- Home
- Entertainment
- Bengali Cinema
- চোখের সামনে ধুলিসাৎ ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজরিত অট্টালিকা, সইতে না পেরে ঢলে পড়লেন বিসমিল্লা
চোখের সামনে ধুলিসাৎ ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজরিত অট্টালিকা, সইতে না পেরে ঢলে পড়লেন বিসমিল্লা
- FB
- TW
- Linkdin
১৯৩৬ সাল থেকে বিসমিল্লা বেনারসের যে বাড়িতে থাকতেন, শুধু বিসমিল্লাই নয়, ওই বাড়িতে তার আগে থাকতেন ওস্তাদ রেহমত খাঁ সাহেব। গত ১২ অগাস্ট সেই স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির অংশবিশেষ ভেঙে গুড়িয়ে দিতে কারও হাত একবারও কেঁপে ওঠেনি।
বাধা দিতে এগিয়ে আসেনি পুলিশ প্রশাসন। কারণ ওই বাড়িকে কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স তৈরি করা হবে। দেশজো়ড়া বিসমিল্লা ভক্তরা চেয়েছিলেন, সানাইবাদকের স্মৃতি বিজরিত এই বাড়ি মিউজিয়াম হোক। হেরিটেজ তকমা পাক বিসমিল্লার ভিটে। কিন্তু ওই চাওয়াটুকুই সার, এগিয়ে আসেনি উত্তরপ্রদেশ সরকার বা কেন্দ্র সরকার। উলটে ভাঙা হল বিসমিল্লার রেওয়াজ ঘর।
যে বাড়িতে বিসমিল্লা রেখে গিয়েছেন তাঁর সুর-সাধনার অসংখ্য মূল্যবান স্মৃতিচিহ্ন। যে-কোনো সঙ্গীতপ্রেমীর কাছে যা অমূল্য-রতন। তা ভেঙে ফেলা হল। ফেলে দেওয়া হল তাঁর ব্যবহৃত আসবাব, জিনিসপত্র।
ওই বসতভিটের সঙ্গে এক অন্য মায়ায় জড়িয়ে ছিলেন বিসমিল্লা। প্রায় সারাটা জীবনই কাটিয়েছিলেন এই বাড়িতে। আমেরিকায় গিয়ে থাকবার প্রস্তাব এসেছিল। ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন আমারিকায় তিনি এমন গঙ্গা পাবেন না।
সূর্য উঠলে এই বাড়ি থেকেই পায়ে হেঁটে গঙ্গার ঘাটে যেতেন। সকালের শান্ত বাতাসে চলত কয়েক ঘণ্টা সুরের চর্চা। বারানসির গঙ্গার তীরে বেড়ে ওঠা বিসমিল্লাহ খাঁর মনপ্রাণও ছিল নদীর মতোই বিশাল উদার। ব্যক্তি জীবনেও অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন। স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন রিকশা বা সাইকেলে চড়তে।
আমৃত্যু তিনি বারানসির গঙ্গার তীরে নিভৃত পল্লিতে সাধারণ মানুষের সুখ, দুঃখের সঙ্গী হয়েই থেকেছেন। একজন ধর্মপ্রাণ ও নিষ্ঠাবান মুসলমান হয়েও হিন্দুদের মন্দিরে মন্দিরে সানাই বাজিয়েছেন। এক সময় বিশ্বনাথ মন্দিরে প্রাত্যহিক কাজকর্ম শুরু হত বিসমিল্লাহ খাঁর সানাই দিয়ে।
গরিব ছিন্নমূল শিশুদের জন্য তিনি ছিলেন আকাশের মতো উদার। অকাতরে বিলিয়ে দিতেন যথাসাধ্য। প্রতিদিন তার বাড়িতে বিসমিল্লাহ হোটেলে শতাধিক গরিব ও অনাথ শিশুরা খাওয়া দাওয়া করত। কিংবদন্তি সানাই-বাদকের সেই ভিটে-মাটি গুঁড়িয়ে দিয়ে ঐতিহ্য, ইতিহাসের স্মৃতিচিহ্ন মুছে দেওয়ার চেষ্টা হল।
এর আগে খোয়া গিয়েছিল তাঁর রুপো বাঁধানো সানাই। সব সময় ওই সানাইয়ে সুর তুলতেন না ওস্তাদ। কেবলমাত্র মহরম বা বিশেষ কোনও অনুষ্ঠানেই নাকি তা বাজাতেন। তাঁর পাঁচটি সানাই চুরি যায়। সানাইয়ের সঙ্গে গায়েব হয়ে যায় সংগ্রহে রাখা একটি শংসাপত্র-সহ দুটো সোনার চুড়ি।
বিসমিল্লা খানের মৃত্যুর পর থেকে প্রত্যেকেরই দাবি ছিল, ওস্তাদের স্মরণে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা হোক। তাতে প্রদর্শিত হোক বিসমিল্লার বিভিন্ন স্মারক। বছরের পর বছর পেরিয়ে সে আশা তো পূর্ণ হলই না বরং যে স্মৃতিটুকু সম্বল ছিল সেটুকুও ছাই হল।
এই বাড়িতে এখন বিসমিল্লা খানের ছেলে প্রয়াত মেহতাব হুসেনের ছেলেরা থাকেন। তাঁদের একজন জানিয়েছেন, আর্থিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এই বাড়ি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। বাড়ির এক অংশে তিনতলা কমার্শিয়াল অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করা হবে এবং অপর অংশে বিসমিল্লা খানের মিউজিয়াম তৈরি করা হবে। যেখানে তাঁর সমস্ত ব্যক্তিগত জিনিস, পুরস্কার, সার্টিফিকেট রাখা থাকবে। কিন্তু অভিঙ্গতা বলে কার্যত কোনোদিন আর তা বাস্তবায়িত হয়নি। এক্ষেত্রেও তার অন্যথা ঘটবে না।