কেন যোগী'কে ক্ষমতায় ফেরালো উত্তরপ্রদেশ, সরকারের কোন কোন কাজ পছন্দ করলেন তাঁরা
উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh) ২৭৪ আসনে জিতে ক্ষমতায় ফিরল যোগী আদিত্যনাথের (Yogi Adityanath) নেতৃত্বাধীন বিজেপি (BJP) সরকার। একাংশের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন, অখিলেশ যাদবের (Akhilesh Yadav) নেতৃত্বে বিজেপিকে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছুড়ে দেবে সমাজবাদী পার্টি (Samajwadi Party)। কিন্তু, তারা আটকে গিয়েছে ১২৪ আসনেই। অথচ, উত্তরপ্রদেশে সাধারণত কোনও সরকার এক মেয়াদের বেশি টেকে না। কাজেই, যোগীর এই জয় অবশ্যই ঐতিহাসিক। কিন্তু, কেন সেখানকার মানুষ আবার যোগীকে ফিরিয়ে আনলেন ক্ষমতায়? গত ৩ মাস ধরে যোগী সরকারের গত ৫ বছরের কাজের একটি বিস্তৃত মূল্যায়ন পরিচালনা করেছে 'লোকালসার্কেল্স' সংস্থা।
- FB
- TW
- Linkdin
গত কয়েকে বছরে, উত্তরপ্রদেশ সরকার রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত প্রকল্পের বাস্তবায়ন করেছে। সমীক্ষার প্রথম প্রশ্নটি ছিল এই বিষয়েই। ৫৬% নাগরিক জানিয়েছেন যোগী শাসনে 'উল্লেখযোগ্য উন্নতি' হয়েছে, ২৪% বলেছেন 'কিছু উন্নতি' হয়েছে। মাত্র ১০% বাসিন্দা বলেছেন যে 'কোন উন্নতি হয়নি', ৪% বলেছেন 'অবনতি' হয়েছে এবং ৬% বলেছেন 'উল্লেখযোগ্যভাবে অবনতি' হয়েছে। সামগ্রিকভাবে, ৮০% বলেছেন যে গত ৫ বছরে পরিচ্ছন্নতার উন্নতি হয়েছে, ২০% বলেছেন হয়নি।
সারাদেশেই বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি রয়েছে, উত্তরপ্রদেশও তার বাইরে নয়। তবে, যোগী সরকার বেশ কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এই প্রশ্নে ৩৯% মানুষ বলেছেন, দুর্নীতি 'উল্লেখযোগ্য হ্রাস' পেয়েছে, ২৬% বলেছেন 'অল্প মাত্রায় হ্রাস' পেয়েছে। অন্যদিকে, ২০% বাসিন্দা বলেছেন দুর্নীতিতে 'কোন হ্রাস' হয়নি, ১% বলেছেন 'অল্প বৃদ্ধি' হয়েছে, এবং ১২% বলেছেন 'উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে', ২% এই নিয়ে মতামত দেননি। সামগ্রিক ভিত্তিতে, ৬৫% বাসিন্দা বলেছেন যে গত ৫ বছরে উত্তরপ্রদেশে দুর্নীতি হ্রাস পেয়েছে, ৩৩% বলেছেন তা হয়নি।
যোগী সরকারকে আইনের শাসন না থাকা নিয়ে বারবার আক্রমণ করেছে বিরোধীরা থেকে সুশীল সমাজ। উল্লেখযোগ্যভাবে, ৫৬% শতাংশ বাসিন্দাই সমীক্ষায় বলেছেন গত ৫ বছরে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার 'উল্লেখযোগ্য উন্নতি' হয়েছে। আর ২২% বলেছেন 'সামান্য উন্নতি' হয়েছে। অন্যদিকে, ৭% বাসিন্দা বলেছেন 'কোন উন্নতি হয়নি', ৬% বলেছেন যে এটি 'অবনতি হয়েছে', এবং ৯% বলেছেন আইন-শৃঙ্খলার 'উল্লেখযোগ্যভাবে অবনতি' হয়েছে। সামগ্রিকভাবে, ৭৮% বাসিন্দারা বলেছেন গত ৫ বছরে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে, ২২% বলেছেন হয়নি।
বিগত কয়েক বছরে, যোগী সরকার উত্তরপ্রদেশে বিনিয়োগ টানতে এবং জিডিপি বাড়াতে বেশ কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের প্রতিবেদন অনুসারে, ব্যবসা করার সুবিধার দিক থেকে ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে উত্তরপ্রদেশ এখন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রয়েছে। লোকালসার্কেল্স-এর সমীক্ষায়, সেই রাজ্যের বাসিন্দাদের ৫১% বলেছেন গত ৫ বছরে রাজ্যে ব্যবসা করার সাচ্ছন্দে 'উল্লেখযোগ্য উন্নতি' হয়েছে, আর ২৫% বলেছেন 'কিছুটা উন্নতি' হয়েছে। Dvd?অন্যদিকে ১৩% জানিয়েছেন ব্যবসা সাচ্ছন্দে 'কোন উন্নতি হয়নি', ৪% বলেছেন যে এটি 'অবনতি হয়েছে', এবং ৫% বলেছেন যে এটি 'উল্লেখযোগ্যভাবে অবনতি হয়েছে'। সামগ্রিকভাবে, উত্তরপ্রদেশের ৭৬% বাসিন্দা মনে করেন যোগী শাসনের অধীনে গত 5 বছরে রাজ্যে ব্যবসা করা সহজ হয়েছে, ২২% মনে করেছেন তা হয়নি।
কোভিড-১৯ মহামারির দ্বিতীয় তরঙ্গ, যোগী সরকারকে কড়া পরীক্ষার মুখে ফেলেছিল। একদিকে উচ্চ জনসংখ্যা, অন্যদিকে দুর্বল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসার ছবি সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যম দেখিয়েছিল। তবে, টেস্ট-ট্রেস-ট্রিট মডেলে দ্রুত রোগীর চাপ কমাতেও সক্ষম হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ। সমীক্ষায়, প্রাপ্যতা, ক্রয়ক্ষমতা এবং গুণমানের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশন রাখা হয়েছিল বাসিন্দাদের কাছে। ৫৩% বাসিন্দাই বলেছেন, যোগী শাসনের অধীনে স্বাস্থ্য পরিষেবার 'উল্লেখযোগ্য উন্নতি' হয়েছে, আর ১৯% বলেছেন 'কিছু উন্নতি' হয়েছে। অন্যদিকে, ৯% বাসিন্দা বলেছেন যে 'কোন উন্নতি হয়নি', আরও ৯% বলেছেন 'অবনতি' হয়েছে এবং বাকি ৮% জানিয়েছেন 'উল্লেখযোগ্যভাবে অবনতি' হয়েছে। অর্থাৎ, সামগ্রিকভাবে, উত্তরপ্রদেশের ৭২% বাসিন্দা মনে করেছেন, গত ৫ বছরে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি হয়েছে, আর ২৬% বলেছেন হয়নি।
যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অভিযোগ বারবার উঠেছে। গত ৫ বছরে উত্তরপ্রদেশে সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের ঘটনা কম ঘটেনি। তবে, কোনও ধরনের বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটেনি। এই প্রশ্নে বাসিন্দাদের ৪৩% বলেছেন, রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিস্থিতি 'উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি' হয়েছে যোগীর আমলে। ২২% বলেছেন 'কিছুটা উন্নতি' হয়েছে। যেখানে, ৭% বাসিন্দা বলেছেন যে 'কোন উন্নতি হয়নি'। অপর ৭% বলেছেন, 'অবনতি' হয়েছে এবং ১৮% বাসিন্দা বলেছেন 'উল্লেখযোগ্যভাবে অবনতি' হয়েছে। অর্থাৎ, সামগ্রিকভাবে, উত্তরপ্রদেশের ৬৫% বাসিন্দারা মনে করেন, বিগত ৫ বছরে যোগী শাসনে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উন্নত হয়েছে, আর ৩৩% মনে করেন হয়নি।
বিদ্যুতের ঘাটতি, ঐতিহাসিকভাবে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা। যোগী সরকারের দাবি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণকে সুবিন্যস্ত করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সমীক্ষায় ৫৫% বাসিন্দাই বলেছেন বিদ্যুৎ সরবরাহের 'উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি' হয়েছে, আর ২১% বলেছেন 'কিছু উন্নতি' হয়েছে। ১২% বাসিন্দা বলেছেন 'কোন উন্নতি হয়নি' ৫% বলেছেন 'অবনতি' হয়েছে। আর ৪% বলেছেন 'উল্লেখযোগ্যভাবে অবনতি' হয়েছে। অর্থাৎ, সামগ্রিকভাবে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দাদের ৭৬% বলেছেন যোগী শাসনে বিগত ৫ বছরে বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নতি হয়েছে, ২১% বলেছেন হয়নি।
বিদ্যুতের মতো উত্তরপ্রদেশের অনেক অঞ্চলে এখনও জল সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে বুন্দেলখন্ড এলাকায় এই নিয়ে বিক্ষোভও রয়েছে। জল সরবরাহের বিষয়ে সমীক্ষায় ২৯ শতাংশ বলেছেন 'উল্লেখযোগ্য উন্নতি', ২৫% বলেছেন 'কিছুটা উন্নতি' হয়েছে। ২১% বাসিন্দা মনে করেন 'কোন উন্নতি হয়নি', ৬% বলেছেন যে এটি 'অবনতি' হয়েছে, এবং ১৪% বলেছেন 'উল্লেখযোগ্যভাবে অবনতি' হয়েছে। ৫% বাসিন্দা এই নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। সামগ্রিকভাবে ৫৪% বাসিন্দা বলছেন যোগী শাসনে তাদের জল সরবরাহের উন্নতি হয়েছে, যেখানে ৪১% এর বিপরীত কথা বলেছেন।
কাশি বিশ্বনাথ ধাম প্রকল্প, এইমস, প্রতিরক্ষা শিল্প করিডোর, কুশিনগর বিমানবন্দর, বুন্দেলখণ্ড এক্সপ্রেসওয়ে, গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মতো বিভিন্ন পরিকাঠামোগত প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে যোগী সরকার। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া বাসিন্দাদের ৫৩% বলেছেন পরিকাঠামো 'উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত' হয়েছে, যেখানে ৩০% বলেছেন 'কিছুটা উন্নতি' হয়েছে। অন্যদিকে ৭% বাসিন্দা বলেছেন 'কোন উন্নতি হয়নি', ৪% বলেছেন 'অবনতি হয়েছে' এবং ৫% বলেছেন 'উল্লেখযোগ্যভাবে অবনতি' হয়েছে। সামগ্রিকভাবে, ৮৩% বাসিন্দারা বলেছেন, যোগী শাসনে গত ৫ বছরে তাদের রাজ্যের পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে, ১৬% অন্য কথা বলেছেন।
২০২০ সালে জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, উত্তরপ্রদেশের সাক্ষরতার হার ৭৩%। রাজ্য সরকার শেষ রাজ্য বাজেটে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের জন্য ১৮,১৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছে। রাজ্যের বাসিন্দাদের ২৮% সমীক্ষায় বলেছেন, স্কুল শিক্ষায় 'উল্লেখযোগ্য উন্নতি' হয়েছে, ২৪% বলেছেন 'কিছুটা উন্নতি' হয়েছে। অপরপক্ষে, ১৬% বলেছেন যে 'কোন উন্নতি হয়নি', ১০% বলেছেন 'অবনতি হয়েছে' এবং ৮% বলেছেন এটি 'উল্লেখযোগ্যভাবে অবনতি' হয়েছে। ১৪ শতাংশ এই বিষয়ে মত প্রকাশ করেননি। অর্থাৎ, সামগ্রিকভাবে ৫২% ইউপিবাসী বলছেন যে যোগী-শাসনে রাজ্যে স্কুল শিক্ষার উন্নতি হয়েছে, ৩৪% এর বিরোধিতা করেছেন।
গাজিয়াবাদ, লখনউ, নয়ডার মতো বিশ্বের বেশ কয়েকটি সবচেয়ে দূষিত শহর রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। এই দূষণ অব্যাহত থাকলে বাসিন্দারা তাদের গড় আয়ু ১০ বছরেরও বেশি করে হারাবেন। বিষাক্ত বাতাসের বিপদ রোধে যোগী সরকার কিছু প্রয়াস নিলেও, জনগণ স্পষ্টতই এই ক্ষেত্রে যোগী সরকারের কাজ নিয়ে খুশি নন এবং তারা সরকারের পরের মেয়াদে এই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার হিসেবে দেখতে চান। সমীক্ষায় বায়ুর গুণমান উন্নত করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টাকে ১৬% বাসিন্দা বলেছেন 'চমৎকার' এবং ১৯% বলেছেন 'ভাল'৷ ২৬% বাসিন্দা বলেছেন যে 'প্রচেষ্টা হয়েছে কিন্তু ফল পাওয়া যায়নি'। আর, ২৭% বলেছেন, সরকার 'কিছুই করেনি'। ৮% বলেছেন সরকার 'বিষয়টিকে আরও খারাপ করেছে'। ৪ শতাংশ এই বিষয়ে মতামত দেননি। সামগ্রিকভাবে মাত্র ৩৫% বাসিন্দারা বলেছেন, যোগী শাসনের বিগত ৫ বছরে রাজ্যের বায়ুর গুণমান উন্নত হয়েছে। ৬১% বলেছেন, তা হয়নি।
শেষ প্রশ্ন ছিল গত ৫ বছরে যোগী সরকারের সামগ্রিক কাজকর্মের বিষয়ে। ৫০% বাসিন্দা জানিয়েছেন. যোগী সরকারের তাদের 'প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গিয়েছে'। ১৮% বলেছেন 'প্রত্যাশাগুলি পূরণ করেছে'। ২৮% বলেছেন, যোগী সরকারের পারফরম্যান্স 'প্রত্যাশার কম'। ৪ শতাংশ কোনও মতামত দেননি। অর্থাৎ, সামগ্রিকভাবে, উত্তরপ্রদেশের ৫০% বাসিন্দাই মনে করেন যোগী আদিত্যনাথ সরকার, গত ৫ বছরে তাদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গিয়েছে।