- Home
- Astrology
- Horoscope
- নব নীলাচল নামে খ্যাত মাহেশ, বাংলার প্রাচীনতম এই রথযাত্রা নিয়ে রইল নানান রোমাঞ্চকর কাহিনি
নব নীলাচল নামে খ্যাত মাহেশ, বাংলার প্রাচীনতম এই রথযাত্রা নিয়ে রইল নানান রোমাঞ্চকর কাহিনি
রাত পোহালেই রথযাত্রা। পুরী, মাহেশ, ইস্কনের মন্দিরে মহা ধুমধামের মধ্যে পালিত হয় এই উৎসব। বছর ভর জগন্নাথ ভক্তরা অধীর অপেক্ষায় থাকেন। এবছর ১ জুলাই (১০ আষাঢ়) শুক্রবার পড়েছে রথ। ৩০ জুন ঘ ৯/৭/৪ এ শুরু হচ্ছে শুভ সময় আর শেষ হচ্ছে ১ জুলাই ঘ ১১/১/৫৬ মিনিটে। উল্টো রথ পড়েছে ৯ জুলাই (১৮ আষাঢ়) শনিবার। পুরীর পর অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাচীন রথ হল হুগলীর মাহেশের রথ। চৈতন্য দেব মাহেশকে ‘নব নীলাচল’ আখ্যা দেন। মাহেশের রথের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বহু বছরের ইতিহাস। রইল সেই ইতিহাসের ঝলক।
| Published : Jun 30 2022, 03:21 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
মাহেশের রথ বাংলার প্রাচীনতম ও ভারতে দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা হিসেবে খ্যাত। কথিত আছে, চতুর্দশ শতাব্দীতে ধ্রুবানন্দ ব্রক্ষ্মাচারী নামে এক ব্যক্তি পুরীতে তীর্থ যাত্রা করেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল জগন্নাথদেবকে ভোগ খাওয়ানোর। কিন্তু, মন্দির কর্তৃপক্ষ তাতে বাঁধা দেন। তার সেই ইচ্ছে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সেই দুঃখে তিনি সেই সময় অশন শুরু করেন।
মহাপ্রভুকে ভোগ খাওয়ানোর ইচ্ছে বহুদিন ধরে তিনি অন্তরে রেখেছিলেন। কিন্তু, তাতে বর্থ্য হয়ে ধ্রুবানন্দ অনশন করেন। তিনি অনশন করে নিজের প্রাণ বিসর্জন করবেন বলে ঠিক করেন। কিন্তু, কথায় আছে ভগবান সঠিক পথ দেখায়। ধ্রুবানন্দের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। পুরীতে জগন্নাথদেবকে ভোগ নিবেদন করতে না পেরে ধ্রুবানন্দ অনশন শুরু করেন।
অনশনের তৃতীয় দিনে ধ্রুবানন্দ স্বপ্নাদেশ পান জগন্নাথ দেবেন। স্বপ্নে প্রভু হুগলী নদীর ধারে মাহেশ বলে একটি জায়গায় জগন্নাথ মন্দির স্থাপনের নির্দেশ দেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেই অনশন ভঙ্গ করে ভগবানের নির্দেশে পথ চলা শুরু করেন ধ্রুবানন্দ। তিনি মাহেশে জগন্নাথ দেবের মন্দির স্থাপন করেন। ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম এবং বাংলার প্রাচীনতম মন্দির এটি।
স্বপ্নে জগন্নাথ দেব তাঁকে বলেন, ধ্রুবানন্দ, বঙ্গদেশে ফিরে যাও। সেখানে ভাগীরথী নদীর তীরে মাহেশ নামে এক গ্রাম আছে। সেখানে যাও। আমি সেখানে একটি বিরাট দারুব্রক্ষ্ম পাঠিয়ে দেব। সেই কাঠে বলরাম, সুভদ্রা ও আমার মূর্তি গড়ে পুজো করে। আমি তোমার হাতে ভোগ খাওয়ার জন্য উদগ্রীব। এই আদেশ পেয়ে ধ্রুবানন্দ মাহেশে আসেন।
ধ্রুবানন্দ মাহেশে এসে সাধনা শুরু করেন। তারপর এক বর্ষার দিনে মাহেশ ঘাটে একটি নিমকাঠ ভেসে আসে। জল থেকে সেই কাঠ তুলে দেব মূর্তি গড়েন তিনি। সেই কাঠ দিয়েই জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রার মুর্তি তৈরি করেন। তিনি নিজের হাতে এই মূর্তি তৈরি করেন। তারপর তিনি জগন্নাথ দেবকে ভোগ নিবেদন করুন। এভাবে পূরণ করেন তাঁর মনের বাসনা।
তবে, সে সময় শ্রীরামপুরের মাহেশ ছিল জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা। এমনকী, নদীতে নিম কাঠ পেতেও দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল ধ্রুবানন্দকে। সেই থেকে মাহেশে জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথ দেব পুজিত হচ্ছেন। বলা হয় সন্ন্যাস নেওয়ার পর নবদ্বীপ থেকে পুরী যাওয়ার পথে মহাপ্রভু মাহেশে এসেছিলেন। তিনি মুগ্ধ হন মাহেশের জগন্নাথ দেবকে দেখে। নাম দেব নব নীলাচল।
১৩৯৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর শহরে মাহেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে রথ উৎসব। বর্তমান মন্দির তৈরি করেছিলেন নারায়ণ চন্দ্র মল্লিক নামে এক ভক্ত। ১৭৫৫ সালে তিনি মন্দির নির্মাণ করেন। প্রতি বছর রথ উৎসবের সময় সেখানে মেলা বসে। শয় শয় ভক্তদের আগমন ঘটে এই মেলায়।
বর্তমান মাহেশের রথটি ১২৯ বছরের পুরনো। ২০ হাজার টাকা ব্যয় করে ১৮৮৫ সালে কৃষ্ণরাম বসু নামে এক ভক্ত এই রথ তৈরির উদ্যোগ নেন। তিনি মার্টন বার্ন কোম্পানিকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। রথের উচ্চতা ৫০ ফুট। ওজন ১২৫ টন। মোট ১২টি লোহার চাকা আছে। দুটি তামার ঘোড়া আছে। এতে রয়েছে ৯টি চূড়া।
রথ মাসির বাড়ি জিটিরোড থেকে দেড় কিলোমিটার। শ্রীরামপুরের গোপীনাথ মন্দির হিসেবে খ্যাত। প্রতিবছর জিটি রোগ ধকে ১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মাসির বাড়ির মন্দিরে রথ যায়। লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীর উপস্থিত থাকেন এই সময়। প্রায় ৮ দিন ধরে চলে উৎসব। উল্টোরথের দিন উৎসব শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ।
এদিকে, জগন্নাথদাম পুরী ঘিরে রয়েছে একাধিক কাহিনি। ওড়িশার প্রচীন পুঁথি ব্রক্ষ্মাণ্ডপুরাণ অনুসারে সত্যযুগ থেকে চালু হয়েছে এই রথযাত্রা। সেই সময় ওড়িশার নাম ছিল মালব দেশ। সেখানের রাজা ইন্দ্রদ্যুন্ম স্বপ্নে বিষ্ণু মন্দির গড়ার নির্দেশ পেয়েছিলেন। তারপরই নানান ঘটনার পর তৈরি হয় পুরীর জগন্নাথ মন্দির।