- Home
- Sports
- Cricket
- দুবাইয়ের চাকরি ছেড়ে CSK-র হয়ে খেলতে এসেছিলেন - IPL কীভাবে গরীব থেকে কোটিপতি করল এই ক্রিকেটারদের
দুবাইয়ের চাকরি ছেড়ে CSK-র হয়ে খেলতে এসেছিলেন - IPL কীভাবে গরীব থেকে কোটিপতি করল এই ক্রিকেটারদের
বিশ্বের সবথেকে ধনী ক্রিকেট বোর্ড হল বিসিসিআই (BCCI)। আর তাদের সবথেকে দামি টুর্নামেন্ট হল আইপিএল। একে বলাই হয় ক্রোড়পতি লিগ। কাজেই, এই লিগে খেলা ক্রিকেটাররা যে কোটিপতি হবেন, তা বলাই বাহুল্য। তবে আইপিএল খেলতে আসার আগে কিন্তু, এঁদের মধ্যে অনেককেই লড়তে হয়েছে চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে। কেউ মুম্বই শহরে ফুটকা বিক্রি করে পেটে ভাত তুলেছেন। কেউ বা সারাদিন ৫ টাকার ম্যাগি খেয়ে থেকেছেন। কেউ বা ছিলেন দুবাইয়ের স্টোরকিপার। আইপিএল - ২০২১ (IPL 2021) প্রায় শেষের পথে। আসুন দেখে নেওয়া যাক এই টুর্নামেন্ট কীভাবে বদলে দিয়েছে এই ১০ ক্রিকেটারের জীবন -
| Published : Oct 10 2021, 01:35 PM IST / Updated: Oct 17 2021, 11:26 AM IST
- FB
- TW
- Linkdin
বর্তমানে ভারতের এক নম্বর জোরে বোলার জসপ্রিত বুমরার ছেলেবেলাটা কিন্তু বেশ কষ্টে কেটেছে। তাঁর যখন মাত্র ৫ বছর বয়স ছিল, তখনই মৃত্যু হয়েছিল তাঁর বাবা জসবীর সিং। স্কুল শিক্ষিকা মা দলজিৎ বুমরাই তাঁকে বড় করেন। তাঁর পক্ষে বুমরার ক্রিকেট খেলার খরচ চালানো সম্ভব ছিল না। সেই সময় বুমরার একটিই জার্সি ছিল। খেলার পর বাড়ি এসে তা তিনি কেচে দিতেন, যাতে পরের দিন সেটি আবার পরতে পারেন। কিন্তু ২০১৩ সালে বদলে গিয়েছিল বুমরার জীবন। মাত্র ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে তাঁকে দলে নিয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। একন প্রতি মরসুমে বুমরার উপার্জন ৭ কোটি টাকা করে। বুমরার বর্তমান সম্পত্তির মোট মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
আইপিএল খেলার আগে নটরাজনের পরিবারের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল, যে মাঝে মাঝে তাঁদের না খেয়েই থাকতে হত। তামিলনাড়ুর সালিমের এক গ্রামে থাকে তাঁর পরিবার। বাবা ছিলেন এক কারখানার শ্রমিক। মা চালাতেন একটি ফাস্টফুডের দোকান। নটরাজনই পরিবারের ৬ ভাইবোনের মধ্যে সবথেকে বড়। কাজেই পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার চাপ ছিল তাঁর উপর। আর তা কাটিয়ে দিয়েছিল আইপিএল। ২০১৭ সালে পাঞ্জাবের ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁকে ৩ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছিল। এখন তিনি সানরাইজার্স হায়দরাবাদে খেলেন। প্রতি মরসুমে তাঁর উপার্জন ৪ কোটি টাকা করে।
আইপিএল ২০২১-এর অন্যতম আবিষ্কার রাজস্থান রয়্যালসের জোরে বোলার চেতন সাকারিয়া। ছোটবেলা থেকেই দারুণ দারিদ্রের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন তিনি। বাবা ছিলেন লড়ি চালক। ক্রিকেট খেলার খরচ চালাতে চেতন, তাঁর কাকার স্টেশনারি দোকানে কাজ করতেন। তাঁদের বাড়িতে টিভিও ছিল না, প্রতিবেশীর বাড়ি গিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখতেন সাকারিয়া। ২০২১ সালের নিলামে আরআর তাঁকে ১.২ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছিল। তবে তারপরও তাঁর জীবনে এসেছিল ট্র্যাজিক মোড়। আত্মহত্যা করেছিলেন তাঁর দাদা। তবে, আইপিএল চেতন সাকারিয়ার জীবনে স্বাচ্ছন্দ এনে দিয়েছে।
আইপিএল এবং ভারতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ইতিমধ্য়েই নিজের ছাপ রেখেছেন জোরে বোলার মহম্মদ সিরাজ। তবে তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে খুবই সমস্যার মধ্য দিয়ে। তাঁর বাবা মহম্মদ ঘউস ছিলেন হায়দরাবাদের একজন অটোরিক্সা চালক। সারাদিন খেটেও পরিবার চালানোর মতো যথেষ্ট উপার্জন তাঁর ছিল না, সিরাজের ক্রিকেটের জন্য অর্থ প্রদান তো দূরের কথা। ক্রিকেট থেকে সিরাজের প্রথম উপার্জন ছিল ৫০০ টাকা। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ বোলিং তাঁর সামনে আইপিএল-এর দরজা খুলে দিয়েছিল। ২০১৭ সালের আইপিএল-এ সানরাইজার্স হায়দরাবাদ তাঁকে ২.৬ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছিল। পরের মরসুম থেকে তিনি খেলেন আরসিবি দলে। প্রতি বছরে তাঁকে ২.৬ কোটি টাকা করেই দেয় আরসিবি।
উত্তরপ্রদেশে জন্মানো যশস্বী জয়সওয়ালের বাবার একটি হার্ডওয়্যারের ছোট দোকান ছিল। ছোট থেকেই যশস্বী ঠিক করে নিয়েছিলেন, তিনি ক্রিকেটারই হবেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি মুম্বইয়ে কারা কাছে চলে গিয়েছিলেন। তিনি যশস্বীকে একটি দুধের দোকানে কাজু ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। সারাদিন স্কুলের পড়া এবং ক্রিকেট অনুশীলনের পর দোকানে এসে কাজ করতে গিয়ে মাঝে মাঝেই ঘুমিয়ে পড়তেন ছোট্ট যশস্বী। যার জন্য দোকানের মালিক তাঁকে বের করে দিয়েছিল। এরপর মুম্বইয়ের রাস্তায় তিনি ফুচকা বিক্রি করে খরচ চালাতেন, থাকতেন মুম্বইয়ের রাস্তাতেই। ২০১৩ সালে সৌভাগ্যক্রমে তিনি কোচ দ্বালা সিং-এর নজরে আসেন। তিনি যশস্বীকে শুধু কোচিং করাই শুরু করেন না, তাঁকে নিজের বাড়িতে এনে তোলেন। ২০২০ সালের অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে যশস্বীর দুর্দান্ত পারফরম্য়ান্সের পর ২০২১-এর আইপিএল নিলামে তাঁকে ২.৪ কোটি টাকা দিয়ে দলে নেয়। মুম্বইয়ে তিনি এখন একটি দারুণ ফ্ল্য়াট কিনেছেন।
পাণ্ডিয়া ভাইদের, বিশেষ করে হার্দিককে এখন গোটা ক্রিকেট বিশ্ব চেনে। দারুণ বিলাসবহুল জীবন যাপন করেন তাঁরা। তবে আইপিএল-এ সুযোগ পাওয়ার আগে তাদের অবস্থা এমনই ছিল, যে মাঝে মাঝে কয়েক মাস ধরে তাঁদের শুধু ম্য়াগি খেয়ে থাকতে হয়েছে। সুরাতে তাঁদের বাবার একটা ছোট ব্যবসা ছিল। কিন্তু দুই ভাইয়ের ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তিনি সেসব ছেড়ে সপরিবারে বরোদায় চলে এসেছিলেন। তারপর থেকে তাঁর আর কোনও নির্দিষ্ট রোজগার ছিল না। সেই সময়ই মাঝে মাঝে একটা ৫ টাকার ম্যাগিই ছিল হার্দিক ও ক্রুনালের সারাদিনের খাবার। কিন্তু ২০১৫ সালে হার্দিক এবং ২০১৬ সালে ক্রুনাল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকে আর তাঁদের পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
জাদেজা আজ কোটি-কোটি টাকার মালিক এবং থাকেন একটি বিলাসবহুল বাংলোতে। কিন্তু, তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে বেশ কষ্টে। তাঁর বাবা ছিলেন একটি বাড়ির দারোয়ান, তাতে কোনওক্রমে তাঁদের সংসার চলত। কিন্তু, ক্রিকেটের স্বপ্ন ছাড়েননি রবীন্দ্র জাদেজা। ২০০৯ সালেই তিনি ভারতীয় দলে কেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। ২০১১১ সালে রাজস্থান রয়্যালস দলের হয়ে আইপিএল গ্রহে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। ২০১২ সালের পর থেকে তিনি একটানা সিএসকে দলের সদস্য। বর্তমানে তাঁর সম্পত্তির মোট মূল্য প্রায় ৫৮ কোটি টাকা।
২৩ বছরের নাইট, রিঙ্কু সিং-এর বাবা বাড়ি বাড়ি গ্যাসের সিলিন্ডার ডেলিভারি করতেন। মাসে বেতন ছিল মাত্র ৬০০০ টাকার মতো। এতে কোনওক্রমে তাঁদের সংসার চলত। একটু বড় হওয়ার পর তাঁর দাদা অটো চালানো শুরু করেছিলেন। আরেক দাদা এক কোটিং সেন্টারে পিওনের চাকরি নেন। শত কষ্টের মধ্যেও রিঙ্কু অবশ্য ক্রিকেট খেলা ছাড়েননি। অবশেষে ২০১৭ সালে তাঁর সেই প্রচেষ্টা সাফল্য পায়। ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে তাঁকে কিনেছিল পাঞ্জাবের ফ্র্যাঞ্চাইজি। পরের মরসুমে কেকেআর তাঁকে দলে সামিল করে ৮০ লক্ষ টাকা দিয়ে। ফলে এখন রিঙ্কুর পরিবারের মুখে হাসি ফুটেছে।
আইপিএল-এ মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, গুজরাট লায়ন্স এবং দিল্লি ক্যাপিটালস দলে খেলেছেন নাথু সিং। রাজস্থানে তাঁর বাবা একটি ওয়্যার ফ্য়াক্টরিতে শ্রমিক ছিলেন। তাঁর বাবার রোজগারের টাকায় তাঁদের পরিবারের কোনওরকমে দুইবেলা খাওয়ার জুটত। তবে নাথু ক্রিকেট ছাড়েননি, আর তাই তাঁর পরিবারের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। ২০১৬ সালে নিজের প্রথম আইপিএল মরসুমেই তিনি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কাছ থেকে ৩.২ কোটি টাকা পেয়েছিলেন। তবে তারপর থেকে তাঁর মূল্য কমেছে। গুজরাট লায়ন্স তাঁকে পরের মরসুমে কিনেছিল ৫০ লক্ষ টাকায়, তার পরের মরসুমে দিল্লি কিনেছিল ২০ লক্ষ টাকায়।
কেরলের রাজ্য দলের একসময়ের নিয়মিত সদস্য কেএম আসিফ-কে হয়তো অনেকেই চেনেন না। কারণ চেন্নাই সুপার কিংসের দলের হয়ে তিনি হাতে গোনা মাত্র ম্যাচে খেলেছেন। তবে আইপিএল তাঁর দারিদ্র্য দূর করেছে। আসিফের বাবা ছিলেন শ্রমিক। মা গৃহকর্ত্তী। তাঁর ভাই ছিলেন মানসিক প্রতিবন্ধী, আর বোনের মস্তিষ্কে টিউমারের অপারেশন করানো প্রয়োজন ছিল। এই কারণেই দুবাইয়ে একটি বটলিং প্ল্যান্টে স্টোরকিপার হিসেবে চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, এই দারুণ অর্থাভাবের মধ্যেও ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসার টানে তিনি এক দারুণ বড় জুয়া খেলেছিলেন। দুই-দুইবার সেই চাকরি ছেড়ে ফিরে এসেছিলেন কেরলে, রাজ্যদলের হয়ে খেলার জন্য। আর তারপরই ২০১৮ সালের আইপিএল নিলামে তাঁকে ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে কেনে সিএসকে। এখনও সে সিএসকে দলেরই সদস্য। আবার সে দুবাই গিয়েছে, চাকরি করতে নয়, ক্রিকেট খেলতে। গত ৩ বছরে মাত্র ২টি ম্যাচ খেলে ৩টি উইকেট নিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। আইপিএল রেকর্ড তত ভাল না হলেও, তাঁর প্রয়োজনীয় অর্থ তিনি পেয়ে গিয়েছেন। বোনের অপারেশন হয়েছে, ফুটো চালের বাড়ি থেকে তাঁর পরিবার উঠে এসেছে একটি নতুন বাড়িতে আছে।