সংক্ষিপ্ত
উত্তর কলকাতার বাগবাজার সার্বজনীন দুর্গাপুজো। কলকাতার প্রাচীনতম পুজোগুলির মধ্যে একটি। বিতর্ক রয়েছে, তবুও অনেকেই দাবি করেন এটি প্রথম সার্বজনীন পুজো। অনেকে আবার তা মানতে নারাজ। ২৪ ফুট উচ্চতার এই দুর্গা প্রতিমায় সাবেকিয়ানা রয়েছে পুজো মণ্ডপের পরতে পরতে।
উত্তর কলকাতার বাগবাজার সার্বজনীন দুর্গাপুজো। কলকাতার প্রাচীনতম পুজোগুলির মধ্যে একটি। বিতর্ক রয়েছে, তবুও অনেকেই দাবি করেন এটি প্রথম সার্বজনীন পুজো। অনেকে আবার তা মানতে নারাজ। ২৪ ফুট উচ্চতার এই দুর্গা প্রতিমায় সাবেকিয়ানা রয়েছে পুজো মণ্ডপের পরতে পরতে। বাগবাজার সার্বজনীন, মেগাপলিসের প্রাচীনতম দুর্গাপূজা। ডাকেসাজের একচালা দুর্গা প্রতিমা আর সাধারণ মণ্ডপ দেখতে দুর্গাপুজোর পাঁচ দিন এই মণ্ডপ ঘিরে থাকে প্রচুর মানুষের উত্তেজনা।
১৯১৯ সালের অক্টোবর মাসে এখানে প্রথম পুজো হয়েছিল। এক দশকের মধ্যে মিউনিসিপ্যাল পার্কে দুর্গা পুজো 'মেড ইন ইন্ডিয়া' পণ্য বিক্রি করে স্বদেশা বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার একটি মঞ্চে পরিণত হয়। এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নেজাতু সুবাষ চন্দ্র বসুর মত অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীরা।
পুজো কমিটির সভাপতি ৭৭ বছর বয়সী অভয় ভট্টাচার্য বলেছেন, 'আগে বড় বড় জমিদার এবং বণিক রাজকুমাররা তাদের বাড়িতে দুর্গা পূজার আয়োজন করতেন কিন্তু সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ ছিল। অনেক সময় দর্শন করতে দেওয়া হত না। তবে সেই পুজোগুলিতে ইংরেজদের আমন্ত্রণ জানান হত। তাই এই এলাকার মানুষ ১০৪ বছর আগে একত্রিত হয়ে এই পুজো শুরু করেছিল। এটাই কলকাতার প্রথম সার্বজনীন পুজো। ' প্রথমে ছোট করে শুরু হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীকালে প্রচুর মানুষ আসতে শুরু করেন। তাই খোলা জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়।
১৯২০ , এই সময় সমাজ সংস্কারক নগেন্দ্র নাথ ঘোষাল এবং 'স্বদেশী' কর্মী যেমন হেম মুখার্জি, দুর্গাচরণ ব্যানার্জী এবং চুনি লাল চ্যাটার্জি পূজা কমিটিতে যোগ দেন। তাঁরাই সুভাষ চন্দ্র বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন সুভাষ বসু কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও কলকাতা মিউনিসির্যাল কর্পোরেশনের প্রধান ছিলেন। তাঁর উদ্যোগেই বর্তমান এই পুজোর স্থান ১৯২৮ সালে বরাদ্দ হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন পুজোর উদ্যোক্তারা। ১৯২৯ সাল থেকেই বাগবাজার সার্বজনীন শুরু হয়। সেই সময়ই থেকে সুভাষচন্দ্র বসুর পরামর্শে স্বদেশী মেলা শুরু হয়। সেখানে বিক্রি হত ল্যাঙ্কাস্টার বা ম্যানচেস্টার-এর পাল্টা হিসেবে স্থানীয়ভাবে তৈরি ম্যাচ, টেক্সটাইল, কালি, কাগজ, যন্ত্রপাতি, ওষুধ ইত্যাদির মতো 'স্বদেশী' পণ্যকে জনপ্রিয় করার একটি উপায়- এমন পণ্য তৈরি করেছে যা ভারতীয় বাজারে রাজত্ব করছিল। মাতৃভূমির কল্পনা ও দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবোধ বাড়াতে দারুনভাবে সাহায্য করেছিল।
এই পুজোর সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন,জেলে এলাকা, বস্তি, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ এই পুজোর সঙ্গে এখনও যুক্ত। স্বদেশীর ওপর জোর দেওয়াই এই পুজোর একটা সময় মূল লক্ষ্য ছিল। প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে বাগবাজারের দুর্গাপুজো এখনও ঐতিহ্যবাহী ও এক চালার হয়। ডাকের সাজের মূর্তি এখানে পুজিত হয়। জা কমিটির আজীবন সদস্য সৌমেন্দ্র লাল (রাজা) কর বলেন, "মাটির ভাস্করদের একই পাল পরিবার গত ৭০ বছর ধরে আমাদের দুর্গা তৈরি করে আসছে।"