'রামগরুড়ের ছানা' নয়, হাসুন প্রাণ খুলে, দ্রুত কমবে ওজন
"রামগরুড়ের ছানা হাসতে তাদের মানা, হাসির কথা শুনলে বলে, হাসব না–না, না–না !" সুকুমার রায়ের এই ছড়া প্রায় সবারই জানা। কিন্তু, বাস্তবে যদি এমন মানুষ দেখা যায় তাহলে খুবই সমস্যার। তবে এমন মানুষ যে নেই তা কিন্তু একেবারেই নয়। এই ধরনের মানুষ অনেক দেখতে পাওয়া যায়। আর এদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা খুবই কঠিন। কারণ হাসতে না জানলে সেই মানুষের সঙ্গে বেশিক্ষণ কথা বলা যায় না। আর শুধু তাই নয়, হাসি যে শরীরের পক্ষে কতটা ভালো তা হয়তো অনেকেই জাননেন না। হাসি একাধিক রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। ফলে যাঁরা হাসতে জানেন না বা হাসি খুব একটা পছন্দ করেন না, তাঁদের জীবনে বড় সমস্যা আসতে পারে ভবিষ্যতে।
| Published : Mar 29 2022, 02:47 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
হাসতে টাকা খরচ হয় না, তবুও মানুষের হাসতে যেন গায়ে জ্বর আসে। আর তার ফলে স্ট্রেসের মাত্রাও বাড়ছে দিন দিন। যার জন্য হাসি আমাদের থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। কিছুতেই আর হাসি পাচ্ছে না। কোনও কিছুই আর বিশেষ ভালো লাগছে না।
ভালো না লাগলেও হাসা উচিত। না হলে শরীরে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ হাসি যে আমাদের শরীরের উন্নতিতে কতটা সাহায্য করে তা ভাবতেও পারবেন না। আসলে হাসি আপনার জীবনের সব খারাপ পরিস্থিতিকে একেবারে ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়। ফলে হাসি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই কোষটির শক্তি যত বাড়তে থাকে, তত শরীর ভিতর থেকে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রোগের আশঙ্কা একেবারেই কমে যায়। আর টি-সেলের ক্ষমতা বাড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হল মন খুলে হাসা। এতে টি-সেলের কর্মক্ষমতা বাড়তে থাকে।
যখনই দেখবেন রাগ, হতাশা বা দুঃখ মনকে ঘিরে ধরেছে, তখনই এমন কিছু করবেন যাতে খুব হাসি পায়। সেই সময় হাসির কোনও সিনেমাও দেখতে পারেন। তাহলেও উপকার পাবেন। কারণ, মন যখন ঠিক থাকে না, তখন মানসিক চাপ কমাতে হাসিই একমাত্র দাওয়াই হতে পারে।
হাসার সময় শরীরে ‘ফিল গুড’ হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই হরমোনগুলি নানাভাবে শ্বেত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। তার জেরেই দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে থাকে। আর তার ফলে রোগ ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। তাই সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।
যখন আমরা হাসি, তখন ফুসফুস প্রসারিত হয় এবং আমাদের ফুসফুস বিশুদ্ধ অক্সিজেনে ভরে ওঠে। এমনটা যত হতে থাকে তত সারা শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ে। ফলে নানারকম রোগের প্রকোপও হ্রাস পায়। আর তার জন্য ফুসফুসের কর্মক্ষমতাও বাড়ে।
দেহে জমতে থাকা ক্লান্তি, কষ্ট এবং স্ট্রেস এক মুহূর্তে কমে যায় হাসির মাধ্যমে। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হাসির প্রভাব আমাদের শরীরে প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট পর্যন্ত থাকে। ফলে শরীর ভালো রাখার জন্য হাসি মাস্ট।
বেশি হাসলে ব্লাড প্রেসার কমে। শুধু তাই নয়, হার্টের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। হাসার সময় রক্তনালীগুলি প্রসারিত হয়। ফলে সারা দেহে রক্ত প্রবাহ বেড়ে গিয়ে শরীর একেবারে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তার ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। পাশাপাশি মানসিক চাপও পালিয়ে যায়। আর হাসির সময় শরীরে এন্ডোরফিন হরমোনের ক্ষরণ হয়। সেটাই স্ট্রেসকে কমাতে সাহায্য করে।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, হাসার সময় আমাদের শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত ক্যালোরি বিপুল পরিমাণ বার্ন হতে থাকে। শুধু তাই নয়, এই সময় পেটেও খুব চাপ পড়ে। ফলে বেশি হাসলে কমে যায় ওজনও। গবেষকরা জানিয়েছেন, ১০০ বার হাসি ১০ মিনিট নৌকা চালানো কিংবা ১৫ মিনিট সাইকেল চালানোর সমান। শারীরিক সঞ্চালনের কারণে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। রক্তে সংযুক্ত হয় বেশি পরিমাণ অক্সিজেন।
তবে মুখ চেপে হাসলে কোনও লাভই হবে না। হাসতে হবে প্রাণ খুলে। তাই বেশি বছর বাঁচতে, ভালো থাকতে অবশ্যই হাসুন। দেখবেন সব রোগ পালিয়ে যাবে, তার সঙ্গে ভালো থাকবে মনও।