সংক্ষিপ্ত
ফেসবুক লাইভের শুরু থেকেই সমানে শতরূপ ঘোষ কতগুলো স্ক্রিনশটকে সামনে নিয়ে এসেছেন। এই স্ক্রিনশটগুলো যে একটি সংবাদ প্রতিবেদনের তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। এই সব স্ক্রিনশটের কোনওটাতে দেখা গিয়েছে শতরূপ ঘোষের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আয় কত সে কথা বলা হচ্ছে।
খবরের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন সিপিএম-এর তরুণ তুর্কী শতরূপ ঘোষ (CPIM Leader Shatarup Ghosh)। সরাসরি তিনি ফেসবুক লাইভ (Facebook Live) করে তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত একটি খবরকে পরিস্কার ভাষায় ফেক বলে প্রতিপন্ন করেছেন। এই ফেক নিউজ (Fake News) তাঁকে কতটা প্রভাবিত করেছে তা ফেসবুক লাইভেও তুলে ধরেছেন তিনি। একটি সংবাদমাধ্যমের প্রকাশ করা একটি প্রতিবেদনকে সরাসরি কাটাছেঁড়া করেছেন শতরূপ। তথ্য তুলে তুলে প্রায় ৪৩ মিনিট ধরে চলা এই ফেসবুক লাইভে তিনি দাবি করেছেন যে এই খবরে প্রকাশিত তথ্যগুলো ভুল এবং এই খবর প্রকাশ করার আগে তাঁর কাছ থেকে তথ্যগুলোকে যাচাই করা হয়নি। প্রয়োজনে আইনি পথে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ক্ষিপ্ত শতরূপ।
একনজরে ফ্যাক্ট চেক-এ উঠে আসা সমস্ত পয়েন্টগুলো- (Fact Check Points)
যে প্রতিবেদনকে ঘিরে শতরূপ ফেক নিউজের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন, সেখানে কী বলা হয়েছে? সেই খবরের ভাবানুরূপ এখানে তুলে ধরা হল---
১৩ তারিখে শতরূপ ঘোষকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি সংবাদমাধ্যম। সেখানে খবরের ভিত্তি ছিল যে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে কত অর্থ আয় করেন সিপিএম-এর এই নেতা। শতরূপ ঘোষ ফেসবুক লাইভে খবরের প্রতিবেদনের যে স্ক্রিন-শট পেশ করেছেন তার থেকে বর্তমান খবরের প্রতিবেদনের বয়ান বহুলাংশেই পরিবর্তিত। খবরের এই প্রতিবেদন ১৩ জানুয়ারি প্রকাশিত হলেও পরে দেখা যায় তা ২০ জানুয়ারি, ২০২২-এর বিকেল ৪.৫৩ মিনিটে আপডেট করা হয়েছে। ফলতই শতরূপ ফেসবুক লাইভে প্রতিবেদনের যে স্ক্রিনশট পেশ করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন তার সঙ্গে মূল প্রতিবেদনের বিতর্কিত অংশগুলো প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে মূল প্রতিবেদনটি কেমন ছিল তা শতরূপের পেশ করা স্ক্রিনশটের উপর নির্ভর করেই এই ফ্যাক্ট চেক করতে হয়েছে। কারণ, মূল প্রতিবেদনটি যে এডিট করা হয়েছে তা প্রমাণিত। শতরূপের দাবি, ১৩ জানুয়ারির পর প্রতিবেদনটি প্রথমে ১৯ তারিখ এবং এরপর ২০ জানুয়ারি এডিট করা হয়।
এবার আসা যাক শতরূপের ফেসবুক লাইভে-র মূল বিষয়গুলোর উপরে---
ফেসবুক লাইভের শুরু থেকেই শতরূপ মূলত আটটি বিষয়কে বারবার তুলে ধরেছেন- ১। মিথ্যা তথ্য ২। সোশ্যাল মিডিয়ার আয়ের তথ্যে ভিত্তিহীন দাবি ৩। নির্বাচনে পরাজয় এবং জামানত জব্দ হওয়ার মতো পরিভাষারগুলোর মধ্যে অর্থের মানে বুঝতে না পারার ব্যর্থতা ৪। বারবার অনুরোধ করার সত্ত্বেও মূল প্রতিবেদনকে সরিয়ে না নেওয়া ৫। ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবসায় অর্থ আয়ের নোংরামি খেলা ৬। কথা না বলে তাঁর মিথ্যা বয়ান পেশ ৭। সংবাদ প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ ৮। রাজনৈতিক নেতা হিসাবে তাঁর নাম ও পরিচয়ে পরিকল্পিত কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা।
ফেসবুক লাইভে শতরূপ যা বললেন-
ফেসবুক লাইভের শুরু থেকেই সমানে শতরূপ ঘোষ কতগুলো স্ক্রিনশটকে সামনে নিয়ে এসেছেন। এই স্ক্রিনশটগুলো যে একটি সংবাদ প্রতিবেদনের তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। এই সব স্ক্রিনশটের কোনওটাতে দেখা গিয়েছে শতরূপ ঘোষের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আয় কত সে কথা বলা হচ্ছে। আবার কোনও স্ক্রিনশটে দেখা গিয়েছে যে শতরূপ ইউটিউব চ্যানেল থেকে কত অর্থ আয় করছেন সেই সব হিসাব দেওয়া।
শতরূপের দাবি, সংবাদ প্রতিবেদনের যেসব স্ক্রিনশট তিনি তুলে ধরেছেন তাতে প্রতিটি ছত্রে-ছত্রে মিথ্যা কথা লেখা হয়েছে। তিনি জানান ইউটিউবে তাঁর যত সংখ্যক সাবস্ক্রাইবার রয়েছে তাঁদের সংখ্যার সঙ্গে যদি প্রতিবেদনে প্রকাশিত সাবসক্রিপশন ফিজ-এর অঙ্ক গুণ করেন তাহলে ইউটিউব থেকেই তাঁর মাসে আয় ৩ কোটি ৭৬ লক্ষ ১১ হাজার টাকা হওয়া উচিত। কিন্তু এমন আয়ের খবর তাঁর কাছে নেই বলেই জানিয়েছেন। শতরূপ জানিয়েছেন, ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে কোনও ফিজ লাগে না। সুতরাং প্রকাশিত প্রতিবেদনের কোনও ভিত্তি নেই। ইউটিউব থেকে একজন চ্যানেল নির্মাতা কীভাবে কনটেন্ট বেচে আয় করতে পারেন এবং সেখানে কীভাবে রেভিনিউ আর্নের মডেল কাজ করে তা নিয়ে প্রতিবেদকের কোনও সম্যক ধারনাই নেই বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। এমনকী, প্রতিবেদকের ডিজিটাল নলেজকেও কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন শতরূপ।
নির্বাচনে কসবা কেন্দ্র থেকে তাঁর জমানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল বলেও প্রতিবেদনে যে দাবি করা হয়েছে তাও মিথ্যা বলে সাফ জানিয়েছেন শতরূপ। কসবা কেন্দ্র থেকে সিপিএম-এর জমানত কোনও দিনই বাজেয়াপ্ত হয়নি বলে দাবি করেছেন এই সিপিএম নেতা। রীতমতো কটাক্ষের সুরেই তিনি বলেছেন পরাজয় এবং জমানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার মধ্যে পার্থক্যটা ঠিক কী তা বুঝতে হবে প্রতিবেদককে।
তাঁর সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল বলেও নাকি মূল প্রতিবেদনের প্রথম সংস্করণে দাবি করা হয়েছিল। ফেসবুক লাইভে এমনটাই জানিয়েছেন শতরূপ। কিন্তু, তাঁর কাছে এই সংবাদমাধ্যমের কেউই এই বিষয়ে কোনও ফোন করেননি বলেও সাফ জানিয়েছেন। ফেসবুক লাইভে তিনি জানিয়েছেন যে সংবাদ প্রতিবেদকের সঙ্গে কী কথা হয়েছিল সেই বিষয় এবং কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিং। শতরূপ জানিয়েছেন, সংবাদ প্রতিবদকের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল ২০২১ সালের অক্টোবরে দুর্গাপুজো নিয়ে একটি লাইভ অনুষ্ঠানের অতিথি হওয়া নিয়ে। এরপর ওই নম্বর থেকে কোনও ফোন আসেনি বলেই জানিয়েছেন তিনি।
এমনকী প্রতিবেদক তাঁকে ফোন করেছেন বলে যে স্ক্রিনশট পাঠিয়েছেন তার সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শতরূপ। তাঁর কথায় সত্যি যদি ওই প্রতিবেদক ফোন করে থাকেন তাহলে শতরূপ যে কলগুলো ওই প্রতিবেদককে করেছিলেন সেগুলো কেন সেই স্ক্রিনশটে অনুপস্থিত। শতরূপের অভিযোগ, অন্যকোনও নম্বরকে শতরূপ ঘোষ বলে সেভ করে নিয়ে তাঁর পুরনো কল লগের স্ক্রিনশট এক্ষেত্রে তাঁকে পাঠানো হয়েছে।
তরুণ এই সিপিএম নেতার দাবি, অভিযুক্ত সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদক থেকে তাঁর উপরে থাকা কর্তৃপক্ষের এক প্রতিনিধির সঙ্গেও তিনি ফোনে কথা বলেছেন। নিজের ক্ষোভের কথা সেখানেও স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। এমনকী পুরনো প্রতিবেদনটি যাতে টেক-ডাউন করে নতুন করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা লিখে একটি নতুন প্রতিবেদন সঠিক তথ্য দিয়ে যাতে প্রকাশিত করা হয় সেই দাবি তিনি রেখেছিলেন ওই প্রতিনিধির সামনে। কিন্তু ঘন্টার পর ঘণ্টা কেটে গেলেও পুরনো প্রতিবেদনিট টেক-ডাউন না করে বারবার এডিট করা হয় বলে অভিযোগ শতরূপের। এমনকী নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা দিয়ে যে নতুন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় তাতে একাধিক এমন বিষয় লেখা হয় যার ক্লেমিং অথরিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শতরূপ। অনেক পরে দ্বিতীয় প্রতিবেদনিট কিছু সংশোধন করে দেওয়া হলেও তাতে এখনও অনেক আপত্তিমূলক বাক্য রয়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন শতরূপ। প্রয়োজনে আইনি পথে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন শতরূপ। এমনকী ক্ষমতা থাকলে ওই সংবাদমাধ্যমকে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলার করার চ্যালেঞ্জও ছুঁড়েছেন তিনি।
সত্য-অসত্যের কাটাকুটি খেলার উপসংহার
সংবাদমাধ্যমের মূল প্রতিবেদনে যে এমনকিছু লেখা হয়েছিল যা সঠিক নয় বলেই বারবার উঠে আসছে। বিশেষ করে শতরূপের পেশ করা স্ক্রিনশট এবং ওই সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদনের সাম্প্রতিক সংশোধন ভালো করেই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে এতে কিছু সমস্যা ছিল। শতরূপের দাবি যে ভুল নয় তার আরও প্রমাণ যে ওই সংবাদসংস্থার নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে প্রকাশ করা দ্বিতীয় প্রতিবেদন। ডিজিটাল নিউজের এই দ্রুত বেড়ে ওঠা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়-বাড়ন্তে তথ্যের সত্যতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। বিশ্বজুড়ে অন্তত কয়েক লক্ষ মামলা চলছে শুধুমাত্র এই ফেক নিউজকে ঘিরে। ফেক নিউজের চক্করে জেরবার ফেসবুক, টুইটার, গুগলের মতো বিশ্বের প্রথমসারীর তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থা। যার জন্য এই ডিজিটাল এজে তথ্যের মান্যতাকে সঠিক রাখতে এখন নানা ধরনের যুক্তি-তর্ক এবং টুলসের ব্যবহার শুরু হয়েছে। ফ্যাক্ট চেক নামক এই টুলসের কড়া আতসকাঁচ এখন কার্যত অনলাইন কনটেন্ট পাবলিশিং-কে আরও দায়িত্ববান হওয়ার শিক্ষা দিচ্ছে।
আরও পড়ুন--
Fake News Alert: ভারতীয় সেনাকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা, পর্দা ফাঁস খালিস্তানি সন্ত্রাসের
Fact Check: আকাশে দাউদাউ করে জ্বলছে বিপিন রাওয়াতের হেলিকপ্টার, এই ভিডিও কি সত্যি
Vamika Kohli's face: তাহলে কি পারলেন না বিরুষ্কা, সত্যিই ফাঁস হয়ে গেল ভামিকার ছবি