গুপ্ত পুজো শেষ, জগন্নাথ দেবের দর্শন পর্ব শুরু
গুপ্ত পুজোর পালা শেষ। শুক্রবার মহাপ্রভু জগন্নাথ দেবের দর্শন পর্ব। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এবার দর্শকদের অনুপস্থিতিতেই জগন্নাথ দেবের দর্শন পর্বের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিবছর এই সময় থেকেই ভক্তদের সমাগম শুরু হয়ে যায় পুরীতে। কিন্তু, এবার আর তা হবে না। ১১ জুলাই রাত আটটা থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে পুরীতে।
| Published : Jul 09 2021, 07:02 PM IST / Updated: Jul 12 2021, 09:21 AM IST
- FB
- TW
- Linkdin
প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম পূর্ণিমাতেই জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার আয়োজন করা হয়। এদিন গর্ভগৃহ থেকে মূর্তি তুলে এনে স্নান মণ্ডপে তা স্থাপন করা হয়। সেখানেই সুগন্ধি জল দিয়ে স্নান করানো হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে। স্নানের সঙ্গে সঙ্গে চলে মূর্তির সাজসজ্জা। ১০৮ ঘড়া জলে স্নানের পরই জ্বরে কাবু হয়ে পড়েন জগন্নাথদেব। তাই এইসময় গৃহবন্দি অবস্থায় থাকেন তিনি। রথ পর্যন্ত বিশ্রাম নেন। তাই সেই সময়টা ভক্তরা জগন্নাথ দেবের দর্শন পান না। এমনকী, এই কয়েকটা দিন তাঁর পুজোও হয় না। আর জ্বর থেকে উঠেই রথে চেপে মাসির বাড়িতে রওনা দেন তিনি।
আজ গুপ্ত পুজোর পালা শেষ হয়েছে। আজ থেকেই মহাপ্রভু জগন্নাথ দেবের দর্শন পর্ব শুরু হয়েছে। এই দিনই ভক্তদের দেখা দেন তিনি। কিন্তু, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এবার ভক্তদের অনুপস্থিতিতেই জগন্নাথ দেবের দর্শন পর্বের আয়োজন করা হয়েছে।
শনিবার মহাপ্রভুর নব যৌবন দর্শন। রবিবার আচার মেনে মহাপ্রভুর উবা দর্শন। পুরীর মন্দির চত্বরে এখন শেষ সময়ের ব্যস্ততা। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ভক্তকুল ছাড়াই দ্বিতীয় বার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। ১২ জুলাই সোমবার পড়েছে রথ। সেই দিন পুরী ধামে জগন্নাথ মন্দিরে মহা সমারোহে পালিত হতে চলেছে রথযাত্রা। তবে করোনার জেরে রথযাত্রার সমারোহে খানিকটা রাশ টানা হয়েছে।
সোমবার সকাল ৭টায় মন্দির থেকে বাইরে আনা হবে মহাপ্রভুকে। বলরাম ও সুভদ্রাকে নিয়ে রথে অধিষ্ঠিত হবেন জগন্নাথ দেব। রথের সামনে সোনার ঝাঁটা দিয়ে ঝাঁট দেওয়ার পর বেলা ১২টা নাগাদ টান পড়বে জগন্নাথদেবের রথের রশিতে। পুরীর মন্দির ছেড়ে গুণ্ডিচার বাড়ি যাবেন তাঁরা। সেটি জগন্নাথ দেবের ‘মাসির বাড়ি’নামে পরিচিত। সাত দিন সেখানে থাকার পর আবার নিজের মন্দিরে ফিরে আসবেন। রথে চড়ে এই মাসির বাড়ি যাওয়াকে সোজা রথ আর মাসির বাড়ি থেকে ফিরে আসা উল্টোরথ নামে প্রচলিত।
প্রতি বছর রথযাত্রার উদ্বোধন করেন সেখানকার রাজা। রাজত্ব না থাকলেও বংশপরম্পরা ক্রমে পুরীর রাজপরিবার আজও আছে। তাই নিয়ম অনুসারে, যিনি রাজা উপাধি প্রাপ্ত হন, তিনিই পুরীর রাজা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাদেবীর পর পর তিনটি রথের সামনে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করেন এবং সোনার ঝাড়ু ও সুগন্ধী জল দিয়ে রথের সামনের অংশ ঝাঁট দেন। তারপরই পুরীর রথের রশিতে টান পড়ে।
করোনা পরিস্থিতির মধ্য়ে এবার ভক্তকুলের উপস্থিতি ছাড়াই পুরীর রথযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। রথযাত্রা সম্পন্ন করতে এবার বেশি সতর্ক ওড়িশা সরকার। বৃহস্পতিবার থেকে পুরীর মন্দিরের সেবায়েতদের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত সেবায়েতদের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হবে।
১১ জুলাই রাত আটটা থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে পুরীতে। মন্দির চত্বরে জারি থাকবে ১৪৪ ধারা। মন্দির লাগোয়া সব হোটেল, বাড়ি সিল করে দেওয়া হবে প্রশাসনের তরফে। এমনকী, বাড়ির ছাদ বা বারান্দা থেকেও এবার কেউ রথযাত্রা দেখতে পারবেন না। তার উপরেও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
তবে ভক্তরা ছাড়া এই উৎসব পালন করতে মোটেই ভালো লাগে না মন্দির কর্তৃপক্ষের। কিন্তু, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সবার স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে বিষয়টি মেনে নিয়েছেন সবাই। যদিও তাঁদের আশা শীঘ্রই এই কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে আবার ছন্দে ফিরবে পুরী। আবারও রথের সময় গমগম করবে মন্দির চত্বর।