দূষণ কেড়ে নিচ্ছে ভারতীয়দের আয়ু, ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে ৯ বছর - বিপর্যয়ের গ্রাসে দেশ
গড়ে নয় বছর করে আয়ু হারাচ্ছেন প্রায় ৪০ শতাংশ ভারতীয়। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক নতুন গবেষণায় এমনটাই দাবি করা হয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে, দিল্লিসহ মধ্য, পূর্ব এবং উত্তর ভারতের বাসিন্দারা। কারণ, বায়ুদূষণ। একেবারেই আশা নেই, নাকি কোওভাবে এখনও দূষণ থেকে মুক্তি মিলতে পারে? ঠিক কী বলছেন গবেষকরা?
- FB
- TW
- Linkdin
এই গবেষণায় জনানো হয়েছে, মধ্য, পূর্ব এবং উত্তর ভারতের প্রায় ৪৮ কোটি বাসিন্দাকে উল্লেখযোগ্যরকম উচ্চ দূষণের মাত্রা সহ্য করতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভারতের উচ্চ বায়ু দূষণযুক্ত এলাকার সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভৌগলিকভাবে ব্যাপকভাবে প্রসারিত হচ্ছে। যেমন মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশের উপরোক্ত অঞ্চলের মধ্যে না পড়লেও, এখন এই দুই রাজ্যেরও মানুষের গড় আয়ু ২.৫ থেকে ২.৯ বছর করে কমে গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, তাঁরা প্রথমে বিভিন্ন স্তরের দীর্ঘমেয়াদী বায়ু দূষণের সংস্পর্শে আসা মানুষদের স্বাস্থ্যগত তথ্যের তুলনা করেছেন। সেই তুলনামূলক গবেষণার ফলাফল ভারতের বিভিন্ন স্থানের বায়ু দূষণের মাত্রা অনুযায়ী প্রয়োগ করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ভারতে যে দূষণের মাত্রা ছিল, তা অব্যাহত থাকলে উত্তর ভারতের বাসিন্দারা নয় বছরেরও বেশি আয়ু হারাতে চলেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার অনুযায়ী বাতাসে গড় পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম-এর ঘনত্ব থাকা উচিত প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম। ২০১৯ সালে, ভারতের গড় পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম-এর ঘনত্ব ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭০.৩ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আদর্শ পিএম ঘনত্বের সাত গুণেরও বেশি। বলাই বাহুল্য এই দূষণের মাত্রাটা ছিল বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ।
তবে শুধু ভারতই নয়, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বাংলাদেশ, নেপাল এবং পাকিস্তানও গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের সবথেকে দূষিত পাঁচ দেশের মধ্যে স্থান পেয়েছে। সেইসঙ্গে, এই এলাকাতেই বাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক -চতুর্থাংশ মানুষ। আর এই উচ্চ জনসংখ্যা এবং মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে দূষণের কারণে বিশ্বের মোট আয়ু খোওয়া যাওয়ার ৫৮ শতাংশই যাবে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি দক্ষিণ এশিয় দেশগুলি বায়ু দুষণ সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া নির্দেশিকা পূরণ করতে পারে, তবে এই অঞ্চলের একেক ব্যক্তির গড় আয়ু ৫.৬ বছর করে বাঁচবে। তবে, আশঙ্কার বিষয় হল, সম্প্রতি জানা গিয়েছে, ২০২১ সালে দিল্লিতে এমন একটিও দিন যায়নি, যেদিন রাজধানীর বাতাসের গুণমান বা একিউ মাত্রা ভাল ছিল।
তবে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণায়, ভারতের ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার কর্মসূচি বা এনসিএপি (NCAP)- প্রশংসা করা হয়েছে। বিপজ্জনক দূষণের মাত্রায় লাগাম টানতে ২০১৯ সালে এই কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, এনসিএপির লক্ষ্যগুলি অর্জন করা গেলে এবং তা ধরে রাখা গেলে ভারতের সামগ্রিক গড় আয়ু ১.৭ বছর করে বাড়বে। নয়াদিল্লির ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি হবে ৩.১ বছর।
এনসিএপি কর্মসূচির লক্ষ্য হল, ২০২৪ সালের মধ্যে দেশের ১০২ টি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরের দূষণ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো। এর জন্য, শিল্পক্ষেত্রের এবং যানবাহনের ধোঁয়া নির্গমন হ্রাস নিশ্চিত করা, পরিবহন জ্বালানি এবং জৈববস্তু জ্বালানোর ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম প্রবর্তন এবং ধূলিকণাজাত দূষণ হ্রাস করার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই কর্মসুচিতে বায়ু দূষমের মাত্রা আরও ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।