- Home
- India News
- দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আর মর্যাদার প্রতীক জাতীয় পতাকা, জেনে নিন তিরঙ্গার অজানা কাহিনি
দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আর মর্যাদার প্রতীক জাতীয় পতাকা, জেনে নিন তিরঙ্গার অজানা কাহিনি
পৃথিবীর প্রত্যেক স্বাধীন দেশের একটা করে জাতীয় পতাকা থাকে। মর্যাদার সঙ্গে জাতীয় পতাকা সম্মান রক্ষা করা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য। পৃথিবীর প্রতিটি দেশের মত ভারতে একটি জাতীয় পতাকা রয়েছে। দেশের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবসে জেনে নিন ভারতের জাতীয় পতাকার অজানা কাহিনী।
- FB
- TW
- Linkdin
ভারতের জাতীয় পতাকাটি আয়তক্ষেত্রাকার। প্রস্থ হয় দৈর্ঘ্যের দেড় গুন। পতাকায় তিনটি রঙ, তিনটি রঙের জায়গা সমান। তাই একে তিরঙ্গা বলে। সবার উপরে থাকে গেরুয়া, মাঝে সাদা, সবার নিচে থাকে সবুজ।
তিনটি রঙের একটি করে আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। উপরের গেরুয়া ত্যাগ, মাঝের সাদা শান্তি ও পবিত্রতার, নীচের সবুজ নির্ভীকতা, জীবনধর্ম, তারুণ্যের প্রতীক।
পতাকার মাঝে সাদা অংশে একটি চক্র রয়েছে। চক্রটি সম্রাট অশোকের ধর্ম চক্রের অনুকরণে তৈরি। তাকে আশোক চক্র বলা হয়। চক্রটিতে ২৪ টি স্পোক বা কাটা আছে। ২৪ টি কাটা ২৪ টি অর্থ বহন করে । ভালবাসা, সাহস, শান্তি, মহানুভবতা, উদারতা, বিশ্বাস, আন্তরিকতা, করুণা, কমনীয়তা ইত্যাদি। চক্রটিকে দেশের উন্নতির ও প্রগতির প্রতীক বলা হয়।
ভারতে প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন বাহাদুর শা জাফর। ১৮৫৭ সালে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি এই পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। পতাকাটি ছিল সবুজ রঙের। তার উপরে ছিল সোনালি রঙের পদ্ম ও হাতরুটি।
এরপর ভগিনী নিবেদিতা ১৯০৫ সালে লাল রঙের উপর পতাকা নক্সা তৈরি করেছিলেন। পতাকার চারিধারে ১০৮ টি শিখা ছিল। মাঝখানে ছিল হলুদ রঙের বজ্র। বজ্রের বামদিকে বাংলাতে লেখা ছিল ‘বন্দে’ আর ডানদিকে লেখা ছিল ‘মাতরম’।
এরপর ১৯০৭ সালে মাডাম ভিকাজি রুস্তম কামা বিদেশের মাটিতে প্রথম ভারতের স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। ১৯১৭ সালে শ্রীমতী অ্যানি বেসান্ত এবং বাল গঙ্গাধর তিলক একটি নতুন পতাকার কথা ভেবেছিলেন।
গান্ধীজী ১৯২১ সালে প্রথম তাঁর পতাকা নিয়ে আসেন। পতাকাটির উপর দিক থেকে তিনটি রঙ আড়াআড়ি ভাবে তিনটি সমান ভাগে ভাগ করা ছিল। রঙ গুলি ছিল সাদা, সবুজ, লাল। এর মাঝখানে রেখা আঁকা ছিল।
এরপর ১৯৪৭ সালের ৩ জুন ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করেন যে ১৫ আগস্ট ভারতকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করা হবে। তখন স্বাধীন ভারতের পতাকা তৈরির জন্য গণ পরিষদ একটি আস্থায়ী কমিটি তৈরি করেন। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই ভারতের জাতীয় পতাকা তৈরি হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মধ্য রাত্রে গণ পরিষদের হাতে জাতির উদ্দেশ্যে পতাকাটি তুলে দেওয়া হয়।
পৃথিবীর প্রত্যেক স্বাধীন রাষ্ট্র জাতীয় পতাকা ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন নিয়ম শৃঙ্খলা পালন করে। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় যথেষ্ট মর্যাদার সঙ্গে স্থাপন করতে হবে। ভারতের জাতীয় পতাকা ব্যবহারে রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মাবলী রয়েছে।
পাশে যদি অন্য কোন পতাকা থাকে তবে, জাতীয় পতাকার উচ্চতা তার থেকে বেশি হবে। জাতীয় পতাকার দণ্ডটিতে অন্য কোন পতাকা রাখা যাবেনা। জাতীয় শোক প্রকাশ করতে বা কোন বিশেষ ব্যক্তির, রাষ্ট্রের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সময় জাতীয় পতাকা অর্ধ-নমিত রাখা হয়।
সরকারি ভবন গুলিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন কারা হলে রবিবার ও ছুটির দিন সমেত সব দিন গুলিতে থাকবে। গেরুয়া রঙটি সব সময় উপরে থাকবে। বাজনার তালে তালে জাতীয় পতাকা ওঠানো ও নামানো করতে হয়।
স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা সবাই ব্যবহার করতে পারেন । জাতীয় পতাকা ছেঁড়া, ফাটা, বিবর্ণ হলে ব্যবহার করা যাবেনা। জাতীয় পতাকার ডানদিকে বা বেশি উচ্চতায় অন্য কোন পতাকা রাখা যাবেনা।
কফিনে ঢাকা জাতীয় পতাকা মৃতদেহের সঙ্গে চিতায় বা কবরে দেয়া যাবেনা।
কোন মিছিলে জাতীয় পতাকা নিয়ে যাওয়ার সময় মিছিলে সবার আগে যোগ্য মানুষের ডান কাঁধে নিয়ে যেতে হয়। কোনো ব্যবসার কাজের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি ছাড়া জাতীয় পতাকা ব্যবহার আইন অনুসারে অন্যায় কাজ। জাতীয় পতাকাকে সম্মান দেখানোর আসল পথ হল এর ব্যবহার প্রণালি শেখা ও সেগুলি সঠিক নিয়মে পালন করা।