বুন্দেসলিগায় ফুল ফুটিয়েছেন এই বাঙালি কোচ,জানুন রবিন দত্তের কাহিনী
- FB
- TW
- Linkdin
দমদমে আদি বাড়ি হলেও তাঁর জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা জার্মানির কোলন শহরে। ১৯৬৫ সালর ২৪ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন রবিন দত্ত। ষাটের দশকের শুরুতে কলকাতা ছেড়ে স্টুটগার্টে পাকাপাকি ভাবে চলে আসা সব্যসাচী দত্ত ও তাঁর জার্মান স্ত্রী রোজমেরি। পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবলও মন দিয়ে ফুটবল খেলাটাও চালিয়ে যান ছোট্ট রবিন।
ছোট বেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি অগাধ ভালবাসা রবিন দত্তের। স্বপ্ন ছিল জার্মানির জাতীয় দলের হয়ে ফুটবল খেলা। কিন্তু ফুটবলার রবিন দত্ত তার কেরিয়ারে তেমন একটা সাফল্য পাননি। খেলেছেন জার্মানির পঞ্চম,ষষ্ঠ, সপ্তম ডিভিশনের ক্লাবে। জার্মানির জাতীয় দলের খেলার স্বপ্ন পূরণ হবে না বুঝতে পেরে মাত্র তিরিশ বছর বয়সেই খেলার পাশাপাশি কোচিং শুরু করেন রবিন দত্ত।
ফুটবলারের থেকে কোচ হিসেবে বেশি সফল রবিন দত্ত। ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত টিএসজি লিয়নবার্গের প্লেয়ার ও কোচ হিসেবে কাজ করেছেন রবিন দত্ত। সেটাই তেরা কোচিং কেরিয়ারের শুরু।
তারপর ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত টিএসএফ ডিটজিনগেনের কোচিং করান দবিন দত্ত। কোচ হিসেবে সাফল্যের শুরু সেখান থেকেই। তারপর ২০০৩ থেকে ২০০৭ পর্যন্ট স্টুগার্ট কিকার্সের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। তারপর ২০১১ পর্যন্ত এসসি ফিয়েরবার্গ ক্লাবকে কোচিং করিয়েছেন রবিন দত্ত।
তিনি বুন্দেসলিগা দলের ওয়ার্ডার ব্রেমেন এবং বায়ার লেভারকুসেনের কোচিং করিয়েছেন। ২০১১-১২ মরসুম ভার্ডার ব্রেমেনের কোচিং করান রবিন দত্ত। তারপর ২০১৩-১৪ সালে কোচিং করান বায়ার লেভারকুসেনের।
ভারতীয় ফুটবল প্রেমীরা রবিন দত্তকে চেনেন যখন তার কোচিংয়ে বায়ার লেভারকুসেন চ্যাম্পিয়নসলিগে খেলে। তাঁর কোচিংয়ে খেলেছেন জার্মানি জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল বালাকের মতো তারকা। গ্রুপ পর্বে হারিয়েছেন চেলসিকে। জার্মানি ফুটবল ফেডারেশনের স্পোর্টস ডিরেক্টরও ছিলেন তিনি।
২০১৫ সালে ভিএফবি স্টুর্টগার্টের বোর্ডের প্রতিনিধি হন রবিন দত্ত। কিন্তু ৪০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার বুন্দেসলিগা থেকে অবনমন হওয়ায় ২০১৬ সালে বরখাস্ত করা হয় রবিন দত্তকে।
কেরিয়ারের শেষের দিকে ২০১৮ সালে ভিএফএল বোখামের কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন রবিন দত্ত। এক বছর সেই ক্লাবের দায়িত্ব সামলানোর পর ২০১৯ সালে অবসর ঘোষণা করেন বুন্দেসলিগার একমাত্র বাঙালি কোচ।
নিজের কোচিং কেরিয়ারে মোট ৪০৪টি ম্যাচে কোচিং করিয়েছেন রবিন দত্ত। যেখানে ১৫টি ম্যাচে জয় পেয়েছেন, ড্র হয়েছে ১০৩টি, হারের মুখ দেখতে হয়েছে ১৪৭ টি ম্যাচে। শতাংশের বিচারে ৩৮ শতাংশ ম্যাচে জয় পেয়েছেন রবিন দত্ত।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেলেও বাঙালি খাদ্যের প্রতি টানটা এখনও থেকে গিয়েছে জার্মানির বাঙালি কোচের। তিনি জানিয়েছেন, সপ্তাহে ছ’দিন আমি জার্মান। তবে রবিবার বাঙালি হয়ে যাই। আগে বাবা জীবিত থাকাকালীন বাঙালি রান্না করতেন। এখন আমার ভরসা এখানকার ভারতীয় রেস্তোরাঁগুলোই। জন্মদিনেও বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করে বাঙালি খাওয়ার খাওয়ান রবিন দত্ত।
বর্তমানে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন রবিন দত্ত। তিন দশক আগে শেষবার কলকাতায় এসেছিলেন তিনি। সুযোগ পেলে ফের কলকাতায় আসার পরিকল্পনাও রয়েছে তার। অবসর জীবনেও প্রায়শই প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলারদের বাড়ি যান, অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন, কার কী সমস্যা হচ্ছে তা অনুসন্ধান করে মেটানোর চেষ্টা করেন। কারণ ফুটবল অন্ত প্রাণ রবিন দত্ত।