Vehicle Scrappage Policy - কী এই নীতি, এতে করে কী লাভ হবে আমার-আপনার, জানুন বিস্তারিত
- FB
- TW
- Linkdin
পুরানো, অযোগ্য যানবাহনগুলিকে পর্যায়ক্রমে বাতিল করার নীতিই হল ভেহিকল স্ক্র্যাপেজ নীতি। নীতি অনুসারে কোনও যানবাহনের নিবন্ধনের সময় শেষ হওয়ার পরই অবিলম্বে স্ক্র্যাপেজ নীতি কার্যকর করা হবে। একটি বাধ্যতামূলক ফিটনেস পরীক্ষা দিতে হবে সেই গাড়িটিকে। ভারতের মোটর আইন অনুযায়ী, কোনও যাত্রীবাহী গাড়ির আয়ু ১৫ বছর এবং বাণিজ্যিক যানবাহনের আয়ু ১০ বছর ধরা হয়। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গড়করি জানিয়েছেন, ভারতে আনুমানিক ৫১ লক্ষ হালকা মোটরগাড়ি আছে যেগুলির বয়স ২০ বছরের বেশি। ১৫ বছরের বেশি পুরনো হালকা মোটরগাড়ির সংখ্যা আরও ৩৪ লক্ষের মতো। এছাড়াও, প্রায় ১৭ লক্ষ মাঝারি এবং ভারী বাণিজ্যিক যানবাহন রয়েছে যেগুলি বৈধ ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই চলছে। নয়া নীতি ই পুরনো যানবাহনগুলোকে পরিকল্পিতভাবে বাতিল করতে সাহায্য করবে। এমনকী, এর বদলে কিছু আর্থিক প্রণোদনাও পাওয়া যাবে।
ভেহিকল স্ক্র্যাপেজ পলিসির উদ্দেশ্য হল একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুরনো যানবাহনগুলিকে বাতিল করে, তার বিভিন্ন অংশ ফের নতুন গাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা। ২০২১ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটের সময় ই নীতিটির ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেই সময় তিনি এতে করে শুধু যেবায়ু দূষণ কমবে, তা নয়। পুরোনো যানবাহনগুলি বাতিল করলে, তা ইস্পাত, প্লাস্টিক এবং তামার মতো গাড়ির মূল উপকরণগুলির পুনরায় ব্যবহারে সাহায্য করবে। পাশাপাশি, দেশে যানবাহন বিক্রির প্রসার ঘটবে।
না, তবে আয়ু পার করা সব যানবাহনকেই একটি বাধ্যতামূলক ফিটনেস পরীক্ষা দিতে হবে। সেই পরীক্ষার ফল নির্ধারণ করবে, সেই যানবাহনটি আর রাস্তায় নামার উপযুক্ত কিনা। যদি গাড়িটি ফিটনেস পরীক্ষায় ফেল করে, তবে এর রেজিস্ট্রেশন পুনর্নবীকরণ করা হবে না। ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে, ৫ বছরের জন্য একটি পুনর্নবীকরণ সনদ দেওয়া হবে। তারপর প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ফিটনেস পরীক্ষা দিতে হবে।
কোনও যানবাহন ফিটনেস পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে, তাকে এন্ড অফ লাইফ ভেহিকল বা 'ইওএলভি' (EOLV) বলে গণ্য করা হবে। সোজা কথায়, মালিককে আরভিএসএফ বা নিবন্ধিত যানবাহন স্ক্র্যাপিং সুবিধাগুলিতে গাড়িটি স্ক্র্যাপ বা বাতিল করার সুযোগ দেওয়া হবে। তবে গাড়ির মালিক যে সমস্যাগুলির জন্য ফিটনেস পরীক্ষায় গাড়িটি ফেল করেছে, সেগুলি সংশোধন করার সুযোগ দেওয়া হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে মোট তিনবার ফিটনেস পরীক্ষা করে তবেই কোনও গাড়িকে 'ইওএলভি' বলে ঘোষণা করা হবে।
'ইওএলভি' বলে ঘোষিত কোনও গাড়ি, তার মালিক রাস্তায় চালাতে পারবেন না। তবে তিনি যদি তার পুরোনো গাড়িটি স্ক্র্যাপ করেন, তবে কিন্তু তার কিছু আর্থিক লাভ হবে। ভেহিকল স্ক্র্যাপেজ নীতি অনুসারে পুরনো গাড়িটির শোরুম মূল্যের ৪ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ মালিককে দেওয়া হবে। তিনি যদি আবার কোনও নতুন যানববাহন কিনবেন তখন আবার পথকরে ছাড়ের সুবিধা পাবেন। ব্যক্তিগত গাড়ি হলে পথকরে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় মিলবে, আর বাণিজ্যিক যানবাহনে মিলবে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। এছাড়াও, নতুন গাড়ি কেনার সময় যারা স্ক্র্যাপেজ সার্টিফিকেট দেখাতে পারবেন, তাদের ক্রয় মূল্যে ৫ শতাংশ ছাড় দিতে এবং রেজিস্ট্রেশন ফি মকুফ করার জন্য গাড়ি নির্মাতাদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
আয়ু ফুরানো যানবাহনগুলি আগে পরিবেশকে যতটা দূষিত করত, আয়ু ফুরানোর পর তার থেকে অনেক বেশি দূষণ সৃষ্টি করে। কাজেই ই নীতি ভারতের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ অনেকটাই কমাতে সাহায্য করবে। এমনিতে, প্রযুক্তির সহায়তায় তা করতে গেলে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ হত, ভেহিকল স্ক্র্যাপেজ নীতির ফলে তা সাশ্রয় হবে।
মোদী সরকার সাফ জানিয়েছে, দেশে একটি বৃত্তাকার অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি তাদের লক্ষ্য। ভারতের যানবাহন স্ক্র্যাপিং নীতি সেই উদ্যোগের তালিকায় সাম্প্রতিক সংযোজন। এই নীতির ফলে, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক-সহ যানবাহনে ব্যবহৃত মূল সামগ্রীগুলি পুনরুদ্ধার করা যাবে। বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করা যা পরে যানবাহন উত্পাদন সহ বিভিন্ন শিল্পে ফের ব্যবহার করা যাবে। ফলে, এইসব শিল্পের মূল উপাদানগুলির খরচ অনেকটাই কমে যাবে। যা আখেরে দ্রব্যমূল্য কমাতে সহায়ক হবে।
আগেই বলা হয়েছে, ই নীতি গ্রহণের পিছনে সরকারের অন্যতম লক্ষ্য, দেশে যানবাহনের বিক্রি বৃদ্ধি। স্ক্র্যাপিং দেশে অতিরিক্ত বিনিয়োগ টানবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ফলে গাড়ি শিল্পে েবং সেইসঙ্গে নিবন্ধিত যানবাহন স্ক্র্যাপিং সুবিধা বা আরভিএসএফগুলিতে (RVSFs) প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশে প্রায় ৫০-৬০ টি নিবন্ধিত যানবাহন স্ক্র্যাপিং সুবিধা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।