অন্ধত্ব অথবা মৃত্যু, ভারতের ৩ শহরে করোনা রোগীদের তাড়া করছে বিরল সংক্রামক রোগ
বেশ কয়েকটি দেশে টিকাকরণ চলছে। আমাদের দেশেও ভ্যাকসিন বের হল বলে। এতে করে কোভিড মহামারি শেষ হওয়ার আশা দেখছে মানুষ। কিন্তু, তারমধ্য়েই করোনার ধাক্কায় মাথাচাড়া দিল এক বিরল ও মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এখনও পর্যন্ত ভারতের দিল্লি, মুম্বই এবং আহমেদাবাদে এই রোগ ধরা পড়েছে। তবে এটি কোভিডের মতো ভাইরাসঘটিত নয়, ছত্রাকজনিত রোগ। চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগে অন্ধত্ব নেমে আসতে পারে, কিংবা মৃত্যুও হতে পারে।
| Published : Dec 18 2020, 10:11 PM IST / Updated: Dec 28 2020, 12:15 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
মারাত্মক হলেও খুবই বিরল
ডাক্তাররা জানিয়েছেন এই রোগের নাম 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাল ডিজিজ' বা বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় মিউকর্মাইকোসিস। তাঁরা বলেছেন, এই রোগটি মারাত্মক হলেও খুবই বিরল। কোভিড-১৯ মহামারীর আগে ভারতে এই ছত্রাকঘটিত সংক্রমণ প্রায় দেখা যেত না বললেই চলে। কিন্তু, নভেল করোনভাইরাস সংক্রমণ জয় করে ওঠা রোগীদের মধ্যে যেসব জটিলতা দেখা যাচ্ছে, তাতে নতুন সংযোজন এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাল ডিজিজ।
কী এই মিউকর্মাইকোসিস?
আগে এই রোগ পরিচিত ছিল জাইগোমাইকোসিস নামে। 'মিউকর্মাইসেটেস' নামে একটি মোল্ড গোত্রের ছত্রাক সংক্রমণের ফলে এই রোগ হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন সাধারণত এই সংক্রমণ-এর শুরুটা হয় নাক থেকে। তারপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে চোখে এবং মুখের অন্যান্য অংশে।
এই রোগ কী প্রাণঘাতি?
ডাক্তাররা বলেছেন দ্রুত রোগ নির্ণয় করে চিকিত্সা করলে রোগী সহজেই সুস্থ হয়ে ওঠে। আর যদি ফেলে রাখা হয়, তাহলে সংক্রমণের ফলে দৃষ্টিশক্তি হারানো, নাক কিংবা চোয়ালের হাড় ক্ষয়ে যাওয়া, এমনকী মৃত্যুও হতে পারে।
কোভিড রোগীদের তাড়া করছে মিউক্রোমাইকোসিস
দিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের ইএনটি সার্জনরা জানিয়েছেন গত ১৫ দিনের মধ্যে তাঁরা ১৩ জন রোগীর ক্ষেত্রে কোভিড মুক্ত হওয়ার পরই মিউক্রোমাইকোসিস আক্রান্ত হতে দেখেছেন। চিকিৎসকরা বলছেন এই সংক্রমণ বিরল হলেও নতুন নয়। তবে নতুন সমস্যা হল কোভিড আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে মিউক্রোমাইসিস সম্ভাবনা বেশি থাকছে।
কাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি?
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার কারণে বা নিয়মিত ওষুধ সেবনের ফলে যাদের শরীরে রোগ-জীবাণু এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা কমে যায়, এই রোগ মূলত তাদের ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতি হয়ে ওঠে। সমস্যা হল, কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের ঠিক এই কারণেই এই ছত্রাকজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। এছাড়া ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য ক্রনিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও এই সংক্রমণের উচ্চ সম্ভাবনা থাকে।
এখন পর্যন্ত আক্রান্ত কতজন?
দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালেই ১৩টি কেসের কথা জানা গিয়েছে। এর পাশাপাশি মুম্বই থেকেও বেশ কয়েকটি কোভিড থেকে মিউক্রোমাইকোসিস সংক্রণের কেস রিপোর্ট করা হয়েছে। এই রোগের কারণে এখনও পর্যন্ত ৪৪ জনকে আহমেদাবাদ সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
কী কী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?
চিকিৎসকরা বলছেন, এই ক্ষেত্রেও প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোভিডের মতোই। ভাল স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা, বাইরে বের হলে সবসময় মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোওয়া, চোখ এবং নাক স্পর্শ করা এড়িয়ে চলার মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। নাক, চোখ বা গলাতে কোনও ফোলা ভাব লক্ষ্য করলে চিকিৎসক-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার। চিকিত্সার জন্য দ্রুত সনাক্তকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।