- Home
- World News
- International News
- পাকিস্তানে এবার কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পঙ্গপাল, বিশ্বের নানা প্রান্তে টেস্টি ডিশ হিসাবে খ্যাতি রয়েছে এই পতঙ্গের
পাকিস্তানে এবার কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পঙ্গপাল, বিশ্বের নানা প্রান্তে টেস্টি ডিশ হিসাবে খ্যাতি রয়েছে এই পতঙ্গের
- FB
- TW
- Linkdin
কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের পূর্ব দিকে উত্তর কিভুর রাজধানী গোমা। রুক্ষ, আগ্নেয়গিরি ঘেরা এই শহরের সিংহভাগ দারিদ্রসীমার নীচে। খাদ্যাভাসে পোকাতেই এরা স্বচ্ছন্দ। বাজারে রীতিমতো পসরা সাজিয়ে পোকা কেনাবেচা চলে। ঝিঁঝিঁ, গঙ্গাফড়িং, মথের লার্ভা। তবে উপাদেয় ও সুস্বাদু পোকা হিসেবে পঙ্গপালের কদর একটু বেশি। প্রোটিনও ভরপুর এবং পুষ্টিও মেলে।
ফসলের শত্রু পঙ্গপাল নাকি প্রোটিনের আধার। ভেজে খেলে খেতেও নাকি অসাধারণ। বিশ্বের অনেক দেশ পঙ্গপালের রেসিপি তৈরি করে। মধ্য প্রাচ্য, আফ্রিকার অনেক দেশেই পঙ্গপাল খাওয়ার রীতি রয়েছে।
পঙ্গপাল রেঁধে খাওয়ার হরেক রকম রেসিপি আছে। মুচমুচে ভাজা করে, সিদ্ধ বা হাল্কা ভাপিয়ে পঙ্গপাল নাকি বেশ উপাদেয়। আবার শুকিয়ে রেখে পরে সেটা রান্না করে খাওয়ার অভ্যাসও আছে। ওই অনেকটা শুঁটকির মতো। যে দেশের যেমন রেওয়াজ।
সৌদি আরবে রমজানের সময় পঙ্গপাল রেঁধে খাওয়া হয়। এটা নাকি তাদের রীতির মধ্যেই পড়ে। ২০১৪ সালে আল-কাসিম এলাকায় পঙ্গপাল খাওয়ার অভ্যাস এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে শক্ত হাতে হাল ধরতে হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে।
ইয়েমেনিরা আবার সরকারি নিষেধ অমান্য করেই দিব্যি পঙ্গপাল রান্না করে খেয়ে চলেছে। মরক্কোতে তো পঙ্গপাল রান্নার বিশেষ রেসিপিও রয়েছে। আরব, মিশর, মরক্কোর বাজারে ভাল দামেই পঙ্গপাল কেনাবেচা চলে। তার রান্নারও অনেক ধরন আছে।
তবে এই পঙ্গপাল খাওয়ার অভ্যাসটা ঠিক কবে থেকে তৈরি হয়েছে তার সঠিক সাল, তারিখ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাচীনকাল থেকেই পোকা খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে, যার কিছুটা প্রয়োজনের তাগিদে আর বাকিটা কোনও না কোনওভাবেই স্থানীয় রীতি-রেওয়াজের মধ্য়ে ঢুকে গেছে।
বাইবেলেও মধু দিয়ে পঙ্গপাল খাওয়ার কথা লেখা রয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে এখনও পঙ্গপাল খাবার হিসাবে গ্রহণ করা হয় না। ভারতে তো প্রায় হয় না বললেই চলে।
পোকা খাওয়ার অভ্যাসকে বলে এন্টোমোফ্যাগি। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড-সহ বিশ্বের নানা দেশের খাদ্যাভাসেই পোকা রয়েছে। সমীক্ষা বলছে ৮০ শতাংশ মানুষ ‘এন্টোমোফ্যাগাস’। হাজারেরও বেশি ধরনের পোকা রয়েছে তাদের খাবারের তালিকায়। মেক্সিকোতে পুষ্টিকর খাবার হিসেবে পোকার চল রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পঙ্গপালের মধ্যে ভরপুর প্রোটিন রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ১৩-২৮ গ্রাম। পঙ্গপালের লার্ভায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রোটিন রয়েছে ১৪-১৮ গ্রাম। ডেসার্ট পঙ্গপালের প্রতি ১০০ গ্রামে ফ্যাট রয়েছে ১১.৫ গ্রাম, কোলেস্টেরল ২৮৬ মিলিগ্রাম। তাছাড়া ফ্যাটি অ্যাসিডও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।
এদিকে ভারতের মত পাকিস্তানেও হানা দিয়েছে পঙ্গপাল। দিশেহারা পাকিস্তানের কৃষকরা। এই পোকার আক্রামণে ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়েছে মাঠের ফসল। নষ্ট হয়েছে গাছের ফলও। এতে কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এরকম অবস্থায় পঙ্গপালের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে জাল দিয়ে পঙ্গপাল ধরে হাঁস-মুরগির উচ্চ-প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (ফিড) বানানোর প্রজেক্ট শুরু করেছে পাকিস্তান। এই পোকা প্রক্রিয়াজাত করে মুরগির খাবার তৈরি করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের খাদ্য সুরক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মুহাম্মদ খুরশিদ এবং পাকিস্তান কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের বায়োটেকনোলজিস্ট জোহর আলী এই কৌশল বের করেছেন বলে জানা গেছে।
ইয়েমেনের একটি ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই পথ বের করেছে পাকিস্তান। ২০১৯ সালের মে মাসে ইয়েমেনে পঙ্গপাল হানা দিলে দেশটির কয়েকটি অঞ্চলে এভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। পঙ্গপাল ধরা খুব সহজ। এরা দিনের আলোয় চলাচল করে। রাতভর সাধারণত গাছেই থাকে।
২০১৯ সালের মার্চে পাকিস্তানে ব্যাপকভাবে পঙ্গপালের আক্রমণ হয়েছিল। সিন্ধু, দক্ষিণ পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়ায় কমপক্ষে ৯ লাখ হেক্টর জমিতে ছড়িয়ে পড়ে পঙ্গপাল বাহিনী। ধ্বংস করে মাঠের ফসল। পঙ্গপালের আক্রমণ দূর করতে ইসলামাবাদ গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।