সংক্ষিপ্ত

  • দীর্ঘ ছ' বছর পরে কুণাল- মমতা সাক্ষাৎ
  • তৃণমূলেই আছি, মমতাকে বললেন কুণাল
  • অভিষেকের সঙ্গেও দীর্ঘ বৈঠক বহিষ্কৃত নেতার
     


কয়েকদিন আগেই কোণঠাসা পরিবর্তনপন্থীদের একত্রিত করতে নবজাগরণ মঞ্চ তৈরি করেছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। তার পরে তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্ত যখন দলবিরোধী কথা বলছেন, তখনও তাঁর পাশে দেখা গিয়েছে কুণালকে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক মহল যখন কুণালের পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনায় ব্যস্ত, তখনই সবাইকে চমকে দিয়ে ফের কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করলেন কুণাল। দীর্ঘ ছ' বছর পরে মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ হল তাঁর। একা মুখ্যমন্ত্রী নয়, দু' দফায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দীর্ঘ বৈঠক করেন দল থেকে বহিষ্কৃত এই তৃণমূল নেতা। 

শনিবার বিকেলে প্রথমে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যান কুণাল। সেখানে অভিষেকের সঙ্গে প্রথম দফায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক হয় তাঁর। এর পরে সেখান থেকে বেরিয়ে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন কুণাল। প্রায় এক ঘণ্টা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে সেখান থেকে বেরিয়ে ফের অভিষেকের বাড়িতে যান কুণাল। 

সূত্রের খবর, বৈঠকের মাঝেই মমতা কুণালকে জিজ্ঞেস করেন, "তুমি কি তৃণমূলে ফিরছ?" জবাবে কুণাল বলেন, "আমি তো তৃণমূলেই ছিলাম, তৃণমূলেই আছি।" পরে এ দিনের বৈঠক নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কুণাল জানান, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার বহু বছরের সম্পর্ক। আমি তৃণমূলের পুরনো সৈনিক। দলের খারাপ সময়ে পাশে ছিলাম, এখনও আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। পুরনো কর্মী হিসেবেই তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।"

কুণালের আরও দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, খুব ভাল বৈঠক হয়েছে। তবে এখনই তিনি সক্রিয়ভাবে দলের কাজে ফিরবেন কি না, তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি কুণাল। তাঁর কথায়, দলের সঙ্গে তাঁর কয়েকটি বিষয়ে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছিল। তবে নিজের রাজনৈতিক নীতি, আদর্শ থেকে তিনি সরে আসছেন না। 

কয়েকদিন আগেই অবশ্য রাজ্য পুলিশ, প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন কুণাল। নবজাগরণ মঞ্চ গঠন করার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, রাজ্যে পুলিশ প্রশাসনকে রাজনৈতিক হিংসা চরিতার্থ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেদিন স্পষ্টই রাজ্য সরকার এবং শাসক দলের দিকেই ইঙ্গিত ছিল তাঁর। এর কয়েকদিনের মধ্যেই কুণালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে অন্য সমীকরণ দেখছে রাজনৈতিক মহল। 

লোকসভা বিপর্যয়ের পরে তৃণমূল নেত্রীও বুঝেছেন, দলের সংগঠনে বড়সড় ফাটল ধরেছে। যা কাজে লাগিয়ে এ রাজ্যে পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে চাইছে বিজেপি। এই অবস্থায় দলের যে পুরনো নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, কুণালকে ডেকে বৈঠক করে তাঁদেরকেই মমতা বার্তা দিতে চাইলেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ কুণালের সঙ্গে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের সম্পর্কও যথেষ্ট ভাল। 

আবার কুণালও সারদা কাণ্ডে গ্রেফতার এবং দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর থেকেই নিজের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা বজায় রেখেছেন। কখনও তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, কখনও আবার পুরনো দলের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে সেই ধোঁয়াশাই অব্যাহত রাখলেন কুণাল।