সংক্ষিপ্ত

  • গণহারে টিকাকরনের ভয়
  • গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা
  • কেউ লুকোচ্ছেন আমবাগানে
  • কেউ বা ঝাঁপ দিচ্ছেন পুকুরে

আজব কান্ড! গণহারে টিকাকরনের ভয় থেকে বাঁচতে গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা। কেউ লুকোচ্ছেন আমবাগানে, কেউ বা ঝাঁপ দিচ্ছেন পুকুরে। যে যেখানে পারছেন নিরাপদ স্থানে গিয়ে লুকোচ্ছে। কারণ একটাই, গ্রাম জুড়ে খবর চাউর হয়েছে পঞ্চায়েতের তরফ থেকে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা এসে  গ্রামের মানুষজনদের নাকি করোনা পরীক্ষা করবেন, তারপর তাদের টিকাকরণ করবেন। 

এই টিকাকরণের ভয় থেকে বাঁচতে মুর্শিদাবাদের সুন্দলপুর সহ একাধিক গ্রামের যুবক থেকে বৃদ্ধ, গৃহবধূ সকলেই পালাচ্ছেন। কেউ পালাচ্ছেন পাশের গ্রামে আত্মীয়র বাড়িতে, কেউ লুকিয়ে পড়ছেন আমবাগান থেকে শুরু করে ঝোপ জঙ্গলের মধ্যে। এমনকি অনেকে টিকাকরনের নাম শুনলেই তার হাত থেকে বাঁচতে পুকুরে স্নান করতেও নেমে পড়ছেন। আজব এই কান্ডে  রীতিমতো শোরগোল পড়েছে এলাকায়। স্বাভাবিকভাবেই এলাকার মানুষজনের এহেন বিচিত্র আচরণে হতবাক স্থানীয় পঞ্চায়েত দপ্তরের স্থানীয় কর্তারা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য দপ্তরে কর্মী এমনকি প্রশাসনের আধিকারিকেরাও।

অথচ গণহারে টিকাকরণের প্রকল্প পঞ্চায়েতের বা স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে নেওয়াই হয়নি বলে জানা গিয়েছে। শুধুমাত্র গুজবের কারণের হুলুস্থুলু পড়েছে গোটা এলাকা জুড়ে। করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণের মধ্যেও গ্রামের দিকে কিছু জায়গায় এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে চরম অচেতনতা রয়েছে এখনো। এদিকে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই মরসুমে জ্বর সর্দি কাশি উপসর্গও দেখা দিচ্ছে অনেকের। কিন্তু  বহু ক্ষেত্রেই আক্রান্ত গ্রামের মানুষজন করোনা পরীক্ষার ভয়ে সরকারি হাসপাতালমুখো হচ্ছেন না। 

এর সঙ্গে  মফস্‌সলের অনেক এলাকায় বিধিনিষেধ মানা নিয়ে মানুষের আপত্তির কথাও প্রশাসনের কানে এসেছে। এই সব এলাকার মানুষদের সচেতন করতে উদ্যোগী হয় স্থানীয় পঞ্চায়েত। সেই মতো এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য, আশা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। ঐ স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে একটি বিশেষ দল সচেতনতা প্রচারের লক্ষ্য নিয়েছে সুন্দলপুর গ্রামে। অথচ আতঙ্কের জেরে কোন ভাবে চাউর হয়ে যায়, স্বাস্থ্যকর্মীরা পুলিশ নিয়ে করোনার টিকা দেওয়ার আয়োজন করেছে গণহারে। তাতেই এই আজব হইচই পড়েছে গ্রামে। 

টিকা নেওয়ার ভয়ে বাড়িতে তালা দিয়ে গ্রামের সমস্ত বাসিন্দা পালাতে শুরু করে। যদিও পঞ্চায়েত প্রধান-সহ স্বাস্থ্য কর্মীরা তাঁদের অনেককেই বুঝিয়ে  গ্রামে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাা চালাচ্ছেন। তবে সেই কাজ করতে তাঁদের ঘাম ছুটছে বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি ঐ সব এলাকাতে আরো বেশি করে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কী ভাবে করোনা ছড়ায়, এই সংক্রমণ আটকাতে কী করণীয়, বিধিনিষেধ মেনে চলা, মাস্ক-স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহার— এই সব নিয়ে তাঁদের বোঝানোর জন্য একটি শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে। টিকাকরণ কতটা জরুরি, তা-ও গ্রামে গিয়ে বোঝাচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। 

গ্রামের এক বাসিন্দা তরিকুল শেখ বলেন,"আসলে আমরা শুনেছি সকলকে ধরে নিয়ে গণহারে টিকাকরন করা হবে সেই ভয়েই গ্রাম ছেড়ে পাশের গ্রামে যাওয়া থেকে শুরু করে, আমবাগান ঝোপ-জঙ্গলে লুকানো, এমনকি বাইরে থেকে কোন গাড়ি গ্রামে ঢুকলে অনেকে পুকুরের জলে নেমে পড়েছেন"। 

এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আজিজুল লস্কর বলেন," কেউ হয়তো বিনা কারণে এই গণহারে টিকার গুজব রটিয়ে দিয়েছে। তারপরেই এই ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মানুষকে বোঝানো হচ্ছে।