Sardar Vallabhbhai Patel-সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মূল্যায়ন কি আদৌও করতে পেরেছে ভারত
- FB
- TW
- Linkdin
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী। ১৮৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর গুজরাটের প্রভাবশালী পতিদার সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করেন সর্দার প্যাটেল। স্ত্রীকে হারানোর দুই বছর পর ১৯১১ সালে ৩৬ বছর বয়সে তিনি ইংল্যান্ডের মিডল টেম্পলে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করতে যান। ৩৬ মাসের কোর্স ৩০ মাসে শেষ করে তিনি ভারতে ফিরে এসে আহমেদাবাদে থিতু হন এবং ব্যরিস্টার হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেন। স্ত্রী জাভেরি, কন্যা মানিবেন এবং পুত্র দয়াভাইকে নিয়ে ছিলো তার সংসার। পাঁচ বছরের কন্যা ও তিন বছরের পুত্রকে রেখে তার স্ত্রী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পরলোকগমন করেন৷
১৯১৮ সালে মহাত্মা গান্ধীর সাথে এক সভায় দেখা হওয়াটা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তিনি গান্ধীর জীবন দর্শনে ব্যাপক প্রভাবিত হন এবং গান্ধীর ডাকে অনেক সাধনায় অর্জিত চাকরি ছেড়ে দেশ স্বাধীন করার আন্দোলনে যোগদান করেন। ১৯১৭ সালে তাকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের গুজরাট শাখার সেক্রেটারি হিসাবে নিযুক্ত করা হয়।
কৃষকদের দেওয়া খেতাবে বল্লভভাই প্যাটেল হয়ে উঠেন “সরদার প্যাটেল”। কৃষকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বল্লভভাই প্যাটেলের ভূমিকা ছিলো অনস্বীকার্য। তৎকালীন সময়ে “কর দেবো না ” আন্দোলনের ফলে বৃটিশ সরকার বাধ্য হয়েছিল ভারতীয় কৃষকদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া জমি ফেরত দিতে। আর এই আন্দোলনের মূল হোতা ছিলেন বল্লভভাই প্যাটেল।
বল্লভভাই গান্ধীর ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনে (১৯২০) যোগ দিয়ে পশ্চিম ভারত ভ্রমণ করে দলের পক্ষে প্রায় ৩ লাখ সদস্য যোগাড় করেন। তিনি এই সময় প্রায় ১৫ লাখ টাকাও পার্টির ফান্ডে সংগ্রহ করেন। ১৯২৩ সালে যখন গান্ধী জেলে বন্দী ছিলেন, তখন বল্লভভাই সত্যাগ্রহ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
প্যাটেল গান্ধীর মধ্যে একজন নিখুঁত নেতা দেখেছিলেন যিনি সাহসী, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং উদ্ভাবনী ছিলেন। তিনি দার্শনিক আলোচনায় খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু তিনি গান্ধীর কাছ থেকে চরকা, খাদি, অহিংস কৌশল, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণের মতো বিষয়গুলোকে গ্রহণ ও অভ্যন্তরীণভাবে নিজের বোধগম্যতায় গ্রহণ করেছিলেন।
“লবণ-সত্যাগ্রহ” নামক এক আন্দোলনে যোগদানের অপরাধে সরদার প্যাটেলকে কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। ১৯৩১ সালে লর্ড আরউইন এবং মহাত্মা গান্ধীর মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হওয়ার পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। চুক্তিটি “গান্ধী-আরউইন” চুক্তি হিসাবে পরিচিত।
ব্রিটিশদের কাছে থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বল্লভভাই প্যাটেল ছিলেন প্রথম কংগ্রেস নেতা যিনি দেশভাগ মেনে নিয়েছিলেন। কারণ, তার মনে হয়েছিলো মোহম্মদ আলী জিন্না স্বাধীনতার ঠিক আগ মুহুর্তে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সূত্রপাত করে যে বিচ্ছিনতাবাদী আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিলো তা নিরসনের একমাত্র উপায় হতে পারে দেশ ভাগ মেনে নেওয়া। পার্টিশন কাউন্সিলে ভারতের হয়ে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
নেহেরু খুবই অল্প সময়ের জন্য কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট পদে বসেছিলেন। ১৯৪৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৮৭ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত নেহেরু ভারতের অন্তর্বতীকালীন সরকারের নেতৃত্বে ছিলেন। ভাইসরয়ের নির্বাহী কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রীর সমান ক্ষমতা নিয়ে নেহেরু ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন। আর বল্লভভাই প্যাটেল ছিলেন কাউন্সিলটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে।
১৯৪৬ সালে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির ১৫ ভোটের মধ্যে ১৩টি ভোটই ছিল বল্লভভাইয়ের পক্ষে। কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট যিনি হবেন, তিনিই স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবে ব্যাপারটি অনেকটা এমন ছিল। নেহেরু প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির পছন্দের ব্যাপারটি জেনে চুপ ছিলেন। কিন্তু গান্ধী ভেবেছিলেন, নেহেরু হয়তো দ্বিতীয় স্থান পছন্দ করবেন না। তাই তিনি বল্লভভাইকে নির্বাচন থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলেন। বল্লভভাইও বিনা প্রশ্নে গান্ধীর নির্দেশ মেনে নেন।
বল্লভভাই প্যাটেল ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী। তার সবচেয়ে বড় অবদান ছিলো ভারতবর্ষের প্রায় ৫৬৫টি রাজ্যকে ভারতের অধীনে আনা৷ এই কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। আর কংগেস এই কাজের ভার অর্পণ করেছিলো বল্লভভাই প্যাটেলের ওপর। প্রথম দফার অন্য রাজ্যগুলো তিনি ভারতের অধীনে আনতে পারলেও জম্মু ও কাশ্মীর, জুনাগড়, ভোপাল ও হায়দরাবাদ – এই রাজ্যগুলোকে তিনি ভারতের অধীনে আনতে বিফল হন৷ পরবর্তীতে তিনি রাজনৈতিক বুদ্ধির জোরে এসব রাজ্যকে ভারতের অধীন করেছিলেন।