বিশ্বের প্রথম প্রতিষেধকের মডেল ছিলেন ভারতের এক রানি, ঘুরে দেখুন অতীতের সেই দিনগুলি
- FB
- TW
- Linkdin
১৮০৫ সালে তৃতীয় কৃষ্ণরাজ ওয়াদিয়রের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল দেবজম্মনির। যখন বিয়ে হয় তখন বর আর বধূ দুজনেরই বয়স মাত্র ১২। কিন্তু আগামী দিনে তাঁরাই এই অনন্য নজির তৈরি করলেন। তখন ভারতে চলছে ব্রিটিশ রাজ। আর ভারতীয়দের টিকাকরণের বিষয়ে রীতিমত উদ্যোগী হয়েছিল ব্রিটিশ প্রশাসন। কিন্তু সেই সময় ভারতের অধিকাংশ মানুষই অন্ধ কুসংস্কারাচ্ছ ছিলেন।
ইংল্যান্ডের চিকিৎসক এডওয়ার্ড জেনার গুটিবসন্তের টিকা আবিষ্কার করেছিলেন। গরুর শরীরে গুটিবসন্তের পুঁজ সংগ্রহ করেই তৈরি হয়েছিল টিকা। যা ভালো চোথে নেয়নি তৎকালীন ভারতীয় সমাজ। কিন্তু রাজশক্তিও হাল ছাড়তে নারাজ। আর ঠিক সেই সময়ই ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন দেবজম্মনি। রাজবাড়ির নাবালিকা বধূ। ২০০ বছর আগেই সেই দিনে এন অন্য ইতিহাস রচনা করেছিলেন তিনি।
দেবজম্মনি গুটি বসন্ত রোগের টিকা নিজে গ্রহণ করেন। তারপর সেটি টিকা জনপ্রিয় করতে উদ্যোগী হয়েছিল। সেই কারণেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পনির উদ্যোগে আঁকা হয়েছিল এই তৈল চিত্র। বর্তমানে যার দাম প্রায় ৪ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষ ডলার। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ ডাক্তর নাইজেল চ্যান্সেলার মনে করেন টিকা প্রচনে ভারতীয় রানির ভূমিকার কথাই আঁকা রয়েছে এই ছবিতে।
ইতিহাসবিদ চ্যান্সেলরের মতে রানির ছবিটিতে শুধু রানির কথাই বলা নেই। একই সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে বসন্ত রোগের হাত থেকে নিস্তার পেতে বিট্রিশ রাজের প্রচেষ্টার কথাও। মহামারির আকার নেওয়া গুটি বসন্ত বা স্মল পক্স নিয়ে রীতিমত উদ্বেগ ছিল বিট্রিশরা। তাই যে করেই হোক সেই রোগের হাত থেকে নিস্তার পেতে চাইল তারা। পাশাপাশি সেই প্রচেষ্টা যাদের তাদের দখলিকৃত দেশগুলিও সামিল হয় তারও প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল।
তৎকালীন মহীশূরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রধান শত্রু টিপু সুলতান। টিপু সুনতানকে হারানোরও পরই মহীশূরের সিংহাসনে বিট্রিশরা বসিয়েছিল তাদের অনুগত ওয়াদিয়র রাজপরিবারকে। আর ঠিক সেইসময়ই গোটা দেশ জুড়ে মহামারির আকার নিয়েছিল গুটি বসন্ত। সেই সময় এই দেশের মানুষ তাকে রোগ বলে মনে করত না। অনেকেই দেবীর দয়া বলে মনে করতেন। কোথাও শীতলার পুজো হত, কোথাও হত মারিয়াম্মার পুজো।
দেশের মানুষকে সেই অন্ধ কুসংস্কারের হাত থেকে দূর করতে এগিয়ে এসেছিলেন দেবজম্মনি। রক্ষণশীল রাজপরিবের বধূ হাসি মুখেই দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন ব্রিটিশ শিল্পির সামনে। সঙ্গে ছিলেন রাজার প্রথম পক্ষের স্ত্রী আর ঠাকুমা। অধ্যাপকের কথায় রাজার প্রথম পক্ষের স্ত্রী আক্রান্ত হয়েছিলেন গুটিবসন্তের। সেই ফুটে উঠেছে তাঁর মুখে। চ্যান্সেলর আরও একটি কথা বলেছেন, সেই সময় রাজা ও রানি দুজনের বয়স অল্প থাকায় তাঁরা কোনও কিছু চিন্তাভাবনা না করেই স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।