- Home
- World News
- International News
- নাক-গলা-ফুসফুস হয়ে কীভাবে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস, জানুন ছবিতে ছবিতে
নাক-গলা-ফুসফুস হয়ে কীভাবে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস, জানুন ছবিতে ছবিতে
- FB
- TW
- Linkdin
নাক এবং গলা
সংক্রমণের শুরুটা হয় নাক এবং গলা দিয়েই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির সঙ্গে নিঃসৃত ক্ষুদ্রাদিক্ষুদ্র দলের ফোঁটা বা ড্রপলেট অপর ব্যক্তির নাক, মুখ, বা চোখের মাধ্যমে শ্বসনতন্ত্রে প্রবেশ করে সার্স-কোভ-২। শ্বাসনালির উপরের দিকের দেওয়ালে এই ভাইরাস এসিই-২ রিসেপ্টর (শরীরের যে কোষগুলিকে করোনাভাইরাস আঁকড়ে ধরতে পারে)-এ আটকে যায়। তারপর কোষগুলিকে আক্রমণ করা শুরু করে, এবং জীবন্ত কোষের সংস্পর্শে এলেই সংখ্যায় বহুগুণে বাড়তে থাকে। এই পর্যায়ে আক্রান্ত অত্যন্ত সংক্রামক হলেও কোনও উপসর্গ নাও দেখা যেতে পারে। অন্যান্য ক্ষেত্রে, জ্বর, শুকনো কাশি, গলা ব্যথা, গন্ধ এবং স্বাদ না পাওয়া, বা মাথা এবং শরীরে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়ায় ভাইরাসটিকে এই পর্যায়েই মেরে ফেলতে সক্ষম হয়। আরও গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে ভাইরাসটি এগিয়ে যায় ফুসফুসের দিকে।
ফুসফুস
অ্যালভিওলি অর্থাৎ ফুসফুসে যে বায়ু থলি থাকে তাও এসিই-২ রিসেপ্টরে সমৃদ্ধ। ফলে ভাইরাসগুলি ফুসফুসের দেওয়ালে আটকে যেতে অসুবিধা হয় না। এই পর্যায়ে আবার শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা ভাইরাসটিকে রুখতে গিয়েই শরীরকে বিপদে ফেলে দেয়। রোগ প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়ার কারণেই ফুসফুসে তৈরি হয় তরল যার পরিমাণ ভাইরাসের সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে এবং শ্বাসকষ্টও বেড়ে যায়। এই পর্যায়ে রোগীর দেহে, কাশি, জ্বর এবং ব্যাপক শ্বাসকষ্ট-সহ নিউমোনিয়ার সমস্ত লক্ষণ দেখা যায়। কিছু কিছু রোগী এই অবস্থায় সামান্য চিকিৎসা সহায়তা নিয়েই সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইটা জিতে যান। তবে অন্যদের ক্ষেত্রে অ্যাকিউট রেসপিটারি ডিস্রেস সিনড্রোম বা এআরডিএস তৈরি হয়। যার ফলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে এবং দেহে অক্সিজেনের চাহিদা তৈরি হতে শুরু করে। এই সব রোগীর প্রাণের ঝুঁকি থাকে এবং শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য ভেন্টিলেটর-এর প্রয়োজন হয়।
এরপর কী?
এখানেই পরিস্থিতিটা জটিল হয়ে ওঠে। বলা যেতে পারে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে শরীরের রোগ ভাইরাসের এই আক্রমণে প্রতিরোধ বাহিনীর মাথা খারাপ হয়ে যায়। সে 'সাইটোকাইন ঝড়' নামক একটি অনিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া দেয়। ভাইরাস না থাকলেও শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে সে আক্রমণ করে, তাতে সেই অঙ্গগুলির ব্যাপক ক্ষতি হয়। অনেক বিজ্ঞানী বা গবেষকরাই মনে করেন, এই 'সাইটোকাইন ঝড়' এই দেহের অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি হয়, ভাইরাসটি সেই অঙ্গগুলিকে আক্রমণ করে না। তবে অধিকাংশ গবেষকদের মতটা আলাদা।
হৃৎপিণ্ড
শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে সাড়া দেহে অক্সিজেন পাঠানোর কাজ করে থাকে। চিনে কোভিড-১৯ রোগীদের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে অ্যারিথমিয়াস অর্থআৎ অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং ২০ শতাংশ রোগীদের ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্র সামান্য বিকল হয়েছে। সারা বিশ্বেই দেখা গিয়েছে স্বাভাবিকভাবে শ্বাসকষ্ট নেই এমন কোভিড রোগীর হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এসিই-২ রিসেপ্টর রক্তনালীতেও থাকে। অনেক করোনা রোগীর দেহেই রক্ত জমাট বেঁধে যেতে দেখা গিয়েছে। যে কারণে হাত বা বিশেষ করে পায়ের আঙ্গুল ফুলে যাওয়া-কে এই রোগের নতুন লক্ষণ বলে মনে করা হচ্ছে। ডাক্রাররা বলছেন এই ফোলার কারণ রক্ত সঞ্চালনে অনিয়ম। এর ফলে ফুসফুস এবং মস্তিষ্কেও রক্ত জমাট বাঁধতে থাকে এবং জটিলতা আরও বাড়ে।
অন্ত্র
প্রায় ২০ শতাংশ কোভিড-১৯ রোগীর ক্ষেত্রে ডায়রিয়া বা বমি বমি ভাবের মতো গ্যাস্ট্রিক-এর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। শরীরের অন্যান্য অংশের চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ বেশি এসিই-২ রিসেপ্টর রয়েছে অন্ত্রনালীতে। একদশক আগে আরেকটি করোনভাইরাস যে সার্স মহামারি সৃষ্টি করেছিল, সেই ভাইরাসটিও পৌষ্টিকতন্ত্রে হামলা করেছিল। কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে কোলন বা মলাশয়ের ক্ষতি হচ্ছে, ৫০ শতাংশ-এরও বেশি রোগীদের মলের নমুনায় ভাইরাসটির উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
কিডনি, মস্তিষ্ক এবং লিভার
গবেষণায় করোনাভাইরাস-এর জন্য কিডনি ক্ষয়ের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে। চিনের হুবেই এবং সিচুয়ান-এর প্রায় ২০০ রোগীর মধ্যে ৫৯ শতাংশের প্রস্রাবে প্রোটিন এবং ৪৪ শতাংশে রক্তকণার উপস্থিতি মিলেছে। ডাক্তাররা বলেছেন, এগুলি কিডনি-র সমস্যার লক্ষণ। একইভাবে, চিন থেকে প্রাপ্ত গবেষণায় দেখা গিয়েছে অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই লিভার বা যকৃত-এ এনজাইম-এর পরিমাণ অস্বাভাবিক রকম বেড়ে গিয়েছে, যাতে ক্ষতি হয়েছে লিভারের। তবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ভেন্টিলেটরের সহায়তা এবং কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের জন্যও কিডনি এবং লিভারের এই ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে। তাই বিষয়টি অনিশ্চিত। এর পাশাপাশি একটা বড় অংশের রোগীদের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি, স্ট্রোক, খিঁচুনি, মস্তিষ্কের প্রদাহ-এর মতো স্নায়বিক ক্ষতির লক্ষণ-ও দেখা গিয়েছে। জাপানের এক গবেষণায় সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড অর্থাৎ মস্তিষ্ট ও স্নায়ুতন্ত্রে যে তরল থাকে, তাতেও এই সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।