পুরির জগন্নাথ মন্দির সম্পর্কে ১০টি রহস্য, আজও কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না
- FB
- TW
- Linkdin
সাধারণত বায়ু যেদিকে প্রবাহিত হয়, যে কোনও পতাকা সেই দিকেই ওড়ে। কিন্তু, আশ্চর্যজনকভাবে পুরির জগন্নাথ মন্দিরের গম্বুজের উপরে যে পতাকাটি লাগানো থাকে, সেটিকে সবসময়ই বায়ুপ্রবাহের বিপরীত দিকে উড়তে দেখা যায়। এটা কীভাবে সম্ভব তা এখনও জানা যায়নি।
মন্দিরের মূল গম্বুজটি প্রায় ৪৫ তলা ভবনের সমান উঁচু। ঝড়ৃ-ঝঞ্ঝা, ভূমিকম্প, যুদ্ধ - যাই ঘটুক না কেন, মন্দিরের কোনও একজন সাধুকে প্রতিদিন ওই গম্বুজের উপরে উঠে নিয়মিত পতাকাটি পরিবর্তন করতে হয়। যদি কোনও কারণে এটি একদিনও পরিবর্তন না করা হয়, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী মন্দির চত্ত্বর পরবর্তী ১৮ বছরের জন্য বন্ধ রাখতে হবে। ১৮০০ বছর ধরে এই ঐতিহ্য চলে আসছে।
মন্দিরটির সর্বোচ্চ অংশে একটি সোজা ভাবে লাগানো একটি সুবিশাল সুদর্শন চক্র রয়েছে। এটির উচ্চতা ২০ ফুট এবং ওজন প্রায় এক টন! কথিত আছে, শহরের প্রতিটি দিক থেকে এই চক্রটিকে দেখা যায়। ভক্ত যেখানেই থাকুক না কেন, তার দিকে স্রবদা ভগবানের দৃষ্টি আছে - ভক্তের মনে এই ভাব জাগানোর জন্যই এই চক্রটি স্থাপন করা হয়েছিল বলে শোনা যায়।
মজার বিষয় হল, ২০০০ বছর আগে গোপুরমে আনা হয়েছিল এই বিশাল চক্রটি এবং মন্দিরের উপরে স্থাপন করা হয়েছিল। চক্রটি কীভাবে নকশা করা হয়েছিল, সেটিকে কীভাবেই বা মন্দিরের গম্বুজের উপরে বসানো হল, এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না। সবই আজও ধাঁধা হিসাবে রয়ে গিয়েছে।
বিশ্বের যে কোনও জায়গায়, দিনের বেলা সমুদ্র থেকে বাতাস বয়ে আসে স্থলভাগের দিকে। আর রাতে উল্টোটা ঘটে, অর্থাৎ স্থল থেকে বাতাস বয়ে যায় সমুদ্রের দিকে। কিন্তু, পুরীর ক্ষেত্রে জগতের এই নিয়ম খাটে না। এই শহরে, দিনের বেলা স্থল থেকে বাতাস যায় জলে, আর রাতে ঘটে বিপরীতটা।
আরও এক আশ্চর্যের বিষয় হল মন্দিরের উপর দিয়ে কোনও কিছুই ওড়ে না। কোনও বিমান, এমনকী কোনও পাখিকেও উড়তে দেখা যায় না। আর এই আশ্চর্যজনক ঘটনার এখনও পর্যন্ত কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
মন্দিরটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে, কোনও সময়ই মূল খিলানের ছায়া দেখা না যায়। ভোর বেলা হোক, কী দুপুরে, কিংবা গোধূলীতে - কোনও সময়ই মূল খিলানটির ছায়া পড়ে না। অত্যন্ত জটিল ও বিস্ময়কর প্রকৌশলের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
মন্দিরে পরিবেশিত প্রসাদ সম্পর্কে একটি অদ্ভূত কথা শোনা যায়। মন্দিরে দৈনিক পরিদর্শনকারীর সংখ্যা ২০০০ থেকে ২০,০০,০০০ মধ্যে ঘোরাফেরা করে। তবে, রান্না করা প্রসাদের পরিমাণ বছরের প্রত্যেকদিনই সমান থাকে। তা সত্ত্বেও নাকি, কোনওদিনই প্রসাদ এতটুকু কম পড়ে না, বা বেশিও হয় না। কাঠের জ্বালানি ব্যবহার করে মাটির হাঁড়িতে প্রসাদ রান্না করা হয়। অবিকল ৭টি হাঁড়ি পরপর একটাকে আরেকটির উপরে রাখা হয়। সবচেয়ে উপরের পাত্রটিতেই রান্না করা হয়। আশ্চর্যজনকভাবে, প্রথম পাত্রে যেভাবে রান্না করা হচ্ছে, তা অন্য পাত্রগুলিতেও নিজে থেকেই হয়ে যার বলে শোনা যায়।
মন্দির থেকে সমুদ্রের দূরত্ব বেশি নয়। মন্দিরের সিংহদ্বার অর্থাৎ প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশের আগে পর্যন্ত সমুদ্রের শব্দ শোনা যায়। কিন্তু, একবার সিংহদ্বার পেরিয়ে গেলেই আর সমুদ্রের শব্দ শুনতে পাওয়া যায় না। এরপর আবার মন্দির থেকে বের হলে, তবেই সমুদ্রের শব্দ শোনা যায়।
কথিত আছে নবকলেবরের সময় পুরনো মূর্তিগুলিকে মাটিতে সমাধীস্ত করা হয়। ২১ দিন পর মূর্তিগুলি আর দেখা যায় না। একে অপরের দিকে মুখ করিয়ে রাখা হয় এবং তারা নিজে থেকে ভেঙ্গে যায়।