১৬ চাকার জগন্নাথদেবের রথ ঘিরে রয়েছে নানান অজানা কাহিনি, দেখে নিন এক ঝলকে
- FB
- TW
- Linkdin
জানা যায়, জগন্নাথের রথটি সম্পূর্ণভাবে কাঠের তৈরি। এটি নির্মাণে একটি পেরেকও ব্যবহার করা হয় না। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা তিনজনে রথে চেপে মাসির বাড়ি যান। তারপর নির্দিষ্ট তিথিতে সেখান থেকে মন্দিরে ফেরেন। রথ তৈরিতে যে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে তা সংগ্রহ শুরু হয় বসন্ত পঞ্চমী থেকে। এটি সম্পূর্ণ রূপে মন্দিরের কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা করে থাকেন।
পুরীতে রাজা ইন্দ্রদ্যুন্ম স্বপ্নে বিষ্ণু মন্দির গড়ার নির্দেশ পেয়েছিলেন। তবে, সে মন্দির কেমন হবে সে সম্পর্কে রাজার তেমন ধারণা ছিল না। এর পর নানান ঘটনার পর মন্দির স্থাপন হয়। ভগবান জগন্নাথ শ্রীহরি হলেন ভগবান বিষ্ণুর অন্যতম প্রধান অবতার। জগন্নাথের রথের নির্মান ও নকশা অক্ষয় তৃতীয়া থেকে শুরু হয়। বসন্ত পঞ্চমী থেকে শুরু হয় কাঠ সংগ্রহের কাজ।
ভগবান জগন্নাথের রথের নাম হল নন্দীঘোষ। বলভদ্র ও সুভদ্রার রথের নাম তালধ্বজা ও দর্পদলন রথ। রথে জগন্নাথের সঙ্গী হন মদনমোহন। উচ্চতা ৪৫ ফুট। রথেক গায়ে থাকে হলুদ ও সোনালি রং। সাত ফুট ব্যাসের ১৬টি চাকা থাকে রথেক। রথের মাথায় থাকা পতাকার নাম ত্রৈলোক্যমোহিনী। রথের ৪টি ঘোড়া।
বলরামের রথের নাম তালধ্বজ। রথের সঙ্গী হন রামকৃষ্ণ। তালধ্বজের উচ্চতা ৪৪ ফুট। রথে ৬ ফুট ব্যাসের মোট ১৪টি চাকা আছে। ৭৬৩কাঠের টুকরো দিয়ে তৈরি হয় এই রথ। লাল ও সবুজ কাপড় থাকে রথে। তালধ্বজের রক্ষীর নাম বাসুদেব। রলরামের রথে ৯টি দেবতা থাকেন। কার্তিক, গণেশ, সর্বমঙ্গলা, মৃত্যুঞ্জয়, মুক্তেশ্বর।
সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন। রথে থাকেন সুভদ্রার সঙ্গিনী সুদর্শনা। কৃদপ্রদলনের উচচ্চতা ৪৩ ফুট। এই রথে মোট ১২টি চাকা। লাল ও কালো কাপড়ে সাজানো হয় রথ। দর্পজলনের সারথির নাম অর্জুন। দর্পদলের মাথায় থাকা পতাকার নাম নদম্বিকা।
জৈষ্ঠ্য পূর্ণিমার দিন ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রাকে ১০৮টি কলসির জল দিয়ে স্নান করানো হয়। এই অনুষ্ঠানই সহস্ত্রধারা স্নান নামে খ্যাত। এবছর আষাঢ় শুক্লা দ্বিতীয়া তিথি ৩০ জুন সকাল ১০.৪৯ মিনিটে শুরু হয়ে চলবে ১.০৯ মিনিট পর্যন্ত। এই তিথিতে পালিত হবে জগন্নাথ রথযাত্রা।
সহস্ত্রধারা স্নানের পর সাত দিন ভগবান জগন্নাথ তাঁৎ মাসির বাড়িতে থাকেন। তারপর আষাঢ় মাসের শুক্লা দশমীতে, অষ্টমি তিথিতে রথগুলো ফিরে যায়। এর নামবহুদা যাত্রা। জগন্নাথদাম পুরী ঘিরে রয়েছে একাধিক কাহিনি। ওড়িশার প্রচীন পুঁথি ব্রক্ষ্মাণ্ডপুরাণ অনুসারে সত্যযুগ থেকে চালু হয়েছে এই রথযাত্রা। সেই সময় ওড়িশার নাম ছিল মালব দেশ। সেখানের রাজা ইন্দ্রদ্যুন্ম স্বপ্নে বিষ্ণু মন্দির গড়ার নির্দেশ পেয়েছিলেন।
প্রতি বছর রথযাত্রার উদ্বোধন করেন সেখানের রাজা। রাজতন্ত্র না থাকলেও এখনও বংশপরম্পরা ক্রমে পুরীর রাজপরিবার আছে। সেখানে নিয়ম অনুসারে, যিনি রাজা উপাধি প্রাপ্ত হন তিনি পুরীর রাজা। তিনি জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাদেবীর রথের সামনে পুষ্পপ্রদান করেন। সুগন্ধী জল ছিটিয়ে সোনার ঝাড়ু রাস্তা পরিষ্কার করেন। তারপর পুরীর রথের দড়িতে টান পড়ে।
পুরীর বর্তমান রাজা হলেন দিব্যসিংহ দেব। তিনি পাঁচ দশকে বেশি সময় ধরে এই পদে আছেন। ১৯৭০ সালে ১৭ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহন করেন তিনি। তার পিতার মৃত্যুর পর তিনি রাজা হন। তিনি রাজা বীরকিশোর দেব এবং রানি সূর্যমণি পাতার জ্যেষ্ঠ পুত্র। প্রতি বছর তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম পালনের পর রথের দড়িতে টান পড়ে। তারপর শুরু হয় জগন্নাথদেবের যাত্রা।
পুরী, মাহেশ, ইস্কনের মন্দিরে মহা ধুমধামের মধ্যে পালিত হয় এই উৎসব। বছর ভর জগন্নাথ ভক্তরা অধীর অপেক্ষায় থাকেন। এবছর ১ জুলাই (১০ আষাঢ়) শুক্রবার পড়েছে রথ। পুরীর পর অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাচীন রথ হল হুগলীর মাহেশের রথ। চৈতন্য দেব মাহেশকে ‘নব নীলাচল’ আখ্যা দেন। মাহেশের রথের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বহু বছরের ইতিহাস।