সংক্ষিপ্ত

  • একটি আদর্শ একদিনের ক্রিকেট ম্যাচ দেখা গেল
  • একেবারে শেষ পর্যন্ত লড়াই করল দুই দল
  • কিন্তু ডেথ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করলেন মিচেল স্টার্ক
  • ১৫ রানে পরাজিত হল ওয়েস্টইন্ডিজ

 

ইদানিং টি২০ ক্রিকেট আসায় একদিনের ক্রিকেট তার আকর্ষণ হারিয়েছে, সাধারণভাবে এমনটাই শোনা যায়। কিন্তু একদিনের ক্রিকেটের আকর্ষণ কতদূর হতে পারে তার একটি আদর্শ বিজ্ঞাপন হয়ে থাকল ২০১৯ বিশ্বকাপের দশম ম্য়াচটি। দুর্দান্ত শুরু করে একেবারে শেষ পর্যন্ত ম্য়াচটি জেতার মতো অবস্থায় ছিল। কিন্তু ফিনিশিং লাইনটা টপকাতে পারল না। অস্ট্রেলিয়ার ২৮৮ রানের জবাবে, ৯ উইকেট হারিয়ে ২৭৩ রানেই শেষ হল তাদের ইনিংস। ফলে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্য়াচে ১৫ রানে হবারতে হল জেসন হোল্ডারের দলকে। ম্যাচের সেরা হলেন আট নম্বরে নেমে ৯২ রান করা নাথান কুল্টার নাইল।


যেভাবে বারবার গতি পরিবর্তিত হল ম্যাচের তাতেই স্পষ্ট কতটা রোমাঞ্চকর হল এই ম্যাচ।

ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের দিন যেরকম মেঘলা আবহাওয়া ছিল, এদিন কিন্তু সেইরকমটা দেখা যায়নি। একেবারে রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশে খেলা হল। তা সত্ত্বেও ব্য়াটসম্যানরা নয়, এই ম্যাচ শাসন করলেন বোলাররাই। পিচে হাল্কা বাউন্স ছিল। আর খেলার শুরুতে তাকেই দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন ক্যারিবিয়ান জোরে বোলাররা। ৮ ওভারে মাত্র ৩৮ রানের মধ্যেই    প্যাভিলিয়নের রাস্তা ধরেন ওয়ার্নার (৩), ফিঞ্চ (৬), খোয়াজা (১৩) এবং ম্য়াক্সওয়েল। দুর্দান্ত জায়গায় বল রাখছিলেন ওশেন থমাস, শেলডন কটরেল, আন্দ্রে রাসেল, জেসন হোল্ডাররা।

এখান থেকে অস্ট্রেলিয়া যে ২৮৮ রানে পৌঁছায়, তার কৃতিত্ব দিতে হবে স্টিভেন স্মিথ (৭৩)-কে। তিনিই ধৈর্য ধরে উইকেটে পড়ে থেকে অস্ট্রেলিয়া ইনিংসকে আকার দেন। প্রথমে তাঁর সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ৬৬ রানের জুট গড়ে অস্ট্রেলি.য়া ইনিংসকে থিতু করেছিলেন অ্যালেক্স কেরি।

কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার আসল খেলা শুরু হয় এরপরই। অষ্টম উইকেটে ব্যাট করতে আসেন নাথান কুল্টার নাইল। শুরুতে স্মিথকেই বেশি খেলতে দিয়ে তিনি বেশ মন্থর গতিতেই ব্যাট করে ক্রিজে সেট হয়ে যান। আর একবার বলটা ভাল করে দেখতে পেতেই গিয়ার বদলান। মোট ৮টি চার ও ৪টি ছয়ের সাহায্যে তিনি ৬০ বলে ৯২ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন। অপর প্রান্ত থেকে স্মিথ তাঁকে রীতিমতো গাইড করে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বাউন্ডারি লাইনে কটরেলের এক অবিশ্বাস্য ক্যাচে ফিরতে হয় তাঁকে। কুল্টার নাইল-ও মাত্র ৮ রানের জন্য শতরান হারান। কিন্তু দলকে একটা লড়াকু জায়গায় নিয়ে যান।

লক্ষ্যটা খুব বেশি ছিল না। আর শুরুতে এভিন লুইস (১)-এর উইকেট পড়ে গেলেও গেইল ঝড় ওঠার ইঙ্গিত মিলছিল। কিন্তু পঞ্চম ওভারে স্টার্কের বলে এলবিডব্লু হল ক্রিস গেইল (২১)। তাঁর আউট নিয়ে অবশ্য বিতর্ক রয়েছে। আগের বলটিই স্টার্ক নো বল করেছিলেন। বল করার সময় তাঁর পা ক্রিজের বাইরে চলে যায়। নিয়ম মতো পরের বলটি ফ্রিহিট পাওযার কথা ছিল। আম্পায়ারের নজর এড়িয়ে যাওয়ায় তা পায়নি ওয়েস্টইন্ডিজ।

৩১ রানে প্রথম দুই উইকেট পড়ে যাওয়ার পর বড় আশা দেখিয়েছিল নিকোলাস পুরান ও শাই হোপের জুটি। দলের রান যখন ৯৯, তখন আউট হয়ে যান পুরান (৪০), হেটমায়ার বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। কিন্তু এরপর দারুণ দায়িত্বশীল ব্যাটিং-এর নিদর্শন রাখেন হোপ (৬৮) ও অধিনায়ক হোল্ডার (৫১)। ধীর সুস্থে খেলে তাঁরা খেলাটাকে ছোট করে আনছিলেন। পরের দুই ব্যাটসম্য়ানের নাম আন্দ্রে রাসেল ও ক্রোলাস ব্রেথওয়েট হওয়ায়, তখন পর্যন্ত দারুণভাবে জেতার জায়গায় ছিল ওয়েস্টইন্ডিজ।  

কিন্তু এরপরই অস্ট্রেলিয়া বুঝিয়ে দেয়, কেন তারা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। বিশেষ করে বলতে হবে জোরে বোলার মিচেল স্টার্কের কথা। ডেথ ওভারে একেবারে নিখুঁত জায়গায় বল রাখলেন তিনি। শেষ দুই ওভাহরে দিলেন মাত্র ১ রান। আর তুলে নিলেন হোল্ডার, ব্রেথওয়েট ও কটরেলের উইকেট।

তবে একই সঙ্গে বলতে হবে আন্দ্রে রাসেলের দায়িত্বজ্ঞানহীন খেলার কথাও। স্টার্কের যে ওভারে তিনি আউট হলেন, সেই ওভারে আগেই একটি বাউন্ডারি মেরেছিলেন। অপরপ্রান্তে থাকা অদিনায়ক হোল্ডার এগিয়ে এসে তাঁকে খুব বেশি ঝুঁকি নিতে নিষেধও করেন। কিন্তু তারপরেও এলোমেলো মারতে গিয়ে তিনি উইকেট খুইয়ে বসেন। ওই সময় আরও কয়েক ওভার যদি তিনি থাকতে পারতেন, তাহলে ওয়েস্ডট ইন্ডিজ সহজেই এই ম্যাচ জিততে পারত।