স্বদেশি করোনা প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিনের ট্রায়াল শুরু এইমসে, প্রথম টিকা দিল্লির যুবককে
অপেক্ষার অবশেষে অবসান হল। শুক্রবার দিল্লির এইমসে শুরু হয়ে গেল কোভ্যাক্সিনের ট্রায়াল। প্রথম দফায় এদিন এইমসে পাঁচ জন স্বেচ্ছাসেবকের উপরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। তার মধ্যে ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির শরীরে এটি প্রথম প্রয়োগ করা হয়। এই ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার জন্য প্রায় ৩,৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। স্বদেশি এই ভ্যাকসিনটি আইসিএমআর-এর সাহায্যে তৈরি করেছে ভারত বায়োটেক।
- FB
- TW
- Linkdin
নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে ভারতে প্রথম দেশে তৈরি টিকা কোভ্যাক্সিনের মানব শরীরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম পর্ব শুক্রবার দিল্লির এইমসে শুরু হল।
এইমসে পরীক্ষার জন্য গত শনিবার থেকে সাড়ে তিন হাজারের বেশি লোক তাঁদের নাম নথিভূক্ত করেছেন। তাঁর মধ্যে কমপক্ষে ২২ জনের স্ক্রিনিং চলছে। এই তথ্য জানিয়েছেন এইমসের কমিউনিটি মেডিসিনের অধ্যাপক তথা প্রধান গবেষক ড. সঞ্জয় রায়।
বছর তিরিশের এক স্বেচ্ছাসেবকের দেহে করোনার টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়। এমসের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক তথা করোনা টিকার হিউম্যান ট্রায়ালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক সঞ্জয় রায় জানান, দুপুর দেড়টায় ইন্ট্রামাসকুলার ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ওই স্বেচ্ছাসেবকের দেহে ০.৫ মিলিগ্রাম কোভ্যাক্সিন পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। আগামী সাত দিন ওই স্বেচ্ছাসেবককে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
এমসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, শনিবার ফের কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবকের দেহে কোভ্যাক্সিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হতে পারে।
ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)-র তরফে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে হিউম্যান ট্রায়ালের অনুমোদন দেওয়ার পরেই স্বেচ্ছাসেবক চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল। এ পর্যন্ত প্রায় ৩,৫০০ জন নিজেদের দেহে কোভ্যাক্সিন প্রয়োগের জন্য নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন।
গত শনিবার এমসের ‘এথিকস কমিটি’ মোট ১০০ জনের দেহে করোনার টিকা প্রয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছে। এঁদের মধ্যে ২২ জনের দেহে প্রথম পর্যায়ে (ফেজ ওয়ান) কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।
এমস সূত্রের খবর, ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, হৃদযন্ত্র, যকৃৎ, কিডনি, ফুসফুস-সহ প্রায় ৫০ দফা পরীক্ষার পরে স্বেচ্ছাসেবকদের নির্বাচন করা হয়েছে। তাঁদের দেহে কো-মর্বিডিটি সংক্রান্ত সমস্যা আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হয়েছে।
চিকিৎসক সঞ্জয় রায় বলেছেন, দিল্লির বাসিন্দা প্রথম ভ্যাকসিন নেওয়া ওই ব্যক্তির দুদিন আগে শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাঁর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্ত মাপকাঠি স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। ওই ব্যক্তির অন্য কোনও অসুস্থতাও নেই।
০.৫ মিলিমিটারের প্রথম ডোজ শুক্রবার দুপুর দেড়টা নাগাদ দেওয়া হয়। এর কোনও ক্ষতিকারক প্রভাব ওই ব্যক্তির শরীরে দেখা যায়নি। তাঁকে দুই ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। আগামী সাতদিন তাঁর ওপর নজর রাখা হবে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) কোভ্যাক্সিন-এর প্রথম ও দ্বিতীয় দফার পরীক্ষার জন্য এইমস সহ দেশের ১২ টি মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করেছে।
প্রথম পর্বে ৩৭৫ জনের ওপর পরীক্ষা করা হবে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০০ জনের ওপর পরীক্ষা এইমসে হবে। দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষায় ১২ টি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে প্রায় সাড়ে সাতশো জন সামিল হবেন।
প্রথম পর্বে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা ১৮ থেকে ৫৫ বছরের এমন ব্যক্তিদের হবে, যাঁদের অন্য কোনও অসুস্থতা নেই। এইমসের ডিরেক্টর ড. রণদীপ গুলেরিয়া জানিয়েছেন, দ্বিতীয় পর্বে ১২ থেকে ৬৫ বছরের ৭৫০ জন ব্যক্তির ওপর ভ্যাকসিনের পরীক্ষা হবে।
দুই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি)-র সহায়তায় কোভ্যাক্সিন তৈরি করেছে হায়দরাবাদের সংস্থা ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (বিবিআইএল)।