সংক্ষিপ্ত
- প্রথম তিন দিনে উত্তেজক ম্যাচ দেখতে পেলেন না দর্শকরা
- এশীয় দলগুলির হতাশাজনক পারফরম্যান্স
- ভারত, বাংলাদেশের মাঠে নামার অপেক্ষা
দশ দলের বিশ্বকাপ। প্রথম তিন দিনে মাঠে নেমে পড়েছে আটটি দল। কিন্তু প্রত্যাশা থাকলেও প্রথম তিন দিনে বিশ্বকাপে একটিও জমজমাট ম্যাচ দেখতে পেলেন না ক্রিকেটপ্রেমীরা। এবারের বিশ্বকাপের ফরম্যাট অনুযায়ী সব দলই সবার সঙ্গে খেলবে। তাই পরিবেশ, পরিস্থিতির সঙ্গে দলগুলি একটু মানিয়ে নিলে ছবিটা বদলাবে বলেই আশাবাদী ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। অনেকেরই আশা, বিরাট কোহলিরা মাঠে নামলেই আকর্ষণ আরও বাড়বে বিশ্বকাপের।
তবে ক্রিকেটপ্রেমীদের বড় হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এশীয় দলগুলির ব্যর্থতা। অন্তত প্রথম তিন দিনে এশিয়ার তিন দল মাঠে নামলেও জয় দূরে থাক, সামান্য লড়াই দিতেও ব্যর্থ। ক্রিকেটপ্রেমীদের সম্ভবত সবথেকে হতাশ করেছে পাকিস্তান। এবারের শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা না থাকলেও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের অসহায় আত্মসমর্পণ বিশ্বকাপের পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপন নয়। তুলনামূলকভাবে এশিয়ার সবথেকে দুর্বল টিম আফগানিস্তানই বরং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নেমে এশিয়ার তিন দলের বিরুদ্ধে সবথেকে ভাল পারফরম্যান্স দিয়েছে। কিন্তু প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের চাপে ফেলতে সেই লড়াইও যথেষ্ট ছিল না।
এ বারের বিশ্বকাপ শুরুই হয়েছিল আয়োজক ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে ম্যাচ দিয়ে। প্রথম ম্যাচেই শক্তিশালী দুই দলের জমজমাট লড়াই আশা করেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। বাস্তবে অবশ্য প্রথম দিনেই একপেশে জয় পায় ইংল্যান্ড। ঘরের মাঠে তা ইংরেজ দর্শকদের খুশি করলেও ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। ইংল্যান্ডের তোলা ৩১১ রানের জবাবে ৪০ ওভারও টিকতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। মাত্র ২০৭ রানেই অল আউট হয়ে যায় তারা।
পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে অনেককেই চমকে দেবে বলে দাবি করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। দু' দলের ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লডাইয়ের আশাও তাই ছিল। কিন্তু মাঠে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিংয়ের সামনে কার্যত উড়ে যায় পাক ব্যাটিং। পাকিস্তানের তোলা ১০৫ রান হাসতে হাসতে টপকে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। খারাপ সময় কাটিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দাপট অবশ্যই ক্রিকেটের পক্ষে ইতিবাচক দিক। আবার পাকিস্তানের এই অসহায় আত্মসমর্পণ দেখে উদ্বিগ্ন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা।
একই কথা বলা যায় শ্রীলঙ্কা সম্পর্কেও। গত কয়েক বছর ধরেই বেশ খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দ্বীপরাষ্ট্রের ক্রিকেট। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁরা যেভাবে আত্মসমর্পণ করেছে, এতটা খারাপ পারফরম্যান্সও আশা করেননি কেউই। পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে দু' ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ৪৫ ওভারেই খেলা শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলে চড়া দামে টিকিট কেটে খেলা দেখতে এসে হতাশ হয়েছেন অনেকেই। এতটা একপেশে ম্যাচ সম্ভবত কিউই সমর্থকরাও দেখতে চাননি।
এশিয়ার দুই টিম যখন প্রথম ম্যাচে দেড়শো রান তুলতেও ব্যর্থ, তখন কিছুটা হলেও নিজেদের লড়াকু মানসিকতার প্রতি সুবিচার করেছে আন্ডারডগ আফগানিস্তান। অস্ট্রেলিয়াকে তাঁরা ধরাশায়ী করে দেবে, এমন আশা ছিল না। দেখার ছিল পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার বিশ্রী পারফরম্যান্সের পরে গতবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে কতটা লড়াই দিতে পারে আফগানরা। রশিদ খানরা যে খুব হতাশ করেছেন, বলা যাবে না। প্রথমে ব্যাট করে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ২০৮ রান তোলে আফগানিস্তান। একসময়ে অবশ্য ৭৭ রানে পাঁচ উইকেট পড়ে গিয়েছিল আফগানদের। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তবু দুশোর গণ্ডি পার করে তারা। অস্ট্রেলিয়া অবশ্য মাত্র ৩৪.৫ ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। তবু এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তান যে লড়াকু ক্রিকেটই উপহার দেবে, সেই ভরসা অন্তত পাওয়া গিয়েছে শনিবারের ম্যাচে।
এশিয়ার বাকি দুই দল ভারত এবং বাংলাদেশের এখনও মাঠে নামা বাকি। রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করছেন মাশরাফি মোর্তাজারা। আর আগামী বুধবার এই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেই প্রথম ম্যাচ কোহলিদের।
চার বছর বাদে খেলা হয় বিশ্বকাপ। ক্রিকেট প্রেমীদের প্রত্যাশাও থাকে অনেক। টি টোয়েন্টির দাপটে একদিনের ম্যাচের জৌলুস ধরে রাখতে তাই দলগুলোর থেকে ভাল পারফরম্যান্স দেখার প্রত্যাশা থাকেই। একদিনের ক্রিকেট মানেই এখন বড় রানের খেলা, টান টান উত্তেজনা। সেখানে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম চার ম্যাচে একবারই তিনশো তুলেছে ইংল্যান্ড। এর একটা কারণ হতে পারে ইংল্যান্ডের উইকেট। বিশ্বকাপের মধ্যেও যখন, তখন বৃষ্টি নামছে। ইংল্যান্ডের পরিবেশে এমনিতেই ব্যাটিং সবসময় কঠিন। সেখানে উইকেটে সামান্য ভিজে ভাব থাকলে আরও সুবিধে পাচ্ছেন ফাস্ট বোলাররা। এই প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠে ব্যাটসম্যানরা কবে থেকে বিশ্বকাপে বোলারদের শাসন শরু করেন, সেই অপেক্ষাতেই ক্রিকেটপ্রেমীরা। বড় রানের ম্যাচ না হোক, ব্যাটে-বলে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাই দেখতে চান সবাই। রবিবার থেকে বিশ্বকাপ প্রত্যাশিত ছন্দে পায় কি না, সেটাই এখন দেখার।