বাংলার ঐতিহ্যবাহী উৎসব, করোনার মড়কের মাঝে আশা-আকাঙ্খা চড়ক ঘিরে
- FB
- TW
- Linkdin
কথিত আছে, এই দিনে শিব-উপাসক বাণরাজা দ্বারকাধীশ কৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে মহাদেবের উপাসনা করেন।
দেবাদিদেব মহাদেবকে তুষ্ট করে অমরত্ব লাভের আকাঙ্ক্ষায় ভক্তিসূচক নৃত্যগীতাদি ও নিজ রক্ত দিয়ে অভীষ্ট সিদ্ধ করেন।
সেই স্মৃতিতে শৈব সম্প্রদায় এই দিনে শিব প্রীতির জন্য উৎসব করে থাকেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, ১৪৮৫ খ্রিষ্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই চড়ক পুজোর প্রচলণ শুরু করেন। গম্ভীরাপুজো বা শিবের গাজন এই চড়কেরই রকমফের। এই পুজারই বিশেষ এক অঙ্গ যা নাম নীলপুজো নামে পরিচিত।
চড়কের আগের দিন গাছটিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ বা সিঁদুর মথিত লম্বা কাঠের তক্তা যাতে 'শিবের পাটা' রাখা হয়, যা "বুড়োশিব" নামে পরিচিত।
পতিত ব্রাহ্মণ এ পুজার পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন। চড়কের বিশেষ অংশ হলো কুমিরের পুজো, জ্বলন্ত কয়লার ওপর দিয়ে হাঁটা, কাঁটা আর ছুঁড়ির ওপর লাফানো, বাণফোঁড়া, শিবের বিয়ে, অগ্নিনৃত্য, চড়কগাছে দোলা এবং হাজরা পুজো করা।
এই সব পুজোর মূলে রয়েছে ভূতপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের ওপর বিশ্বাস। এর বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রাচীন কৌমসমাজে নরবলিও প্রচলিত ছিল। পুজোর উৎসবে বহু প্রকারের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ বলে বিবেচিত হত।
ড়কগাছে ভক্ত বা সন্ন্যাসীকে লোহার হুড়কো দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুত বেগে ঘোরানো হয়। তার পিঠে, হাতে, পায়ে, জিহ্বায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে শলাকা বিদ্ধ করা হত। কখনো কখনো জ্বলন্ত লোহার শলাকা তার গায়ে ফুঁড়ে দেয়া হয়।
১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার আইন করে এ নিয়ম বন্ধ করলেও গ্রামের সাধারণ লোকের মধ্যে এখনও তা প্রচলিত আছে।