প্রতিরক্ষামন্ত্রকের সামনে হাজির নতুন বিপদ, বায়ুসেনার চাকরি ছাড়ছেন একের পর এক পাইলট
তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইনে হাত ধরে প্রকাশ্যে এল এক চাঞ্চল্যকর বিষয়। সেই তথ্য দেশের জন্য উদ্বেগজনকই শুধু নয়, যথেষ্ট দুঃশ্চিন্তারও। সম্প্রতি বায়ুসেনার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ১০ বছরে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন ৭৯৮ জন পাইলট। মোদী সরকারের জমানায় ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পাইলট চাকরি ছেড়েছেন।
- FB
- TW
- Linkdin
চিনের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদ অব্যাহত। অন্যদিকে দেশের পশ্চিমভাগে প্রতিবেশী পাকিস্তানের চক্রান্ত তো চলছেই। এরমধ্যেই বেসুরো বাজছে নেপালও। দেশের বিভিন্ন সীমান্তে যখন শক্রুপত্রের সক্রিয়তা বাড়ছে তখনি সামনে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সামরিক ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণে উদ্যোগী নিয়েছে ভারত সরকার। বায়ুসেনার হাত মজবুত করতে ফ্রান্স থেকে রাফাল যুদ্ধবিমানও ইতিমধ্যে এসে গিয়েছে ভারতে। কিন্তু প্রতিবছপ বায়ুসেনার পাইলটরা যে ভাবে চাকরি ছাড়ছেন, সেটাই এখন চিন্তার সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের।
সাম্প্রতিক সময়ে ঠিক কত জন পাইলট বায়ুসেনার চাকরি ছেড়েছেন, তা জানতে আরটিআই করেছিল একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম। সেইআরটিআইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বায়ুসেনার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ১০ বছরে চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন ৭৯৮ জন পাইলট।
অর্থাৎ বছরে গড়ে ৮০ জন পাইলট বায়ুসেনার চাকরি ছেড়েছেন। মোদী সরকারের জমানায় ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পাইলট চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।
বায়ুসেনার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ১০০ জন এবং ২০১৭-য় ১১৪ জন পাইলট ইস্তফা দেন। অবসরের বয়স হওয়ার আগে ২০১৫ সালে ৩৭ জন পাইলট পদত্যাগ করেন, গত এক দশকে যা সর্বনিম্ন।
সেনার পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় জন তথ্য আধিকারিক এস কে ওঝা জানিয়েছেন, ‘২০১০ সালে ৯৩ জন, ২০১১ সালে ৮৯ জন, ২০১২ সালে ৬৮ জন, ২০১৩ সালে ৫৪ জন, ২০১৪ সালে ৬২ জন, ২০১৫ সালে ৩৭ জন, ২০১৬ সালে ১০০ জন, ২০১৭ সালে ১১৪ জন, ২০১৮ সালে ৯০ জন ও ২০১৯ সালে ৯১ জন পাইলট চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন। অর্থাৎ ৭৯৮ জন পাইলট বায়ুসেনা ছেড়ে চলে গিয়েছেন।’
বায়ুসেনায় পাইলটের ঘাটতি রয়েছে, এ কথা আগেই রাজ্যসভায় জানিয়েছিল সরকার। ২০১৮-র ১ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভায় সরকারের তরফে জানানো হয়, বায়ুসেনায় ৪ হাজার ২৩১টি পাইলট পদ রয়েছে। কিন্তু সেই সময়েই বায়ুসেনায় পাইলটের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৮৫৫। অর্থাৎ তখনই নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে ৩৭৬ জন পাইলট কম ছিলেন। তার পর ২০১৮ এবং ২০১৯-এ যথাক্রমে ৯০ ও ৯১ জন পাইলট ইস্তফা দিয়েছেন।
ঠিক কী কারণে দলে দলে পাইলটরা বায়ুসেনা থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন, তা খতিয়ে দেখতে দু’বছর ধরে বায়ুসেনার অন্দরে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। গত মে মাসের শুরুতে তার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে।
সেখান থেকে জানা যায়, ৩২ শতাংশ পাইলট কাজের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নন। ২৫ শতাংশের ধারণা, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা এর চেয়ে ভাল। ঘন ঘন জায়গা বদলানোয় সমস্যা হচ্ছে বলে জানান ১৯ শতাংশ। কেরিয়ারে উন্নতির সম্ভাবনা তেমন নেই বলেও জানান ১৭ শতাংশ পাইলট। ৭ শতাংশ পাইলট আবার বেতনে সন্তুষ্ট নন।
পরিসংখ্যান বলছে, নরেন্দ্র মোদী দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরে চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন ৪৯৪ জন পাইলট। ইস্তফা দেওয়া পাইলটদের মধ্যে ২৮৯ জনকে বেসরকারি বিমান সংস্থায় যোগ দেওয়ার জন্য ‘নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা ‘এনওসি’ দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বায়ু সেনার জন তথ্য আধিকারিক। তবে কোন-কোন সংস্থায় ওই পাইলটরা যোগ দিয়েছেন, সে সম্পর্কে কিছু জানান হয়নি।
সূত্রের খবর, মূলত বেতন বৈষম্যের কারণেই বায়ু সেনার চাকরিতে ইস্তফা দিচ্ছেন পাইলটরা। যেখানে বায়ু সেনায় একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ পাইলট ২ লক্ষ টাকা বেতন পান, সেখানে বেসরকারি সংস্থায় একজন দক্ষ পাইলট ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা বেতন পান। আর্থিক বঞ্চনার কারণেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর চাকরিতে ইস্তফা দেওয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাবছেন না।