- Home
- India News
- চিনের ঘুম ওড়াতে ভারতের সঙ্গে জোট বাঁধল জাপান, বেজিংকে চাপে রেখে স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা চুক্তি
চিনের ঘুম ওড়াতে ভারতের সঙ্গে জোট বাঁধল জাপান, বেজিংকে চাপে রেখে স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা চুক্তি
ভারত-চিন সীমান্ত নিয়ে পূর্ব লাদাখে চরম সংঘাতের আবহে বৃহস্পতিবার মস্কোয় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করলেন ভারত ও চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। জানা গিয়েছে সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে দু-দেশই পাঁচ দফা পরিকল্পনার বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে চিনকে যে পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায় না তা ভালোমতই জানে নয়াদিল্লি। তাই আগ্রাসী বেজিংকে নজরে রেখে জাপানের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক মজবুত করল ভারত। দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা বাড়িয়ে তুলতে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করল নয়াদিল্লি ও টোকিও।
- FB
- TW
- Linkdin
বৃহস্পতিবার রাতে মস্কোয় চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই'র সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথা হয় ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের। সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনেরসদস্য দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীরা মিলিত হয়েছেন মস্কোয়। ভারত ও চিন দু-দেশই এই গ্রুপের সদস্য। সাংহাই বৈঠকের বাইরেই ভারত ও চিনের বিদেশমন্ত্রী লাদাখ সমস্যা নিয়ে আলাদা ভাবে বৈঠকে বসেছিলেন।
লাদাখে সীমান্ত উত্তেজান থেকে বেরিয়ে আসতে দু-দেশই পাঁচ দফা পরিকল্পনা বিষয়ে একমত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, সীমান্ত ব্যবস্থপনা নিয়ে বর্তমানে দু-দেশের মধ্যে যে সমস্ত চুক্তি ও প্রোটোকল রয়েছে, তা দু-পক্ষই অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবে। সীমান্তে শান্তি ও স্থিতাবস্থা যাতে বজায় থাকে, দু-দেশই সেই মতো চলবে। উত্তেজনা চড়তে পারে এমন কোনও পদক্ষেপ করা থেকে দু'পক্ষই নিজেদের বিরত রাখবে।
তবে চিনের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের সঙ্গে ভালভাবেই পরিচিত ভারত। বেজিং যেভাবে এশিয়ার বুকে জল থেকে শুরু করে স্থলে ক্রমাগত নিজের বিস্তার বাড়াচ্ছে , তাতে কড়া নজর রেখে যাচ্ছে দিল্লি। শুধু যে ভারতের এলাকা দখল করার উদ্যোগ নিচ্ছে চিন, তা নয়, জাপান সীমান্তেও জলসীমায় কিছু দ্বীপের দিকে লোলুপ দৃষ্টি রয়েছে বেজিংয়ের। এমন অবস্থায় ভারত ও জাপান একটি চুক্তি স্বাক্ষর করল।
ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব অজয় কুমার ও জাপানের রাষ্ট্রদূত সুজুকি সতোশির মধ্যে এই চুক্তি সদ্য স্বাক্ষরিত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, দ্বিপাক্ষিক সমঝোতায় ইন্দোপেসিফিক এলাকায় দুটি দেশ পরস্পরকে রসদ সরবরাহ করবে যে কোনও প্রয়োজনে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা প্রসঙ্গও উঠে এসেছে।
এই চুক্তির ফলে ভারতীয় সেনা ও জাপানি ফৌজের মধ্যে রসদ আদানপ্রদান ও একে ওপরের সামরিক পরিকাঠামো ব্যবহারের সুবিধা পাবে।
তবে লাদাখ ও দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের আগ্রাসনের কথা মাথায় রেখে, এই চুক্তির আসল উদ্দেশ্য লালফৌজের বিরুদ্ধে একটি সামরিক বলয় গড়ে তোলা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চিন যেভাবে দক্ষিণ চিন সাগর জুড়ে ক্রমাগত আগ্রাসন ও আস্ফালনের আশ্রয় নিচ্ছে, তা জাপান ও ভারত ভালোভাবে নেয়নি। সেক্ষেত্রে এই সাম্প্রতিক চুক্তির হাত ধরে সেনা সংক্রান্ত রসদ ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সমঝোতা সাগর জলের সংঘাতে বড় ভূমিকা নেবে। এমনকি দ্বিপাক্ষিক সেনামহড়ার সমঝোতাতেও এসেছে দুটি দেশ।
এর আগে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারত এমন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এরফলে দ্বিপাক্ষিকভাবে এই দেশগুলির সঙ্গে ভারতও নিজের পেশীবল পোক্ত করেছে। এর আগের ২০১৬ সালে আমেরিকা, ২০১৮ সালে ফ্রান্সের সঙ্গে ভারত এই ধরনের চুক্তি করে।
জাপানের সঙ্গে সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হতেই জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দু’দেশের চলতি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সমঝোতা গভীরতর করা এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রে যৌথ ভাবে কাজ করা নিয়ে কথা হয়েছে মোদী এবং আবের মধ্যে।
দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর কথার পরে বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ভারত এবং জাপানের সেনার মধ্যে প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবা বিনিময় সংক্রান্ত চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন মোদী ও আবে। বলা হয়েছে, ভারত এবং জাপানের মধ্যে সম্পর্কের পোক্ত ভিত ভবিষ্যতেও বহাল থাকবে।
সেনাবাহিনীর আরও অনেক কাজেই লাগানো যেতে পারে পাহাড়ি কুকুরদের। সেনা আধিকারিকরা বলছেন, শীতের লাদাখে বরফের ধস নেমে অনেকসময়েই সেনা ছাউনি ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বরফের মধ্যে চাপা পড়ে যান জওয়ানরা। সেই সময় উদ্ধারকাজে বিশেষ সাহায্য করে পাহাড়ি কুকুররা। বাখারওয়াল প্রজাতির কুকুরকে অ্যাভাল্যাঞ্চ রেসকিউ অপারেশন -এর কাজে লাগানো যায়। ২০-৩০ ফুট গভীরে বরফের স্তরে দেহ চাপা পড়ে থাকলেও তার খোঁজ দিতে পারে এই কুকুররা। একইভাবে ল্যাব্রাডর ও জার্মান শেফার্ড প্রজাতির কুকুররাও লাদাখের চরম আবহাওয়ার পরিবেশেও মানিয়ে নিতে পারে। এরাও দুর্দান্ত শিকারি, ঘ্রাণ শক্তিও তারিফ করার মতো।
কোভিড-এর পরে গত কয়েক মাস ভিডিয়ো এবং টেলি-যোগাযোগের মাধ্যমে সক্রিয় কূটনীতি চালিয়ে যাচ্ছে সাউথ ব্লক। গত জুন মাস থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনের মতো মহাশক্তিধর প্রতিবেশীর সঙ্গে সংঘাতের পর এই কূটনৈতিক দৌত্যের মাত্রা বেড়েছে বহুলাংশে। খুব শীঘ্রই কোয়াড বা চর্তুদেশীয় অক্ষের (ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকা) বৈঠক নয়াদিল্লিতে হওয়ার কথা রয়েছে। সমুদ্রপথে চিনের বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত আধিপত্য খর্ব করার জন্য অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলছে বিদেশ মন্ত্রক।
এদিকে চিনের আগ্রাসনকে নজরে রেখে বুধবারই ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিয়নে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বৈঠক করেছে ভারত, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার বিদেশ সচিবরা৷