সেলিব্রিটি মডেল কাম অভিনেতা, ট্রাক্টর মিছিলে দীপ সিঁধুর থাকা নিয়ে ছড়াল বিতর্ক
- FB
- TW
- Linkdin
প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষক আন্দোলনকে ঘিরে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে রাজধনীর রাজপথ। ট্রাক্টর মিছিলের রোড ম্যাপ পবর্ব নির্ধারিত থাকলেও, তা কৃষকরা মানেনি বলে অভিযোগ। যার ফলে খণ্ডযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে পুলিস আন্দোলনকারী কৃষকরা।
কৃষক-পুলিস খণ্ডযুদ্ধ, লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাঁটানো,পুলিশের উপর আন্দোলনকারীদের পাল্টা হামলা, ট্র্যাক্টর উল্টে এক কৃষকের মৃত্যু, জখম ৮৬ জন পুলিশকর্মী, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট ঘটে সব কিছুই।
কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় যেই ঘটনা, তাহল লাল কেল্লায় জাতীয় পতাকা নামিয়ে দিয়ে কৃষক সংগঠনের পতাকা উত্তোলন। যার পর কৃষক আন্দোলনের ধরন নিয়ে দেশ জুড়ে ওঠে প্রশ্ন। জাতীয় পতাকার অবমাননার সমালোচনায় সরব হয় সকলেই।
আর এই কাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন দীপ সিধু নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু দীপ সিধু রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। গোটা ঘটনার পেছনে কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কৃষক আন্দোলনের নেতারা।
পঞ্জাবের মুখ্তসর জেলায় ১৯৮৪ সালে জন্ম সিধুর। আইন নিয়ে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য তা-ই পেশা করেছিলেন সিধু। এর পর ম়ডেলিংয়ের দিকে ঝোঁকেন। ‘কিংফিশার মডেল হান্ট’ প্রতিযোগিতা জিতে অভিনয় জগতে পা রাখেন ২০১৫-তে।
'রামতা যোগী' নামক সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় পা রাখেন দীপ সিধু। এরপর ‘জোড়া ‘দশ নম্বরিয়া’ সহ বেশ কয়েকটি পাঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে দীপ সিধুকে।
২০১৯ সালে ধীরে ধীরে রাজনীতির আঙিনায় পা রাখেন দীপ সিধু। মঙ্গলবার সন্ধায় সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক ছবি ভাইরাল হতে দেখা যায় তার। যেখানে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী তথা অভিনেতা সানি দেওলের প্রচারসঙ্গী হিসেবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সিধু। গুরুদাসপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন সানি।
একটি ছবিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশেও দেখা গিয়েছে দীপ সিধুকে। যেই ছবি প্রকাশ্যে আসার পর তুমুল জল্পনা তৈরি হয়েছে সিধু রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে। শুধু নরেন্দ্র মোদীই নয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও ছবি নেট দুনিয়ায় শেয়ার করা হয়েছে। এই দু’টি ছবিই টুইট করেছেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ।
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্কের পরই গতবছর শম্ভু সীমানায় কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যখন সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা যোগ দেন, তখন আন্দোলনে যোগ দেন দীপ সিধুও। কৃষক আন্দোলনের পক্ষে একাধিক সওয়ালও করেন তিনি।
তবে সে সময় থেকেই এই আন্দোলনে সিধুর শামিল হওয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছিল বহু কৃষক ইউনিয়ন। মঙ্গলবারের লালকেল্লায় তিনি য়ে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তারপর থেকে দীপ সিধুকে ‘আরএসএসের এজেন্ট’ বলেও তকমা দেন কৃষক ইউনিয়নের নেতারা।
মঙ্গলবার লালকেল্লার ঘটনায় আত্মপক্ষ সমর্থনও করেছেন দীপ সিধু। সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে এসে তিনি বলেছেন,'নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রয়োগ করে লালকেল্লার কেবলমাত্র নিশান সাহিবের পতাকা উত্তোলন করেছি আমরা। সেখান থেকে জাতীয় পতাকা সরানো হয়নি।'
সিধুর ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্তের দাবি তুলেছেন আন্দোলনকারী তথা স্বরাজ ইন্ডিয়ার প্রধান যোগেন্দ্র যাদব। তিনি বলেন, ‘‘দীপ সিধু মাইক হাতে কী ভাবে লালকেল্লায় পৌঁছলেন, তা তদন্ত করে দেখা উচিত।’’
কৃষকদের র্যালিতে ঘিরে হিংসায় ইন্ধনেরও অভিযোগ উঠেছে সিধুর বিরুদ্ধে। তাঁর ভূমিকায় বিজেপি তথা আরএসএসের হাত রয়েছে বলেও দাবি করেছেন কৃষক ইউনিয়নের নেতারা।
ফলে লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলনের ঘটনার আসল সত্য নিয়ে নানা মহল থেকে আসছে নান ব্যাখ্যা। এর পেছনে কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা , তার জন্য তদন্তের দাবি উঠেছে সব পক্ষ থেকেই।