এটাই বাংলার প্রধান দুর্গাপুজো, জেনে নিন বাসন্তী পুজোর মাহাত্ম্য ও সূচণা
চারটি নবরাত্রিতেই শ্রী দূর্গার মহাপূজা হয়। আশ্বিনের নবরাত্রি পূজা শারদীয়া পূজা এবং বসন্তের নবরাত্রির পূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। লোককথা অনুসারে এই পুজোর পৃথিবীতে প্রথম সূচণা করেছিলেন রাজা সুরথ।
- FB
- TW
- Linkdin
বছরে মূলত চারটি নবরাত্রি আসে। তার মধ্যে দুটি গুপ্ত নবরাত্রি। চারটি নবরাত্রিতেই শ্রী দূর্গার মহাপূজা হয়। আশ্বিনের নবরাত্রি পূজা শারদীয়া পূজা এবং বসন্তের নবরাত্রির পূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। লোককথা অনুসারে এই পুজোর পৃথিবীতে প্রথম সূচণা করেছিলেন রাজা সুরথ।
সুরথ ছিলেন হিন্দু পুরাণে উল্লিখিত প্রাচীন বঙ্গ রাজ্যের চিত্রবংশী সম্রাট। মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এ তার উল্লেখ আছে। তিনি হিন্দু ধর্মের একজন প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিও ছিলেন। তার রাজধানী ছিল বলিপুরে যা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বোলপুর শহর। তিনি ছিলেন দেবী দূর্গার ভক্ত।
মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে তিনি মর্তের অধিবাসীদের মধ্যে দেবী মাহাত্ম্য (শ্রী শ্রী চণ্ডী) প্রচার করেছিলেন এবং তিনি বঙ্গে দূর্গাপূজার প্রথম আয়োজক ছিলেন। যা পরে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ।
রাজা সুরথকে চিত্রগুপ্তবংশী রাজা (চিত্রগুপ্তের বংশধর) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে দূর্গা সপ্তশতী দেবী মাহাত্ম্য এবং মার্কণ্ডেয় পুরাণে। তিনি তার রাজ্য এবং তার সমস্ত সম্পত্তি হারান। সবকিছু হারিয়ে তিনি তার ভাগ্য ফেরাতে তার রাজধানী বলিপুর (বর্তমানে বোলপুর) ত্যাগ করেন। পরে সমাধি বৈশ্যের সঙ্গে তার দেখা হয়। যিনি একজন বণিক ছিলেন।
কাকতালীয়ভাবে তিনিও দেউলিয়া ছিলেন। কারণ তার পরিবার তার সঙ্গে প্রতারণা করেছিল। তারপর সৌভাগ্যক্রমে তাদের সঙ্গে মেধস মুনির সঙ্গে দেখা হয়। তিনি তাদের ভাগ্য ফিরে পাওয়ার জন্য তাদের দেবী দূর্গার পূজার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
রাজা সুরথ এবং সমাধি বৈশ্য পশ্চিমবঙ্গের গড় জঙ্গলে মেধস মুনির আশ্রমে দেবী দূর্গাকর দূর্গা পূজা বা দুর্গোৎসব করেছিলেন। এটি ছিল পৃথিবীর প্রথম দূর্গাপূজা। বর্তমান দিনে গড় জঙ্গল পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার দূর্গাপুরে।
বোলপুরে তার প্রতিষ্ঠিত সুরথেশ্বর শিব মন্দির ও রয়েছে। তারা বসন্তকালে দেবী দূর্গার পূজা করেছিলেন। সুতরাং এই উৎসবকে বলা হয় বাসন্তী পূজা বা "বসন্তকালীন দুর্গোৎসব"। শ্রী শ্রী চণ্ডীর মতে, তারা এই দূর্গা প্রতিমা গড় জঙ্গলে মাটি দিয়ে তৈরি করেছিলেন ।
পুজোর পর সুরথ তার সমস্ত হারানো সম্পত্তি ফেরত পান এবং তিনি তার রাজধানী বলিপুরে (বর্তমানে বোলপুর) ফিরে আসেন। সুরথ বসন্তে তার রাজধানী বোলপুরে দূর্গাপুজো করেছিলেন। এই পুজোর সময় তিনি বলি দেন লক্ষ লক্ষ পশু। এই বাংলা শব্দ "বলি" (পশু বলি) থেকে, এই স্থানকে "বলিপুর" (বর্তমানে বোলপুর) বলা হয়।
বাংলায় প্রথং দুর্গাপুজো-
তাহিরপুর রাজা কংস নারায়ণ রায় বাহাদুর ১৪৮০ খ্রিস্টাব্দে এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব এখান থেকেই শুরু হয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। মা দুর্গার পৃথিবীতে প্রথম আবির্ভাব স্থল রাজশাহীর তাহেরপুর। মা দুর্গার জন্মস্বর্গে। ত্রেতাযুগে রাবণের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দশরথ পুত্র মহামতি রামমা দুর্গার অকালবোধন পূজা করেন। মা দুর্গা তাঁর পূজায় সন্তুষ্ট হয়ে রাবণবধের বর প্রদান করেন।
মা দুর্গার বর পেয়ে রাম লঙ্কারাজ রাবণকে বধ করতেসক্ষম হন। ৮৮৭ বঙ্গাব্দে (১৪৮০ খ্রিস্টাব্দে) কংস নারায়ণের আহবানে মাদুর্গা সাধারণ্যে আবির্ভূত হন। এই সাহনে শরৎকালে আশ্বিন মাসের মহা ষষ্ঠীতিথিতে দেবীর বোধন হয়। ঐ পূজায় পৌরহিত্য করেছিলেন রাজপন্ডিত রমেশ শাস্ত্রী।মা দুর্গার প্রথম পদধূলিতে ধন্য এই পুণ্যভূমি। এই পুণ্যভূমি থেকেই শারদীয়দুর্গোৎসবের সূচনা। কথিত আছে সেই সময় এই পূজায় কংস নায়রাণ ৯ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন।