বেইরুটে তীব্র জনরোষ, বিস্ফোরণের ধাক্কায় এবার পতন ঘটল লেবানন সরকার
- FB
- TW
- Linkdin
সরকারবিরোধী আন্দোলন বেশ কিছু দিন আগেই শুরু হয়েছিল বেইরুট। দেশের সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত, এই অভিযোগে গত বছর আন্দোলনে নামে তরুণরা। করোনা মহামারীর কারণে প্রাথমিকভাবে আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়েছিল। কিন্তু অনেকের চাকরি চলে যাওয়ায় করোনাকে উপেক্ষা করেই ফের রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ। তার মধ্যে বেইরুট বন্দরে বিস্ফোরণের ঘটনা ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন আন্দোলনগুলোকে বড় আকারে পরিণত করেছে।
অনেকেই মনে করছেন, এই বিস্ফোরণের জন্য দায়ী দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের অবহেলা ও দুর্নীতি। মুখে লেবাননের পতাকা রঙের মাস্ক পরে তারা দিকে দিকে সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছেন। আগুন লাগিয়ে দিচ্ছেম বিভিন্ন সরকারি অফিসে।
রবিবার পার্লামেন্টের সামনে তৈরি পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশও বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পাল্টা কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। তবে আন্দোলনকারীদের কোনোভাবেই থামাতে পারছে না পুলিশ।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, সরকারকে এখনই গদি ছাড়তে হবে। নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে বিপ্লবের পথে যেতেও প্রস্তুত তারা। বিক্ষোভের মুখে তিন জন মন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। সোমবার দেশটির আইনমন্ত্রীও পদত্যাগ করেন। তবে এতেও বিক্ষোভকারীরা শান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে সোমবার দুপুরেও নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
গত জানুয়ারিতে এই মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল ইরান সমর্থিত লেবাননের প্রভাবশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহার মিত্রদের সমর্থনে। জানা যাচ্ছে সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনেক মন্ত্রী তাদের পদত্যাগের ইচ্ছের কথা জানান প্রধানমন্ত্রীকে।
গত জানুয়ারিতে এই মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল ইরান সমর্থিত লেবাননের প্রভাবশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহার মিত্রদের সমর্থনে। জানা যাচ্ছে সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনেক মন্ত্রী তাদের পদত্যাগের ইচ্ছের কথা জানান প্রধানমন্ত্রীকে।
গত বছর ডিসেম্বরে হারিরি সরকারের বিরুদ্ধে টানা দুই মাসের বিক্ষোভের পর হাসান দিয়াব প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সোমবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া টেলিভিশন ভাষণে হাসান দিয়াব তাঁর সরকারের পদত্যাগ ঘোষণা করেন।
টেলিভিশনে ভাষণে দিয়াব বলেন, রাজধানীর বন্দর এলাকার গুদামে গত সাত বছর ধরে পড়ে থাকা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ‘সর্বত্র দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ারই ফল’।
রাজধানীর বন্দর এলাকায় বিস্ফোরকের ওই গুদামে গত ৪ অগাস্ট ভয়াবহ বিস্ফোরণে বহু মানুষ হতাহত হয়। বিস্ফোরণে ১৬৩ জন নিহত এবং ছয় হাজারের বেশি মানুষ আহত হওয়ার খবর জানা গিয়েছে। সোমবার নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২০ হয়েছে। এখনো আরো ১১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে লেবাননে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভ তীব্র হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দিয়াব বলেন, ‘‘আজ আমরা জনগণের ইচ্ছাকে অনুসরণ করছি। জনগণ সাত বছর ধরে লুকিয়ে রাখা এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার চায়। তারা সত্যিকারের পরিবর্তন চায়। এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে....আমি আজ এই সরকারের পদত্যাগ ঘোষণা করছি।”
এই ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন নতুন একটি মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত দিয়াব সরকারকে ‘তত্ত্বাবধায়ক’ হিসাবে থাকার অনুরোধ করেছেন বলে জানা গিয়েছে।