সংক্ষিপ্ত
বলা হয় প্রতিটি ভোটই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সাধারণভাবে ভোট দানের মতো দারুণ গুরুত্বপূর্ণ পোস্টা ব্যালটও। কিন্তু গত তিনটি লোকসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছে প্রতি ৫টিতে ১টি করে পোস্টাল ভোট বাতিল হয়েছে। অথচ এই ভোট দিয়ে থাকেন ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ভোটকর্মীদের থেকে শুরু করে ভোটের কাজে বা সীমান্তে প্রহারা দেওয়া সেনা ও পুলিষ কর্মীরা। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য এই ভোটদান প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব না দেওয়াতেই এই অবস্থা। তবে অনেক ভোট বিশেষজ্ঞের আবার অভিযোগ এই বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে কমিশন।
বলা হয় প্রতিটি ভোটই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সাধারণভাবে ভোট দানের মতো দারুণ গুরুত্বপূর্ণ পোস্টা ব্যালটও। ২০১৭ সালের গুজরাত বিধানসভা ভোটের ধোকলা আসনের কথাই ধর যাক। ৪২৯টি পোস্টা ব্য়ালট বাতিল হওয়ায় ৩২৭ ভোটে পরাজিত হন কংগ্রেস প্রার্থী অশ্বিন রাঠোর। এই নিয়ে আদালতে এখনও মামলা চলছে।
শুধু ওই আসনের ক্ষেত্রেই নয় গত তিনটি লোকসভা নির্বাচনেও দেখা গিয়েছে একইভাবে বহু সংখ্যক পোস্টাল ব্য়ালট বাতিল হতে। ২০০৪ সালে ৬ লক্ষ পোস্টাল ব্য়ালটের মধ্যে ৯৫,৪৫৫টি অর্থাত ১৬ শতাংশ বাতিল হয়েছিল। ২০০৯ সালে ১১.৩ লক্ষ পোস্টাল ভোটের ১০.৫ শতাংশ বাতিল হয়। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২১.৫ শতাংশে। সব মিলিয়ে তিনটি নির্বাচনে মোট ২৩.২ লক্ষ ভোটের মধ্যে ৪.৪ লক্ষ ভোট বাতিল হয়েছে। অর্থাত প্রায় ৫টি ভোটের মধ্য়ে ১টি করে বাতিল হয়েছে।
অথচ, এই ভোট যাঁরা দেন তাদের একটা বড় অংশই ভোট পরিচালনার কাজে যুক্ত থাকেন। ভোটের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণেই সাদারণভাবে ভোট দিতে না পারায় তাঁদের পোস্টাল ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এছাড়া পুলিশ ও সেনা বাহিনীর যাঁরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকার জন্য ভোট দিতে পারেন না, তাঁরা পোস্টাল ভোট দিয়ে থাকেন।
পোস্টাল ব্য়ালট বাতিল হয় নানা কারণে। পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে গেলে তিনটি ফর্ম দেওয়া হয়। প্রথমটি ব্যালট, যেখানে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের নাম ও নির্বাচনী প্রতীক থাকে এবং পছন্দের প্রার্থীকে চিহ্নিত করার জন্য আলাদা জায়গা থাকে। দ্বিতীয় ফর্মটি থাকে ভোটারের বৈধতা প্রমাণের। সেখানে নাম, ঠিকানা ও স্বাক্ষরের জায়গা থাকে। তৃতীয়টিতে স্থানীয় ভাষা ও ইংরাজীতে পোস্টাল ব্য়ালট সঠিকভাবে দেওয়ার নির্দেশিকা থাকে।
ইলেকশন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে বিভিন্ন কারণে পোস্টাল ব্যালট বাতিল হয়ে যায়। কখনও স্বাক্ষর মেলে না, কখনও জন্ম তারিখে গোলমাল হয়, কখনও ভোটাররা ঠিকানা লিখতে ভুল করেন। কখনও আবার পছন্দের প্রার্থীকে চিহ্নিত করার সঠিক জায়গায় তাঁরা চিহ্নিত করেন না। কখনও কখনও আবার কেউ কেউ ব্যালটের উপরে 'ভারত মাতা কি জয়' - ধরণের স্লোগান লিখে দেন, যাতেও তাঁর ভোটটি বাতিল হয়ে যায়।
কিন্তু যাঁরা ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন, তাঁরাই কী করে এই ধরণের ভুল করেন? নির্বাচন কমিশনের দাবি, অবজ্ঞা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই এই ধরণের ভুলের কারণ। তাদের দাবি, ভোটের আগে পোস্টাল ভোট সঠিকভাবে দেওয়ার ব্যাপারে অনেক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাছাড়া ব্যালটের সঙ্গেও ইংরাজী ও স্থানীয় ভাষায় নির্দেশিকা থাকে। কাজেই ভুল হওয়ার কথা নয়।
তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত অনেকেরই দাবি, নির্বাচন কমিশনও এই বিষয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে। অনেক সময় অনেক তুচ্ছ কারণেই পোস্টাল ব্যালট বাতিল করা হয়, যা যুক্তিযুক্ত নয়। তাঁদের মতে গুজরাতের ধোকলার মতো ঘটনা আরও হলে এই বাড়াবাড়ি সমস্যা তৈরি করবে।
লোকসভা ২০১৯-এর ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। এইবার ভোট পূর্ববর্তী প্রশিক্ষণে পোস্টাল ব্য়ালটে সঠিক ভাবে ভোট দেওয়ার বিষয়ে আলাদা করে জোর দেওয়া হয়েছে বলে দাবি নির্বাচন কমিশনের। তাতে আদৌ কাজ হয়, না কি আগের তিন লোকসভা ভোটের ধারা মেনে এবার পোস্টাল ব্য়ালট বাতিল হওয়ার হার আরও বাড়ে সেটাই দেখার।