- Home
- India News
- ফের চিনের অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ, দক্ষিণ প্যাংগং লেকের সব পোস্টের দখল ভারতীয় বাহিনীর হাতেই
ফের চিনের অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ, দক্ষিণ প্যাংগং লেকের সব পোস্টের দখল ভারতীয় বাহিনীর হাতেই
গত ১৫ জুন দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের পর ফের নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে লাদাখ সীমান্তে। প্রায় দেড় মাস শান্তির পরে ফের গালওয়ানে চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে ভারত ও চিনের সেনা। একটি সূত্রের দাবি, পরিস্থিতি এমন তৈরি হয়েছে যে পরস্পরকে নিশানা করে বসে রয়েছে দু’দেশের ট্যাঙ্কবাহিনী। অন্য দিকে, নজিরবিহীন ভাবেই ভারতের বিরুদ্ধে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে অনুপ্রবেশের অভিযোগে সরব হয়েছে এবার বেজিং।
- FB
- TW
- Linkdin
সাংহাই কোঅপরাশেন অর্গানাইজেশনের বৈঠকে অংশ নিতে রাশিয়া রওনা দিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। কিন্তু সেই বৈঠকে চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনও বৈঠক হবে না বলে সূত্রের খবর। বিশেষজ্ঞদের মত, লাদাখের প্যাংগংয়ে উত্তেজনার মাঝেই চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে কড়া বার্তা দেওয়ার লক্ষ্যেই রাজনাথ সিংয়ের এই সিদ্ধান্ত।
শনিবার রাতে প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তে স্থিতাবস্থা নষ্টের চেষ্টা করে চিনা সেনার দল। কিন্তু ভারতীয় সেনার তৎপরতায় তা ভেস্তে যায়। পিছু হটতে বাধ্য হয় লালফৌজ। এরপরই মঙ্গলবার দু'দেশের কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হয়। বুধবারও দুই দেশের সেনার মধ্যে বৈঠক হচ্ছে। প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বৈঠকে।
এদিকে বড় সাফল্য ভারতীয় সেনার৷ পূর্ব লাদাখের প্যাংগং লেকের দক্ষিণে সব কটি পোস্ট দখল করেছে ভারতীয় সেনা৷ সূত্রের খবর, প্যাংগং লেকের দক্ষিণে সব পজিশন ও পোস্ট এখন ভারতের দখলে চলে এসেছে৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে এগিয়ে ভারতীয় সেনা৷
পূর্ব লাদাখ নিয়ে প্রায় চার মাস ধরে চলছে চিনের সঙ্গে টানাপড়েন। প্যাংগং লেকের দক্ষিণে চিনা সেনার প্ররোচনামূলক গতিবিধির জেরে নতুন করে ভারত-চিন সীমান্ত এখন উত্তপ্ত৷ গত ২৯ ও ৩০ আগস্ট রাতে চিন সেনা ভারতে ঢোকার চেষ্টা করে৷ পয়লা সেপ্টেম্বর রাতেও একই ভাবে আগ্রাসনের চেষ্টা করে পিপলস লিবারেশন আর্মি৷
কিন্তু প্যাংগং লেকের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দখল নিয়েছে ভারতীয় সেনা। যার জেরে চিনা সেনার গতিবিধির উপর আরও কড়া নজরদারি চালাতে সক্ষম হবে ভারত। ভারত দক্ষিণ প্যাংগং লেক সংলগ্ন এলাকার চুশুল সাবসেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ চূড়ায় নিজেদের পা জমিয়েছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি স্ট্র্যাটেজিকাল রিজ পয়েন্টেও ভারতীয় সেনা পৌঁছে গিয়েছে। আর এর জেরে চিনা সেনা ভারতীয় সেনা ফায়ারিং রেঞ্জের মধ্যে চলে এসেছে।
জানা যাচ্ছে, ২০ আগস্ট থেকেই ভারতীয় সেনার কাছে ইনটেলিজেন্স ইনপুট ছিল যে প্যাংগংয়ের দক্ষিণ প্রান্তে একটি পাহাড়ে কব্জা করতে চাইছে চিনা সেনা। সেই মতো ওই এলাকায় পাহাড়া বাড়িয়েছিল ভারতীয় সেনা। ২৯-৩০ অগাস্ট রাতে চিনা সেনার প্রায় ৫০০ জওয়ান ওই এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু অনেকদিন আগে থেকেই ওই এলাকায় ভারতীয় সেনা কড়া নজর রেখেছিল। চিনা সেনার অনুপ্রবেশের চেষ্টা রুখে দিতে পারলেও ভারতীয় সেনা এক জওয়ান শহিদ হয়েছেন বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। জানা যাচ্ছে, আরেক জওয়ান গুরুতর আহত হয়েছেন।
জানা গিয়েছে, এবার সীমান্তে শহিদ হওয়া সেনা জওয়ান স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স-এর ছিলেন। তিনি মূলত ছিলেন তিব্বতের। তবে সেনার পক্ষ থেকে এখনও সেই জওয়ানের শহিদ হওয়ার কোনও খবর দেওয়া হয়নি। তিব্বতের সংসদের নির্বাসিত সদস্য নামগাল ডোলকার সেই জওয়ানের শহিদ হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি আরও এক জওয়ানের আহত হওয়ার খবরও দিয়েছেন।
২৯-৩০ অগাস্ট রাতের পর ৩১ তারিখেও লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকার চেষ্টা করেছিল চিন সেনা। এর পর ১লা সেপ্টেম্বরও প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে লাল ফৌজ। তবে ভারতীয় সেনার কাছে আগে থেকেই খবর ছিল। ফলে চিনের অনুপ্রবেশ রুখে দিতে সচেষ্ট ছিলেন ভারতীয় সেনা জওয়ানরা।
এদিকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে চিনা ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল ভারতীয় সেনা৷ লাদাখের প্যাংগং তাসো লেকের কাছে ভারত এবং চিনা সেনাদের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ানোর ঘটনায় এমনই দাবি করেছে নয়াদিল্লির চিনা দূতাবাস৷ একই সঙ্গে দাবি করা হয়েছে, সীমান্তে মোতায়েন করা নিজেদের বাহিনীকে যাতে সংযত করা হয়, সেই জন্য ভারতের কাছে অনুরোধও করেছে চিন৷ এ যাবৎ আন্তর্জাতিক মহলে চিনের আগ্রাসনের কথাই বলে এসেছে নয়াদিল্লি, এ বার উল্টে ভারতের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলল চিন।
চিনা দূতাবাসের তরফে বলা হয়, ‘৩১ অগাস্ট প্যাংগং তাসো লেকের দক্ষিণ প্রান্তে এবং চিন-ভারত সীমান্তের পশ্চিম অংশে রেকিন পাসের কাছে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতীয় সেনা চিনা ভূখণ্ডে প্রবেশ করে উত্তেজনায় প্ররোচনা দেয়৷ দুই দেশ ঐক্যমতের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল, ভারতই তা ভঙ্গ করেছে।’ ভারতই শান্তি ভঙ্গের চেষ্টা করছে বলে গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এর পাল্টা ভারতের তরফে বলা হয়েছে, চিনের উদ্দেশে নয়া দিল্লি আহ্বান করেছে, যাতে উস্কানিমূলক পদক্ষেপ থেকে নিজেদের বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার মধ্য়ে রাখে।
এর আগে ভারতীয় সেনার তরফে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, প্যাংগংয়ে নতুন করে প্ররোচনা দিয়েছিল লালফৌজই। সীমান্তের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য চিনা সেনা ‘প্ররোচনামূলক সামরিক গতিবিধি’ চালিয়েছে। ভারতীয় সেনার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্যাংগং লেকের দক্ষিণ তীরে চিনা সেনার গতিবিধি আগেই রুখে দিয়েছে ভারতীয় বাহিনী, আমাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ করেছে এবং সীমান্তে একতরফাভাবে তথ্য পরিবর্তনের যে উদ্দেশ্য ছিল চিনের, তা আটকে দিয়েছে।’