টি২০ বিশ্বকাপকে লাল কার্ড, সবুজ সঙ্কেত পেয়ে আইপিএলের প্রস্তুতিতে বিসিসিআই
- FB
- TW
- Linkdin
আইসিসির টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্থগিতের সিদ্ধান্তে অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে বিসিসিআই। চলতি বছরে টি-টোয়েন্চি বিশ্বকাপের উইন্ডোতে আইপিএল আয়োজনের বিষয়ে আর কোনও বাধা রইল না ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের। আইসিসির বৈঠকে বিশ্বকাপ স্থগিতের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতেই আইপিএলের জন্য কোমড় বেঁধে ময়দানে নেমে পড়েছে বিসিসিআই কর্তারা।
চলতি বছরের ২৯ মার্চ থেকে হওয়ার কথা ছিল আইপিএল ২০২০। তবে করোনা মহামারির জন্য দেশজুড়ে লকডাউন জারি হওয়ায় টুর্নামেন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। করোনা মহামারির জেরেই টি-২০ বিশ্বকাপ অনিশ্চিত বুঝে বিসিসিআই অক্টোবর-নভেম্বরে আইপিএল আয়োজনের পরিকল্পনা করে। তবে যতক্ষণ না টি-২০ বিশ্বকাপ স্থগিত ঘোষিত হচ্ছিল, ততক্ষণ ভারতীয় বোর্ডের পক্ষে বিশ্বকাপের সময়েই আইপিএল আয়োজনের তোড়জোড় করা সম্ভব হচ্ছিল না।
বিসিসিআই আশা করেছিল যে, সোমবারের বৈঠকেই আইসিসি বিশ্বকাপ নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। বিসিসিআইয়ের আশা পূর্ণ হল শেষমেশ। সোমবারের বৈঠক শেষেই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল জানিয়ে দেয়, এবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে না টি-২০ বিশ্বকাপ। আইসিসির ঘোষণা একপ্রকার প্রকারন্তরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগকে সবুজ সংকেত দিয়ে দিল আইসিসি।
ইতিমধ্যেই দেশে করোনা পরিস্থিতির বাড়বাড়ন্তের কথা বিচার করে বিদেশের মাটিতে আইপিএল করার পরিকল্পনাও স্থির করে ফেলেছেন বিসিসিআই কর্তারা। সেক্ষেত্রে আরব আমিরশাহিকেই বেছে রেখেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। পূর্বের আইপিএল আয়োজনের অভিজ্ঞতার কারণেই আরব দেশকে বেছেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন বিসিসিআই।
আরব আমিরশাহিতে করোনার প্রভাব অনেকটাই কম। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আইপিএলের সমস্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি ওখানে ক্যাম্প করতে পারবেন। বিদেশি ক্রিকেটারদের টুর্নামেন্টে যোগ দিতে খুব একটা অসুবিধা হবে না। হোটেল এবং যাতায়াতও অনেক সুবিধার। সব দিক খতিয়ে দেখে আরব আমিরশাহিতেই আইপিএল হতে চলেছে তা একপ্রকার বলাই যায়। বোর্ড কর্তারা দিন কয়েকের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেন।
আটটি দলের ক্রিকেটারেরা থাকবেন হয়তো দুবাইয়েই। প্রত্যেকটি দলকে আলাদা হোটেলে রাখারই ব্যবস্থা করা হবে। দুবাই থেকে আবু ধাবি বা শারজা যেতে উড়ান ধরতে হবে না। সড়ক পথেই যাওয়া সম্ভব। বিমানবন্দরে যাওয়ার ঝক্কি নেই বলে সংক্রমণের উদ্বেগও কম। আমিরশাহি কর্তারা আবার এমন সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছেন যে, সম্পূর্ণ দর্শকশূন্য মাঠ না-করে যদি কুড়ি শতাংশ হাজিরাও রাখা যায়। এ রকম ইঙ্গিত তাঁরা ভারতীয় বোর্ডের কর্তাদের কাছে দিয়েছেন। তবে সেই সম্ভাবনা নির্ভর করবে করোনা পরিস্থিতি কী দাঁড়াচ্ছে, তার উপরে।
সম্ভাব্য ক্রীড়া সূচিও তৈরি করেছে বিসিসিআই। ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত আইপিএল চলবে। মোট ৬০ টি ম্যাচ ৪৪ দিনে আয়োজন করতে চাইছেন বোর্ড কর্তারা। আরব আমিরশাহির শারজা,দুবাই এবং আবুধাবিতে ম্যাচ আয়োজিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই দিনে দুটি করে ম্যাচ করতে চাইছেন কর্তারা। আরব আমিরশাহী ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকেও গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া গিয়েছে আইপিএল আয়োজনের ব্যাপারে।
আইপিএল হওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট হতেই কোমড় বেঁধে আসরে নেমে পড়েছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সমস্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলি। বিদেশের মাটিতে আইপিএল হলে বিপূল ব্যবস্থাপনা করতে হবে। তারজন্য তোরজোর শুরু করে দিয়েছেন ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির কর্তারা। ক্রিকেটারদের আমিরশাহী উড়িয়ে নিয়ে যেতে চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা থেকে কোন হোটেলে তাঁরা থাকবেন, সবই খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হয়েছে। আসলে করোনা আবহে ক্রিকেটারদের নিয়ে কোনওরকম ঝুঁকি নিতে রাজি নন ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তারা। সেই কারণেই চার্টার্ড ফ্লাইটের চিন্তাভাবনা।
ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন বোর্ড কর্তারা। সব ঠিকঠাক থাকলে আইপিএল ১৩ দিয়েই বিরাট কোহলি মাঠে ফিরতে পারেন। তবে দীর্ঘদিন ক্রিকেটের বাইরে থাকায় প্লেয়ারদের ফিটনেসের বিষয়টিও ভাবাচ্ছে বোর্ড কর্তাদের। তাই আইপিএল শুরুর আগে টিম ইন্ডিয়ার অনুশীলন শিবির করার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের। আহমেদাবাদ কিংবা ধরমশালায় হতে পারে কোহলিদের অনুশীলন শিবির।
ফলে সবকিছুর পরিকল্পনা প্রাথমিক পর্যায়ে তৈরি করে ফেলেছে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড। তৈরি রয়েছে ব্লু প্রিন্টও। এখন শুধু সব পরিস্থিতি বিচার করে ও খতিয়ে দেখে আইপিএলের সূচি সরকারিভাবে ঘোষণার অপেক্ষায় বিসিসিআই। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে আইপিএলের আকাশের যাবতীয় কালো মেঘ কেটে গিয়েছে। এখন শুধু পরিষ্কার চকচকে আকাশে ২২ গজে বল গড়ানোর অপেক্ষা।