সংক্ষিপ্ত

শুক্রবার সকালেই রডনি মার্শের প্রয়াণের খবরে হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বের (Cricket World)। সেই শোকের রেশ মেলাতে না মেলাতেই আরও এক হৃদয় বিদারক খবর। প্রয়াত লেগ স্পিনের জাদুকর শেন ওয়ার্ন (Shane Warne)।
 

ক্রিকেট ইতিহাসের (Cricket History) বর্ণময় চরিত্রগুলি নিয়ে আলোচনা করতে হলে যাদের নাম একেবারের উপরের সারিতে আসবে তাদের মধ্যে অন্যতম সেরা শেন ওয়ার্ন (Shane Warne)। ২২ গজে বল হাতে যেমন জাদু দেখাতে সিদ্ধ হস্তক তিনি। মাঠের বাইরের রঙিন জীবনেও সবসময় সংবাদ শিরোনামে রেখেছে তাঁকে। যৌন কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানো, চারিদিকে নিন্দা, পুলিসে হেনস্থা সবকিছুর পরও মাঠে পিরে বিষাক্ত লেগ স্পিনের ছোঁবলে বিপক্ষকে কুপকাত করতে পারে সেই ক্রিকেটারের নাম শেন ওয়ার্ন। ব্যক্তিগত জীবনের রঙিন দিককে কখনও আড়াল না করে সকলের সামনে বুক চিতিয়ে হাসি মুকে স্বীকার করে মাঠে  লেগ স্পিন-গুগলি-রং ওয়ান-ফ্লিপারেরর মায়াজাল তৈরি করতে পারে সেই ক্রিকেটারের নাম শেন ওয়ার্ন। ব্য়াক্তিগ ত জীবনের বিতর্কিত দিক কখনও তাঁর মাঠের ভিতরের গৌরবকে ম্লান করতে পারেনি। 

১৩ সেপ্টেম্বপ ১৯৬৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন শেন ওয়ার্ন। ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাটা ছিল অটুট। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ স্তরে পারফর্ম করার স্বপ্নটা দেখতেন বরবার। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করার পর ১৯৯২ সালের ২ জানুয়ারি  ভারতের বিরুদ্ধেই টেস্টে অভিষেক হয়েছিল শেন ওয়ার্নের। ১৯৯৩ সালের ২৪ মার্চ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে একদিনের ক্রিকেটে প্রথম মাঠে নামেন শেন ওয়ার্ন।  ২০০৭ সালের ২ জানুয়ারি শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ছিল সেই টেস্ট ম্যাচ। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে তাঁর কব্জির মোচর ত্রাস হয়ে উঠেছিল বিশ্ব জুড়ে ব্য়াটসম্য়ানদের কাছে।  ১৯৯৩ সালের অ্যাশেজ সফরে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান মাইক গ্যাটিংকে যে বলে বোল্ড করেছিলেন তা শতবর্ষের সেরা ডেলিভারি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। সেই বল এখনও সকলের স্মৃতির মণিকোঠায় অমলিন। 

ক্রিকেট ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়া যে গৌরব অধ্যায় রচনা করেছে  তাতে শেন ওয়ার্নের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তার লেগ স্পিন অস্ট্রেলিয়ার বহু যুদ্ধ জয়ের সেরা অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। দেশের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য নজির। সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে শেন ওয়ার্নের ব্য়াট-বলে লড়াই ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা দ্বৈরথগুলির মধ্যে অন্যতম। কেরিয়ারে ১৪৫ টেস্ট খেলে মোট ৭০৮ উইকেট নিয়েছেন ওয়ার্ন। সেরা ৭১ রান দিয়ে ৮ উইকেট। এক ইনিংসে ৩৭ বার ৫ উইকেট। এক দিনের ক্রিকেটে ১৯৪ ম্যাচ খেলে ২৯৩ উইকেট গিয়েছে ওয়ার্নের ঝুলিতে। শুধু বল নয়, ব্যাট হাতেও কার্যকর ছিলেন তিনি। টেস্টে ৩১৫৪ ও এক দিনের ম্যাচে ১০১৮ রান তারই সাক্ষী। ২০০৮ সালে প্রথম আইপিএল জয়ী অধিনায়কের নামও শেন ওয়ার্ন।

আরও পড়ুনঃপ্রয়াত লেগ স্পিনের জাদুকর শেন ওয়ার্ন, হৃদরোগে আক্রান্ত ৫২ বছর বয়সে চিরঘুমে

এমনই এক কিংবদন্তী বর্ণময় চরিত্র শুক্রবার সন্ধ্যায় হঠাৎই চলে গেলেন চির নিদ্রায়। খবরটা কানে আসতে বিশ্বাস করেননি অনেকেই। স্তম্ভিত হয়ে যায় গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। হৃদরোগে আক্রান্ত (heart attack)হয়ে প্রয়াত হন টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীয মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। তাইল্যান্ডে নিজের ভিলায় মৃত্যু হয় কিংবদন্তী লেগ স্পিনারের।  শেন ওয়ার্নের সংস্থার তরফে মৃত্যুর খবর নিশ্চিৎ করা হয়। ওয়ার্নের এজেন্সির তরফে এই বিষয়ে বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘শেন ওয়ার্নকে উনার বাংলোয় নিষ্প্রাণ অবস্থায় পাওয়া যায়। মেডিকেল দল নিজেদের পুরো চেষ্টা করেও তাঁকে আর ফেরাতে পারেনি। উনার পরিবার এই সময় একা থাকতে চায় এবং সময়মতো এই বিষয়ে বাকি তথ্য দেওয়া হবে।’শেন ওয়ার্নারে মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ ক্রিকেট বিশ্ব। শোক বার্তা বিশ্ব জুড়ে। ওয়ার্ন না থাকলেও তাঁর ম্যাজিকাল ডেলিভারিগুলি চিরকাল অমর থেকে যাবে ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায়।