- Home
- Astrology
- Horoscope
- Maha shivratri 2022: কথিত আছে বিয়ের পর এখানে রাত কাটান শিব-পার্বতী, পরে সেখানেই তৈরি হয় মন্দিরের শহর
Maha shivratri 2022: কথিত আছে বিয়ের পর এখানে রাত কাটান শিব-পার্বতী, পরে সেখানেই তৈরি হয় মন্দিরের শহর
- FB
- TW
- Linkdin
বৈজনাথের আদি নাম ছিল কার্তিকেয়পুরা। এখানে শাসন ছিল কাত্যুরি রাজাদের। এই রাজ্য ছিল আসলে গারওয়াল এবং কুমায়ুন মিলে। শুধু তাই নয় কাত্যুরি রাজাদের রাজত্ব ধোতি যা বর্তমানে নেপাল নামে পরিচিত- ততদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল বলে ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে। বৈজনাথ মন্দির তৈরি হয়েছিল ১১৫০ সালে। ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল থেকে জানা যায় যে এই বৈজনাথ মন্দির তৈরি হয়েছিল বারো শতকের মাঝামাঝিতে। হিন্দু শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে যে গোমতী নদী এবং গারুর গঙ্গার মিলনস্থলে পার্বতী-কে বিয়ে করেছিলেন শিব। বিয়ে করে ফেরার পথে গোমতীর তিরে যেখানে এখন বৈজনাথ মন্দির সেখানে নাকি শিব ও পার্বতী বরযাত্রীদের নিয়ে রাত্রে অধিষ্ঠান করেন।
বৈজনাথের বাসিন্দাদের মতে শিব-পার্বতী পরের দিন তাদের লোকজন নিয়ে সকালে কৈলাসের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছিলেন। তাদের বিদায়ের পর দেখা যায় মাটির নিচ থেকে আপনাআপনি এক শিবলিঙ্গের উদ্ভব হয়েছে। খবর পৌছয় কাত্যুরি রাজার কাছে।
কথিত রয়েছে, শিব এবং পার্বতী (Shiv & Parvati) কেউ-ই তাদের আসল পরিচয় দিয়ে গোমতী নদীর তিরে কাত্যুরি রাজাদের রাজ্যে রাত্রিবাস করেননি। শিব নিজেকে এক বেদের ছদ্মবেশে লুকিয়ে রেখেছিলেন। কাত্যুরি রাজপরিবারের সে সময় ঘোর সঙ্কট। রাজপরিবারর অতি গুরুত্বপূর্ণ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং মরণ শয্যা প্রায় শায়িত ছিলেন। বেদের ছদ্মবেশে থাকা শিব-এর ঔষধ রাজপরিবারের ওই অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে সুস্থ করে তোলে বলে বৈজনাথ শহরের বাসিন্দাদের দাবি। কারও দাবি ওই অসুস্থ ব্যক্তি আর কেই নন খোদ কাত্যুরি রাজপুত্র ছিলেন। কেউ আবার বলেন কাত্যুরি রাজা খোদ মৃত্যুর পথযাত্রী ছিলেন। শিবের ঔষধ তাঁকে নবজন্ম দিয়েছিল।
কথিত রয়েছে প্রজা বৎসল কাত্যুরি রাজার রাজকর্মচারীদের অ্যাপায়ণ খুশি করেছিল শিব ও পার্বতীকে। যেভাবে একজন সাধারণ বেদ এবং তাঁর নববিবাহিত স্ত্রী-সহ বরযাত্রীদের জন্য গোমতীর তিরে থাকা বন্দোবস্ত এবং খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল তাতে খুশি হয়েছিলেন দেবাদিদেব। রাজকর্মচারীদের কাছেই জানতে পেরেছিলেন রাজপরিবারের রাজ অসুখের কথা। রাতেই রাজকর্মচারীদের হাতে জোর করে ঔষধ দিয়ে রাজপ্রাসাদে পাঠিয়েছিলেন।
সকাল যখন শিব-পার্বতী তাদের বরযাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ছদ্মবেশে এলাকা ছাড়েন তখন নাকি চারিদিকে শঙ্খনিনাদ বেজে উঠেছিল। কথিত রয়েছে শিব-পার্বতী চলে যেতেই গোমতীর তিরে মাটির নিচ থেকে উঠে আসে শিবলিঙ্গ। কাত্যুরি রানির কানে পৌঁছয় সেই খবর। এদিকে রাজপরিবারের সেই সদস্য তখন শিবের (Shiv) ঔষধে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। কথিত রয়েছে রানি মনে মনে বুঝতে পেরেছিলেন গোমতীর তিরে রাত কাটানো অতিথিদের আসল পরিচয়।
শিব-পার্বতীরা যেখানে রাত কাটিয়েছিলেন সেখানে নাতি রানি এসে পুরো এলাকা পরিদর্শন করেন। সেখানে পড়ে থাকা কিছু প্রমাণ তিনি পান যার থেকে তাঁর বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে স্বয়ং শিব ও পার্বতী তাঁদের রাজ্যে অধিষ্ঠান করেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে রানিরব নির্দেশে গোমতীর তিরের এই এলাকাকে ঘিরে ফেলা হয়।
কথিত রয়েছে রানি পবিত্র এই স্থানে যত দ্রুত সম্ভব মন্দির নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। রাজার অনুমতি নিয়ে রাজকর্মচারিদের সাহায্যে এক রাতের মধ্যে সেখানে ১৮টি মন্দির তৈরি করা হয়েছিল। মন্দির দিয়ে তৈরি হওয়া এই এলাকাকে রাতারাতি বৈজনাথ ধাম বলে অভিহিত করা হয়েছিল বলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। সেই থেকেই বৈজনাথ মন্দিরের (Baijanath Mandir) নামেই কার্তিকেয়পুরা পরিচিতি লাভ করে।
বৈজনাথের মূল মন্দিরে রয়েছে অষ্টধাতুর পার্বতীর মূর্তি। কিন্তু এই মূর্তি একবার চুরি হয়ে গিয়েছিল পাচারকারীদের হাত দিয়ে। পরে ভারত সরকার এই মূর্তি উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এরপর থেকে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (Archaeological Survey of India) অধীনে বৈজনাথকে হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
বৈজনাথ মন্দিরের এত বড় পুরাণ কাহিনি সেভাবে কখনও সামনে আসেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা এর কাহিনি জানলেও মন্দিরের অধিকাংশটাই চলে গিয়েছিল মাটির তলায়। পরে স্থানীয়দের উদ্যোগে মন্দিরকে মাটির স্তূপের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু মন্দিরের চারপাশে পড়ে থাকা জমি ততদিনে বহু মানুষ দখল করে নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেছে। এদের অধিকাংশেরই দাবি ছিল যে এদের পরিবার বৈজনাথ মন্দিরের সেবক ছিলেন এবং পুরুষানুক্রমে তারা এখানে বসবাস করছেন।
মন্দির উদ্ধার করা গেলেও এখানে বাড়তে থাকে চোরেদের দৌরাত্ম। মন্দিরের একের পর এক স্থাপত্য খুলে নিয়ে গিয়ে চোরাবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছিল। এইভাবেই চুরি যেতে থাকে একের পর বিগ্রহ। বলতে গেলে পাচাকারীদের কাছে অমূল্য ধনে পরিণত হয়েছিল বৈজনাথ মন্দির।
বাগেশ্বর জেলার (Bageswar District) মানুষরা এই মন্দিরকে অতি পবিত্র এবং তাঁদের পরিবারের মঙ্গলকামনার অন্যতম পীঠস্থান হিসাবে মানেন। কিন্তু বৈজনাথের মধ্যে পাচারকারীদের দৌরাত্ম কোনওভাবেই পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়ে সুরাহা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ।
পার্বতীর অষ্টধাতুর মূর্তি চুরি যেতেই ব্যাপকভাবে বিক্ষোভ ছড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে। বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বৈজনাথ ধাম (Baijanath Dham)। এরপর ভারত সরকারের উদ্যোগে উদ্ধার করা হয় সেই অষ্টধাতুর মূর্তি। মন্দিরে নতূন করে পার্বতীকে স্থাপন করা হয়। আর সেই সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয় বিগ্রহ গৃহে কোনওধরনের ছবি তোলার ব্যবস্থা। সরকারি বন্দোবস্তে বসানো হয় নিরাপত্তারক্ষী।
ভারত সরকারের উদ্যোগে অবশেষে বৈজনাথ ধামকে তাদের হেরিটেজ তালিকার নিয়ে আসে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। মন্দিররের সংস্কারের কাজ করা হয়। যেখানে যেখানে মন্দির গাত্রে ক্ষতি হয়েছিল সেগুলোকে সারানো হয়। পর্যটকদের জন্য তৈরি করা হয় রেস্টরুম এবং অন্যান্য ব্যবস্থা।
জানা গিয়েছে গতবছরও অতিমারির সুযোগ নিয়ে একাধিকবার মূল মন্দিরের দরজার তালা ভেঙেছিল পাচারকারীরা। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতা মূর্তি চুরি করা সম্ভব হয়নি। মন্দিরের দেখভালের দায়িত্বে থাকাদের দাবি, মন্দিরের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো দরকার। কারণ পাচারকারীরা কেউই নিরস্ত্র অবস্থায় এখানে আসে না। তাদের মোকাবিলা করতে গিয়ে প্রাণটা না যায় সেই আশঙ্কায় ভুগছেন তারা। এমনকী মন্দিরের অন্যান্য গৃহে মূর্তি স্থাপন করলে পর্যটকদের কাছেও বৈজনাথ মন্দিরের (Baijanath Mandir) আকর্ষণ বাড়েবে বলেই মনে করছেন এরা। ২০১৬ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াতের (Harish Rawat) উদ্যোগে বৈজনাথ ধামকে নতুন করে সাজানো হয়, মন্দিরের একপাশে গোমতী নদী। সেখান থেকে জল নিয়ে মন্দিরের সামনে একটি কৃত্রিম লেক তৈরি করা হয়। যেখানে আবার প্রচুর মাছও ছাড়া হয়। এই লেক এখন বৈজনাথের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।