বছরে একাধিকবার পালিত হয় হনুমান জয়ন্তী, রইল এর নেপথ্যের কাহিনি
রাত পোহালেই হনুমান জয়ন্তী। সারা দেশ জুড়ে ভগবান হনুমানের পুজোর প্রস্তুতি চলছে। হিন্দু ধর্ম অনুসারে, এবছর ১৬ এপ্রিল পালিত হবে হনুমান জয়ন্তী। এমনিতেই ভগবান হনুমানের পুজো হয় মঙ্গল ও শনিবার। এর এবছর শনিবারই পড়েছে হনুমান জয়ন্তী। তবে জানেন কি, বছরে একবার নয় দুবার পালিত হয় হনুমান জয়ন্তী। জেনে নিন এর নেপথ্যের কারণ।
- FB
- TW
- Linkdin
ধর্মীয় গ্রন্থে হনুমানজীর জন্ম নিয়ে একাধিক কাহিনি বর্ণিত আছে। হনুমানজির জন্ম তারিখ নিয়েও রয়েছে কিছু দ্বন্দ্ব। কিছুজন বিশ্বাস করেন হনমানজী চৈত্র পূর্ণিমায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেন কার্তিক কৃষ্ণ চতুর্দশীতে জন্ম হয়েছিল বজরংবলীর। তাঁর হনুমানজীর জন্ম নিয়ে রয়েছে দ্বিমত। সে কারণেই একাধিক দিন পালিত হন হনুমানজীর জন্ম দিন।
রামায়ণে উল্লেখ আছে ভগবান হনুমানজীর জন্ম তিথি। বাল্মীকি রামায়ণ অনুসারে, কার্তিক মাসের মাসের কৃষ্ণপক্ষ চতুর্দশীতে হনুমানজীর জন্ম হয়েছিল। দিনটি ছিল মঙ্গলবার। মেষ রাশি ও স্বাতী নক্ষত্র। গীতপ্রেস গোরখপুর থেকে প্রকাশিত ব্রত পর্বতৎসবের সংখ্যায়ও এই তারিখের বর্ণনাপাওয়া যায়। সে কারণে অনেকে মনে করে করেন কার্তিক মাসের মাসের কৃষ্ণপক্ষ চতুর্দশীতে হনুমানজীর জন্ম হয়েছিল।
আবার অনেক জায়গায় চৈত্র পূর্ণিমায় পালিত হয় হনুমান জন্মবার্ষিকী। কথিত আছে, হনুমানজী সূর্যকে বল হিসেবে গিলে খেয়ে ছিলেন। সে সময় ইন্দ্র তার বজ্র দ্বারা হনুমানজির চিবুকে আঘাত করেন। হনুমানজী সে সময় জ্ঞান হারান। এতে রাগান্বিত হয়ে যান পবন দেব। ভগবান হনুমানকে পবন পুত্র বলা হয়।
জানা যায়, হনুমানজী-কে আঘাত করায় পবনদেব রাগান্বিত হন। তিনি রাগান্বিত হয়ে হাওয়া বন্ধ করে দেন। তারপর হনুমানজীর জ্ঞান ফিরলে তিনি পবন দেবতে অনুরোধ করেন। শেষে হনুমানজীর অনুরোধে পবন দেব পৃথিবীর অবস্থা ঠিক করেন। এই দিনটি ছিল চৈত্র পূর্ণিমা। সে কারণে এই দিনটি হনুমানজীর জন্মবার্ষিকী হিসেবে মনে করা হয়।
এই কারণে বছরে দুবার পালিত হয় হনুমান জয়ন্তী। আবার অনেক জায়গায় প্রচলিত আছে তিনি অমর্ত্য লাভ করে ছিলেন। সে কারণে তিনি এখনও রয়েছেন ত্রিভূবনে। বাল্মীকি রামায়ন অনুসারে, হনুমানজী যখন মাতা সীতার সন্ধানে লঙ্কায় গিয়েছিলেন, তখন মাতা সীতা হনুমানজীকে দেখে খুশি হন। তখন তাঁকে একটি আংটি পরিয়ে দিয়েছিলেন। এই আংটি ছিল অমর হওয়ার বর।
বজরঙ্গবলীর জন্ম নিয়ে রয়েছে একাধিক কাহিনি। ব্রক্ষ্মাণ্ড পুরান অনুসারে, দেবী অঞ্জনা ও বানর রাজ কেশরীর সন্তান হচ্ছিল না। বহু বছর তপস্যা করে পবনদেবকের কৃপা পান দেবী অঞ্জনা। পবন দেবের কৃপায় অঞ্জনার গর্ভ জন্ম নিলেন হনুমান। সেই কারণেই ভগবান হনুমান পবন পুত্র নামেও পরিচিত।
শিবপুরাণের রয়েছে ভগবান হনুমানের জন্ম সংক্রান্ত তথ্য। শাস্ত্র মতে, অঞ্জনা যখন পুত্র কামনায় তপস্যা করছিলেন, তখন তাঁর কান দিয়ে প্রবেশ করেছিল ভগবান শিবের রেতঃ। এতেই তিনি গর্ভবতী হন। জন্ম হয় মহাবীর হনুমানের। তাই ভগবান হনুমানকে শিবকে অবতার বলা হয়ে থাকে।
কথিত আছে রাজা দশরথ পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করে অগ্নি দেবতার কাছ থেকে পেয়েছিলেন পুত্রদায়ী পায়েস। এই পায়েস রানি কৈকেয়া যখন খেতে যাচ্ছিলেন তখন একটি শকুন এসে পায়েস ছিনিয়ে আকাশে উড়ে গেলেন। অন্যদিকে অজ্ঞনা পুত্র কামনায় শিবের তপস্যা করছিলেন দেবী অঞ্জনা। তখন সেই পায়েসের বাটি তার কাছে এসে পৌঁছায়।
সেই পায়েস খেয়েছিলেন দেবী অজ্ঞনা। তারপরই গর্ভধারণ করেন তিনি। জন্ম হয় ভগবান হনুমানের। আবার কেউ বলেন, দেবী অঞ্জনা ছিলেন স্বর্গীয় পরী। তিনি অভিশাপ পেয়েছিলেন একজন ঋষি দ্বারা। তারপর তাঁর বানর কুলে জন্ম হয়। তিনিই বলেছিলেন, তাঁর গর্ভে জন্ম হবে ভগবান হনুমানের।
ভগবান হনুমানের জন্ম সংক্রান্ত একাধিক কাহিনি রয়েছে শাস্ত্রে। তাঁর জন্ম তিথি নিয়ে যেমন রয়েছে মতোবিরোধ, তেমনই বিভিন্ন মত রয়েছে জন্ম কাহিনি নিয়ে। ভগবান হনুমানকে ঘিরে এক এক ব্যক্তির এক এক মত। সে কারণে তিনি বছরে একাধিকবার পালিত হন তাঁর জন্মবার্ষিকী।