- Home
- Astrology
- Horoscope
- দশমহাবিদ্যা অনুসারে দশটি অবতারে আবির্ভাব হয়েছিল মা দুর্গার, রইল পৌরানিক কাহিনি
দশমহাবিদ্যা অনুসারে দশটি অবতারে আবির্ভাব হয়েছিল মা দুর্গার, রইল পৌরানিক কাহিনি
মহাবিদ্যা বা দশমহাবিদ্যা সনাতন ধর্মে দেবীর দশটি রূপের কথা উল্লেখ আছে। এই দশ রূপের কোনওটায় আছে ভয়ঙ্কর দেবীমূর্তি তেমনই অন্য প্রান্তে রয়েছে অপরূপা সুন্দরী দেবী প্রতিমা। মুণ্ডমালা তন্ত্র অনুসারে, এই দশমহাবিদ্যা হলেন কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলা। শাস্ত্রে মহাবিদ্যার ধারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহাবিদ্যা কথাটির মূলত সংস্কৃত শব্দ। মহা অর্থাৎ মহৎ আর বিদ্যা অর্থাৎ রূপ, প্রকাশ, জ্ঞান বা বুদ্ধি। আজ রইল দেবীর সেই দশ রূপের কথা। দেখে নিন এক ঝলকে।
- FB
- TW
- Linkdin
কালী বা মহাকালী- দেবী কালী মহাকালী, ভদ্রকালী এবং কালিকা নামেও পরিচিত। দশ মহাবিদ্যার মধ্যে দেবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ট রূপ হল কালী বা মহাকালী। তিনি শিবের শক্তি। মহাকালী যুদ্ধ, ক্রোধ, সময়, পরিবর্তন, সৃষ্টি, ধ্বংস ও শক্তির দেবী। বিভিন্ন কাহিনি অনুসারে কালীর ৮, ১২ ও ২১ ভিন্ন রূপ আছে। তার মধ্যএ অন্যতন আদ্যকালী, চিন্তামণি কালী, স্পর্শ মণি কালী, দক্ষিণা কালী, শ্যামা কালী ও শ্মশানকালী।
ত্রিপুরা সুন্দরী- দেবী ত্রিপুরা সুন্দরী, ষোদশী নামেও পরিচিত। তিনি ত্রিকোলের সব চেয়ে সুন্দরী দেবী। তাঁর গায়ের রঙ উদীয়মান সূর্যের আলোয় উজ্জ্বল হয়, তাঁর গোলাপী আভা আনন্দ, করুণা ও আলোকসজ্জার প্রতিনিধিত্ব করে। দেবী ত্রিপুরা সুন্দরী ললিতা নামেও পরিচিত।
দেবী ভৈরবী- ভয়ঙ্ক দেবী হিসেবে পরিচিত দেবী ভৈরবী। তিনি ভৈরবের মহিলা প্রতিরূপ। কালীর মতো তাঁরও চার হাত। তাঁর হাতে রয়েছে তলোয়ার, আছে রাক্ষসের মাথা এবং একটি বই। যা তিন হাতে জ্ঞানকে বোঝায়। সামনেপ হাতটি অভয় মুদ্রা উপস্থাুন করে ভক্তদের কোনও ভয় ও উদ্বেগ না করার জন্য অনুরোধ কের।
বগলামুখী বা পীতাম্বরী- বগলা অর্থ ঘোড়া নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত লাগাম। বাম হাত দিয়ে তিনি রাক্ষসের জিহ্বা বের করে নেন। আর ডান হাতে তাকে বধ করতে দেখা যায়। পৌরানিক কাহিনি অনুসারে তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী। তিনি ব্রক্ষ্মাকে খুশি করার জন্য বিভিন্ন তপস্যা করেছিলেন। তাঁর হলুদ বর্ণের জন্য তিনি পীতাম্বরী নামেও পরিচিত।
দেবী মাতঙ্গী- দেবী চন্ডালিকা নামেও পরিচিত। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, মাতঙ্গী সরস্বতীর তান্ত্রিক রূপ। জ্ঞান, সঙ্গীত ও শিল্পের দেবী তিনি। এই দেবীকে উচ্ছিষ্ট ভোগ উৎসর্গ করা হয়। দেবীর মন্দির অবস্থিত কর্ণাটকের বেলগাঁও-তে। দেবী মাতঙ্গী শ্যামবর্ণা। তাঁর চার হাত। বীণা, বরাভয়, নর-করোটি ও খড়গ রয়েছে দেবীর হাতে।
দেবী ধূমাবতী- ধূমাবতীর অর্থ যে ধোঁয়ার তৈরি। দেবী ধূমাবতী রাগ, দুঃখ, ভয়, ক্লান্তি, অস্থিরতা, দারিদ্র্যের সঙ্গে যুক্ত। দেবীতে একজন বিধবা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তিনি মহাবিদ্যার স্বতন্ত্র প্রকৃতির অধিকারী। দেবীর চিত্রে দেখা যায় তিনি একটি ঘোড়াবিহীন রথে বসে আছেন। তাঁর পিছনে রয়েছে একাধিক কাক। দেবী ধূমাবতী আমাদের চিরন্তন সত্য খোঁজার শিক্ষা দিয়ে থাকে।
ছিন্ন মস্তা- দেবী ছিন্ন মস্তা জীবনদাতা ও জীবন গ্রহীতা উভয়ই। তিনি চন্ডিকা ও জোগনি মা নামেও পরিচিত। দেবী পার্বতী ডাকিনি ও বর্ণিনী সঙ্গে মন্দাকিনি নদীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় জয়া ও বিজয়া ক্ষুধার্ত হয়ে দেবীর কাছে খাবার চান। তখন দেবী নিজের নখ দিয়ে নিজের মাথা কেটে দেয় ও তাদের ক্ষুধা মেটান তাঁর রক্ত দিয়ে।
তারা বা নীলা সরস্বতী- তারা বা নীলা সরস্বতী হল দেবীর আর এক রূপ। দেবী তারা হলেন করুণ ও সুরক্ষার দেবী । সমুদ্র মন্থনের সময় যে বিষ উত্তোলন হয়েছিল তা পান করে মহাদেশ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তখন দেবী দুর্গা তারা রূপ ধারণ করে শিবকে নিজের কোলে শুইয়ে চার বুকের দুধ খাইয়েছিলেন। প্রচলিত আছে এমন কাহিনি।
ভুবনেশ্বরী- ভুবন অর্থ জগৎ আর ঈশ্বরী অর্থ হল মহিলা শাসক। তিনি ভুবনেশ্বরী রূপেও পুজিত হন। তিনি মহামায়া, সর্বরূপা, বিশ্বরূপা নামেও জনপ্রিয়। ব্রক্ষ্মা যখন মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছিলেন তখন দেবী ভুবনেশ্বরীর আহ্বান হয়। এমনই উল্লেখ আছে প্রাণতোষিণী গ্রন্থে। তিনি শিবের হৃদয়ে বাস করেন।
দেবী কমলা- মহাবিদ্যার আরও এক রূপ হল দেবী কমলা। লক্ষ্মীর তান্ত্রিক রূপ হল দেবী কমলা। তিনি হিন্দু ধর্মের সর্বাধিক পুজিত দেব। তিনি ধন, সমৃদ্ধির দেবী। ঋষি ভৃগুর কন্যা। তার চার হাত আছে। তিনি পদ্মের ওপর অধিষ্ঠান করেন। তিনি অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেবী লক্ষ্মী হিসেবে বিবেচিত হন। কিন্তু মহা বিদ্যা অুসারে, লক্ষ্মীর সঙ্গে কমলার স্বতন্ত্র পার্থর্ক্য আছে।