সংক্ষিপ্ত
পরিচালক লাকি মুখোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, 'নারী প্রগতি, নারী উন্নয়ন, নারী স্বাধীনতা নিয়ে চায়ের কাপে প্রায়ই ঝড় ওঠে। তবুও ঘরের মেয়ে কানন দেবীর জীবনী নিয়ে বাংলা সংস্কৃতির পীঠস্থান কলকাতায় কোনও নাট্য প্রযোজনা নেই'
নটী বিনোদিনীর মতো কানন দেবীও জানতেন না তাঁর বাবা কে? নায়িকার পালিত বাবা রতন চন্দ্র দাস, মা রজোবালা সেই যুগে সহবাস করতেন! পালিত বাবার আকস্মিক মৃত্যু মা-মেয়েকে পথে বসিয়েছিল। পুরুষের লালসার হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে তাঁরা রাতেও ভয়ে ঘুমোতে পারতেন না। অর্থের অভাবে হাওড়ার সেন্ট অ্যাগনেস কনভেন্ট স্কুলও ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। পরিস্থিতির শিকার হয়েও কানন অভিনয় গুণে পরে পাঁকে পদ্ম হয়ে ফুটেছেন। কানন বালা থেকে কানন দেবী হয়ে উঠেছেন। সেই ইতিহাস না ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। না নাটক আকারে অভিনীত হয়েছে মঞ্চে। কানন দেবীর ভিখারিণী থেকে রাজরানি হয়ে ওঠার গল্প তাই আজও অজানা। মুম্বইয়ের প্রবাসী বাঙালিদের ৪৩ বছরের অপেশাদারী নাট্যসংস্থা "আনন্দম" অবশেষে সেই ফাঁক ভরাট করতে চলেছে। ঘরের মেয়ের গল্প নিজের শহরকে শোনাতে কলকাতার আকাদেমি এবং মধুসূদন মঞ্চে এক দল শখের অভিনেতা আনছেন নাটক ‘কানন বালা থেকে কানন দেবী’। ৫ এবং ৬ নভেম্বর ২৬ জন মহিলা শিল্পী-সহ ৫৩ জন অপেশাদার শিল্পী মঞ্চে তুলে ধরতে চলেছেন কানন দেবীর জীবন। শিল্পীদের তালিকায় চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়র, চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, বৈজ্ঞানিক, অধ্যাপক, বিমান চালক, স্বর্ণ ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মীরা রয়েছেন।
হঠাৎ কানন দেবীকে মঞ্চে ফেরানোর ভাবনা কেন? এশিয়ানেট নিউজ বাংলা প্রশ্ন রেখেছিল নাট্য সংস্থার কর্ণধার তথা নাট্যকার, পরিচালক, অভিনেতা লাকি মুখোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, ‘‘নারী প্রগতি, নারী উন্নয়ন, নারী স্বাধীনতা নিয়ে চায়ের কাপে প্রায়ই ঝড় ওঠে। তবুও ঘরের মেয়ে কানন দেবীর জীবনী নিয়ে বাংলা সংস্কৃতির পীঠস্থান কলকাতায় কোনও নাট্য প্রযোজনা নেই! সেই কাজটিই করবে ‘আনন্দম।’’ তাঁর আরও দাবি, সংস্থার শিল্পীদের কাছে নাট্যাভিনয় নিছক বিনোদন নয়। তাঁরা নাটক থেকে উপার্জিত অর্থ দান করেন ক্যান্সার আক্রান্তদের সেবায়। কারণ, তাঁদের প্রত্যেকের বিশ্বাস, ‘জীবে প্রেম করে যেই জন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।’
এ ভাবেই নাট্যদলটি ১ কোটি ৬ লক্ষ টাকা অভিনয় করে তুলে দিয়েছেন আক্রান্তদের সেবায়। খবর, ইতিমধ্যেই দু’টি সভাগৃহের ৫০০ টাকার সমস্ত টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। কানন দেবীকে নিয়ে রচিত নাটকের পরিচালকও লাকি স্বয়ং। সেই যুগে কানন দেবী ছিলেন গায়িকা-নায়িকা। তাঁর অভিনয়ের মতোই তাঁর গানও জনপ্রিয় ছিল। সে কথা মাথায় রেখে নাটকে এক মুঠো গান ছড়িয়ে দিয়েছেন। এর আগেও কলকাতায় "আনন্দম" মঞ্চস্থ করেছে বেশ কিছু সফল নাটক। যার মধ্যে দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীর মন্দির প্রাঙ্গনে আয়োজিত "ঠাকুরের আলোয় নটী বিনোদিনী" এবং জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে মঞ্চস্থ "কথায় গানে রবীন্দ্রনাথ" বিশেষ উল্লেখযোগ্য।