেকে অত্যন্ত শক্তিশালী নেতা হিসাবে প্রমাণ করতে চান তিনি। আর তাই দেশের মানুষের উপর দেদার জুলুম চলে। এবার কারা করোনাভাইরাস নিয়ে আলোচনা করছেন বা মাস্ক পরছেন, তা ধরতে দেশের রাস্তায় রাস্তায় সাদা পোশাকের পুলিশ পাঠাচ্ছেন তিনি।

ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা এই তুঘলকি সিদ্ধান্তের পিছনেও শক্তিশালী হওয়ার ভাবনাই কাজ করছে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে আলোচনা নিষিদ্ধ করার আগে, বেরদিমুখমাদভ আবার ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তাঁর নিজেরই ঔষধি গাছের বিষয়ে লেখা একটি বই অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রতিবেশী সব দেশে যখন এই বিপুল সংখ্যায় করোনা আক্রান্ত ধরা পড়ছেন, তখন তুর্কমেনিস্তানে একজনও আক্রান্ত না হওয়াটা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস শব্দ বা মাস্ক পরা নিষিদ্ধ করা হলেও, সরকারের পক্ষ থেকে একসঙ্গে অনেক লোকের জমায়েত না হতে দেওয়া, রেল স্টেশন ও বাস স্ট্যান্ডে নাগরিকদের থার্মাল স্ক্রিনিং-এর মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এইসব থেকেই মনে করা হচ্ছে, সেই দেশের সরকার তথ্য গোপন ও তথ্য অস্বীকার করছেন। এতে করে তুর্কমেন নাগরিকরাই ঝুঁকির আওতায় আসছেন না, সেই দেশে প্রেসিডজেন্ট বেরদিমুখমাদভ-এর কর্তৃত্ববাদ আরও জোরদার হল বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। এই অবস্থায় সেই তুর্কমেনিস্তানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক মহলের এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। ততদিন তুর্কমেনিস্তান সেই বিরল দেশ, যেখানে করোনাভাইরাস-এর কোন নাম-গন্ধই নেই।