- Home
- World News
- International News
- ১৫টি হাতির ৫০০ কিমি'র অবাক যাত্রা - ঘুমিয়ে উঠে আবার কোথায় চলল তারা, দেখুন
১৫টি হাতির ৫০০ কিমি'র অবাক যাত্রা - ঘুমিয়ে উঠে আবার কোথায় চলল তারা, দেখুন
গত বুধবার, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল। কুনমিং শহরের উপকন্ঠে একটি বনের মধ্যে সার সার দিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে বেশ কয়েকটি হাতি। চিনের এই হাতির পালের খ্যাতি এখন বিশ্বজোড়া। কেন? কারণ, হাতিদের স্বাভাবিক নিয়ম ভেঙে এরা এগিয়ে চলেছে কিসের টানে, তা কেউ জানে না। মাঝে এক জায়গায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল। সেই ছবিটিই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এখন আবার তারা সেই একই দিকে এগিয়ে চলেছে। দিন কয়েক আগেই দলছুট হয়ে পড়েছিল একটি দাঁতাল পুরুষ হাতি। সে এখনও পালের সঙ্গে মিলতে পারেনি। তবে সেও ওই একই দিকে এগিয়ে চলেছে। ছবিতে ছবিতে জেনে নেওয়া যাক এই হাতিদের গল্প -
- FB
- TW
- Linkdin
হাতি সাধারণত তাদের বাসস্থান থেকে খুব বেশি দূরে যায় না। এই হাতির পালটি চিনের ইউনান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এক সংরক্ষিত অরণ্যে থাকত। কিন্তু, ১৫ মাস ধরে তারা সেই স্থান ছেড়ে একটানা উত্তর দিকে এগিয়ে এসেছে।
প্রথমে পালে ছিল ১৭ থেকে ১৮টি হাতি। তাদের মধ্যে ৩টি শিশু ৩ থেকে ৪টি দাঁতাল এবং অন্যগুলি মেয়ে হাতি। এতদিনের পথে বেশ কয়েকটটি হাতি দলছুট হয়ে ফিরে গিয়েছে, এগোয়নি। শেষ পর্যন্ত দলে ১৬টি হাতি ছিল। তার মধ্যে সম্প্রতি আরেকটি দাঁতাল পুরুষ হাতি দলছুট হয়ে গিয়েছে। তবে সে চলা থামায়নি।
ইউনান প্রদেশের সংলগ্ন মায়ানমারের কাচিন ও সান প্রদেশ। দুই দেশের সীমান্ত এলাকার জঙ্গলের মধ্য দিয়ে এই ১৫টি এশিয়ান হাতি দিনের পর দিন ধরে চলেছে পাড়ি দিচ্ছে খেয়াল খুশি মতো।
তাদের চলার পথে পড়েছে ফসলের খেত, একের পর এক জনপদ, কাঁচা রাস্তা, পাকারাস্তা - সব অতিক্রম করে তারা এগিয়ে চলেছে। এমনকী কুনমিং শহরের রাস্তা ধরেও তাদের হাঁটতে দেখা গিয়েছে।
এইভাবে হাঁটতে হাঁটতে তারা নিজেদের বাসস্থান থেকে ৫০০ কিলোমিটারের বেশি পাড়ি দিয়ে কুনমিং প্রদেশের রাজধানী উপকণ্ঠে এসে পৌঁছায়। সেখানে দঙ্গলের মধ্য়ে ক্লান্ত হাতির দল একটা লম্বা ঘুম লাগিয়েছিল। এই ঘুমেরই ড্রোন ফুটেজ ভাইরাল হয়েছিল।
চিনের জাতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত শেষ খবর অনুযায়ী শনিবার, কুনমিং-এর শহরতলির ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ইউশি শহরের শিজি এলাকায় হাতির পালটিকে দেখা গিয়েছিল চিহ্নিত করা হয়েছিল। আর একাকী দাঁতাল পুরুষ হাতিটি এখনও রয়েছে কুনমিংয়ের উপকণ্ঠে, ১৬ কিলোমিটার দূরে।
এতদিন তারা ক্রমাগত উত্তর দিকে এগোচ্ছিল। কুনমিং-এর বাইরের জঙ্গলে ঘুম দিয়ে উঠে, এখন তারা এগিয়ে চলেছে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে। তাদের ভ্রমণের এই দিক পরিবর্তনকে ভাল লক্ষণ হিসাবে দেখছে চিনা কর্তৃপক্ষ। তাদের আশা, এবার হাতির পালটি তাদের বাড়িতে, অর্থাৎ কুনমিংয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে শিশুয়ানবাংনা দাই অরণ্যে ফিরে যাবে।
একেবারে প্রথম থেকে চিনা কর্তৃপক্ষ হাতির পাল এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। তাদের চলার পথে গ্রাম পড়লে গ্রামের রাস্তা আকে অন্যদিকে খাবার ফেলে তাদের গ্রামের দিক থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তা সত্ত্বেও অবশ্য বিভিন্ন খামারে, গ্রামে, রিটায়ারমেন্ট হোমে হাতিগুলি খাবারের জন্য হানা দিয়েছে। এমনকী, কুনমিং শহরের রাস্তা ধরেও তাদের হাঁটতে দেখা গিয়েছে। নষ্ট হয়েছে বহু ফসল। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত এই হাতিদের জন্য ১০ লক্ষ মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত হাতিগুলির আক্রমণে কেউ হতাহত হননি।
তবে এখনও পর্যন্ত সবকটি হাতির স্বাস্থ্যই ভাল রয়েছে। হাতি তাড়ানোর জন্য গ্রামবাসীরা যাতে হল্লা না করে, পটকা না ফাটায়, তার জন্য কঠোর আদেশ জারি করা হয়েছে। ১৪ টি ড্রোন এবং ৫০০ জন কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে, হাতিগুলিকে নিরাপদ রাখতে। একেক দিনে প্রায় আড়াই টন করে খাদ্য দেওয়া হচ্ছে তাদের।
তবে, ওই এলাকায় অবিরাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সোমবার আবার রয়েছে ড্রাগন বোট উত্সব। যাকে কেন্দ্র করে প্রচুর জনসমাগম হওয়ার কথা।হাতিগুলি হঠাৎ সেইদিকে চলে আসলে বিপদ ঘটতে পারে। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।
কেন এই হাতিগুলি তাদের নিজস্ব বাসস্থান ছেড়ে এরকম নিরুদ্দেশ যাত্রা শুরু করল? তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিশ্ব বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ প্রচারের পরিচালক ইভান সান-এর মতে, সম্ভাব্য কারণ হতে পারে খাদ্যের অভাব, বা হাতিদের সংখ্যা বৃদ্ধি। তবে তিনি মনে করছেন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে বাসস্থানের অভাব। অপরিকল্পিত নগরায়নের জন্য বন্য প্রাণীদের প্রাকৃতিক আবাস হারিয়ে যাচ্ছে। তার জন্য়ই হাতিদের এই অবাক যাত্রা বলে মনে করছেন তিনি। বন্যপ্রাণ এবং মানুষের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব থাকাটা, দুই পক্ষের জন্যই ভাল বলে দাবি করেছেন তিনি।