সংক্ষিপ্ত

সবার আগে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করে নিউজিল্যান্ড বুঝিয়ে দিয়েছে কতটা সংগঠিত তাদের ১৫ সদস্যের স্কোয়াড। অভিজ্ঞতায় ভরপুর এই কিউই দলের অবশ্য প্রধান দুর্বলতা ব্যাটিং বিভাগে রস টেলর ও কেইন উইলিয়ামসনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা। সেই সঙ্গে মাঝের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ল্যাথাম ছাড়া বাকিরা স্পিনের বিরুদ্ধে একেবারেই স্বচ্ছন্দ নন।

 

৩০ এপ্রিল বিশ্বকাপের দল ঘোষণার শেষ তারিখ। কিন্তু তার একমাস আগেই দল ঘোষণা করে দিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। বাকি সবকটি দল যখন শেষ মুহূর্তেও দল বাছাই নিয়ে দোনোমোনো করছিল তখন সাত তাড়াতাড়ি তাদের এই দল ঘোষণাই বুঝিয়ে দিয়েছে কতটা সংগঠিত তাদের এইবারের বিশ্বকাপের ১৫ সদস্যের স্কোয়াড।

নিঃন্দেহে এইবারের বিশ্বকাপের অন্যতম অভিজ্ঞ দল কিউইদের। এইবার নিয়ে চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলছেন রস টেলর। তৃতীয় বিশ্বকাপ হতে চলেছে অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন, মার্টিন গাপ্টিল, টিম সাউদির জন্য। আর ট্রেন্ট বোল্ড ও উইকেরক্ষক টম ল্যাথাম ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের দলেও ছিলেন।

কিউইদের বাকি দলে খুব একটা চমক না থাকলেও টম ল্যাথামের ব্য়াক আপ তথা দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে একটিও একদিনের ম্যাচ না খেলা টম ব্লান্ডেলের নির্বাচন বিস্মিত করেছিল। বিশেষ। করে টিম সেইফার্ট ভারতের বিপক্ষে হেশ ভালো ব্যাট করেছিলেন। পরে জানা গিয়েছে তাঁর একটি চোট থাকায় ঝুঁকি নিতে চায়নি কিউই ক্রিকেট বোর্ড।

ব্রেন্ডন ম্যাকালামের অবসরের পর ইনিংসের গোড়াপত্তনের জন্য অভিজ্ঞ মার্টিন গাপ্টিলের সঙ্গে বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান হিসেবে কলিন মুনরোকে খেলিয়ে দেখেছিল ব্ল্যাকক্যাপসরা। কিন্তু, ধারাবাহিকতার অভাবে প্রথম দল থেকে ছিটকে গিয়েছেন মুনরো। তাঁর জায়গায় শ্রীলঙ্কা সিরিজে প্রথম শতরান-সহ ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে নিজের জায়গা পাকা করেছেন হেলরি নিকোলস। মুনরোও দলের সঙ্গে থাকছেন, তবে ব্যাক-আপ ওপেনার হিসেবে।

মিডল অর্ডারে কিউইদের প্রধান ভরসা অভিজ্ঞ রস টেলর ও অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন। গত ৪-৫ বছরে নিজের খেলাকে অন্য মাত্রায় তুলে নিয়ে গিয়েছেন টেলর। গত ৫ বছরে একদিনের ক্রিকেটে তাঁর রানের গড় ৬৩.৪৭। আর কেইন উইলিয়ামসনকে তুলনা করা হয় বিরাট কোহলির সঙ্গে। ল্যাথাম, নিশাম, গ্র্যান্ডহোম - বাকি ব্য়াটিং লাইনআপ কিন্তু চাপের মুখে খুব একটা ভরসার নয়।

জেমস নিশাম অবশ্য ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একদিনেসিরিজে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। স্পিন জুটি হিসেবে রিস্ট স্পিনার ইশ সোধির সঙ্গে আছেন হাঁটুর অপারেশনের পর দলে ফেরা মিচেল স্যান্টনার।

জোরে বোলিং বিভাগের নেতৃত্বে রয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট। নিজের দিনে কী করতে পারেন, তা ভারতের বিপক্ষে একদিনের সিরিজে সম্প্রতি আরও একবার দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে দলে আছেন লকি ফার্গুসন, ম্য়াট হেনরি ও টিম সাউদি। দীর্ঘদিন নিজের পুরনো ফর্মে নেই সাউদি। তাই প্রথম একাদশে সম্ভবত জায়গা মিলবে না তাঁর। তবে তাঁর অভিজ্ঞতাকে অবশ্যই কাজে লাগাতে চাইবে দল। তবে এক্স ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন লকি ফার্গুসন। গতির সঙ্গে তাঁর নিয়ন্ত্রণও খুব ভালো।

এই কিউই দলের মধ্যে কাপ জেতার সম্ভাবনা থাকলেও ব্য়াটিং-এ অতিরিক্ত টেলর-উইলিয়ামসন নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে হবে। গাপ্টিল ও নিকোলস এই ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারেন। ইংল্যান্ডে সাধারণত বল নড়া-চড়া করলেও বিশ্বকাপে উইকেট পাটা হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে বোল্ট অনেকটাই ভোঁতা হয়ে যেতে পারেন। ফার্গুসন ও হেনরি কিন্তু গতির হেরফেরেও উইকেট তোলার ক্ষমতা রাখেন।

গতবারের ফাইনালিস্টদের মাঝের ব্যাটসম্যানদের স্পিনারদের বিরুদ্ধে দুর্বলতা বড় মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। ল্যাথাম ছাড়া ভালো মানের স্পিন বোলিং খেলার মতো লোকের অভাব রয়েছে। তা সত্ত্বেও অন্তত শেষ চারটি দলের মধ্যে জায়গা করে নেওয়া উচিত কেইন উইলিয়ামসনদের। তবে বিশ্বকাপের ভাগ্যও বরাবর ব্ল্যাকক্যাপসদের বিরুদ্ধে থেকেছে।

নিউজিল্যান্ডের ১৫ সদস্যের বিশ্বকাপের দল:

কেইন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), মার্টিন গাপ্টিল, হেনরি নিকোলস, রস টেলর, টম ল্যাথাম (উইকেটরক্ষক), কলিন মুনরো, টম ব্লান্ডেল (উইকেটরক্ষক), জেমস নিশাম, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি, টিম সাউদি, ম্যাট হেনরি, লকি ফার্গুসন, এবং ট্রেন্ট বোল্ট।