- Home
- India News
- রাখতে পারেননি স্ত্রী-কে দেওয়া শেষ কথা, অন্যের সমস্যা দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়তেন কার্গিলের এই শহিদ
রাখতে পারেননি স্ত্রী-কে দেওয়া শেষ কথা, অন্যের সমস্যা দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়তেন কার্গিলের এই শহিদ
- FB
- TW
- Linkdin
উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড় জেলার বাঘড়াই থানার পিঠিপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন কার্গিলে শহিদ ল্যান্স নায়েক বিজয় কুমার শুক্লা। সেনাবাহিনীর দ্বাদশ জাঠ ব্যাটালিয়নের এই বীর সদস্য ১৯৯ সালের ২৬ জুলাই, অর্থাৎ কার্গিল বিজয় দিবসের দিনই শহিদ হয়েছিলেন। এর মাত্র ২০ দিন আগেই বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে ফিরেছিলেন এই জওয়ান। এমনিতে সিয়াচেন হিমবাহ রক্ষার দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হতেই তাঁকে ডেকে আনা হয়েছিল কার্গিলে। সেখানেই শত্রুদের গুলিতে প্রাণ যায় তাঁর।
বিজয় শুক্লার স্ত্রী গুড়িয়া দেবী জানিয়েছেন, তাঁদের চার কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই বিয়ে হয়েছে বড় মেয়ে দীপা শুক্লার। বাকি তিন কন্যা শিখা শুক্লা, দিব্যা শুক্লা, সৌম্যা শুক্লা এবং পুত্র শিবশঙ্কর শুক্লা - প্রত্যেকেই এখনও পড়াশোনা করে প্রয়াগরাজে অবস্থিত সেনাবাহিনীর স্কুলে।
শহীদ ল্যান্স নায়েক-এর স্ত্রী গুড়িয়া দেবী জানিয়েছেন ২০ বছর আগের সেই দিনটার কথা। ওই সময় তাঁর বাবা হঠাতই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে প্রয়াগরাজের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। গুড়িয়া দেবী বাবা-কে দেখতে গিয়েছিলেন। বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা ব্যস্ত ছিল প্রতিদিনের কাজে। এমন সময়ই স্থানীয় থানার পুলিশ এসেছিল তাঁদের বাড়িতে। গুড়িয়া দেবীর শ্বশুর অর্থাৎ ল্যান্স নায়েক বিজয় শুক্লার বাবা-কে ডেকে জানিয়েছিল সেই দুঃসংবাদ, সীমান্তে যুদ্ধের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছেন বিজয়।
গুড়িয়া দেবী আরও জানিয়েছেন সেই সময়ে কোনও ফোন ছিল না। ঘরের ছেললের মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পরই শোকের রোল উঠেছিল পিঠিপুর গ্রামের বাড়িতে। গুড়িয়া দেবীকে নিয়ে আসতে পরিবারের একজনকে পাঠানো হয়েছিল প্রয়াগরাজে। সেও গুড়িয়া দেবীকে কিছু জানায়নি। বাড়ি আসার পথে বাড়ির সামনে জনতার ভিড় দেখেই বিষয়টা বোধগম্য হয়েছিল তাঁর। কারণ তিনি জানতেন তাঁর স্বামী ব্যস্ত আছেন কার্গিলের যুদ্ধে, যেখানে দেশের সেনারা প্রতিদিনই শহিদ হচ্ছেন। বাস্তব ঘটনা জেনে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জেনেছিলেন কাশ্মীরের খারাপ আবহাওয়ার জন্য তাঁর স্বামীর দেহ উদ্ধার করা গিয়েছে মৃত্যুর তিনদিন পর।
শহিদ হওয়ার মাত্র ২০ দিন আগেই কর্তব্যে যোগ দিয়েছিলেন ল্যান্স নায়েক বিজয় শুক্লা। সেই সময় তাঁদের ছেলের বয়স ছিল মাত্র 8 মাস, আর গুড়িয়া দেবীর গর্ভে তাঁদের চতুর্থ কন্যা সৌম্যা। কর্তব্যে যোগ দিতে যাওয়ার আগে স্ত্রীকে কী বলে দিয়েছিলেন এই অমর জওয়ান? গুড়িয়া দেবী জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী তাঁকে নিজের যত্ন নিতে বলেছিলেন। আর বলেছিলেন ২ মাস পরে বাড়ি এসে সাড়ম্বরে ছেলের পৈতে দেবেন। কাকে কাকে নিমন্ত্রণ করা হবে, কী খাওয়া দাওয়া হবে সব পরিকল্পনাই করে গিয়েছিলেন তিনি। এই অবধি বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন শহিদ জওয়ানের স্ত্রী। কর্তব্য়ের খাতিরে শেষ প্রতিশ্রুতি পূরণ করে যেতে পারেননি তাঁর স্বামী। কিন্তু, তিনি শহিদ স্বামীর ইচ্ছাপূরণে কোনও ত্রুটি রাখননি। ছেলের উপনয়ন সংক্রান্ত সবই করেছিলেন স্বামীর ইচ্ছানুযায়ী।
আর ব্যক্তিগত জীবনে কেমন ছিলেন এই ল্যান্স নায়েকের? গুড়িয়া দেবী জানিয়েছেন তাঁর স্বামী মিষ্টি খেতে খুব পছন্দ করতেনয যখনই ছুটিতে বাড়িতে আসতেন, তখনই গুজিয়া, খির - নানারকম মিষ্টি নিজেই তৈরি করতেন। অন্যকে সাহায্য করেই পরম তৃপ্তি পেতেন তিনি। কারোর কোনও সমস্যার কথা জানতে পারলেই বিজয় শুক্লা ঝাঁপিয়ে পড়তেন তাঁকে সাহায্য করতে। এমনকী কাউকে সাহায্য করতে গিয়ে যদি কখনও তাঁকে আর্থিক ঋণ নিতে হত, তাতেও তিনি পিছপা হতেন না।