- Home
- World News
- International News
- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উঠছে চেরনোবিল বিপর্যের কথা, জানুন ৩৬ বছর আগে পরমাণু কেন্দ্রে কী হয়েছিল
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উঠছে চেরনোবিল বিপর্যের কথা, জানুন ৩৬ বছর আগে পরমাণু কেন্দ্রে কী হয়েছিল
ক্রমশই ভঙ্কর আকার নিচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ (Russia-Ukraine War)। গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার আর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তারপর থেকে শুরু করে এপর্যন্ত ইউক্রেনের প্রায় অধিকাংশই দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। এই অবস্থায় রুশ সেনার নজরে পড়েছে ইউক্রেনের বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্র ঝাপোরিজিয়া (zaporozhzhia nuclear power plant)। যেখানে শুরু হয়েছে গোলা বর্ষণ। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই চেরনোবিল (Chernobyl disaster) প্রসঙ্গ তুলে রাশিয়াকে সতর্ক করেছে ইউক্রেন। প্রায় ৩৬ বছর আগের চেরনোবিল প্রসঙ্গ নতুন করে প্রসাঙ্গিক করে দিল ইউক্রেন - রাশিয়া যুদ্ধে।
- FB
- TW
- Linkdin
ঝাপোরিজিয়ায় হামলা
রুশ সেনা এদিন হামলা চালিয়েছে জাফোরিজিয়ায়। এটি বর্তমান ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণু কেন্দ্র। কিন্তু এখানে সংস্কারের কাজ চলায় বন্ধ রয়েছে উৎপাদনের কাজ। কিন্তু ইউক্রেন সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এখানে প্রচুর পরিমাণে পারমাণবিক সামগ্রী মজুত রয়েছে।
হিরোসিমাকে ছাড়িয়ে দিয়েছিল চেরনোবিল
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোসিমায় যে পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল চেরনোবিলের ঘটনা ছিল তার থেকেও পাঁচ গুণ ভয়ঙ্কর। হিরোসিমায় যে পরমাণু বিস্ফোরণ হয়েছিল তেমনই পাঁচটি পরমাণু বিস্ফোরণের সমান ছিল চেরনোবিল। বিস্ফোরনের কারণে যে মেঘ তৈরি হয়েছেল তা ইউক্রেন বেলারুশ ছাড়িয়ে ব্রিটেন এমনকি আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল।
চেরনোবিলের সঙ্গে তুলনা
ইউক্রেন সরকার ইতিমধ্যেই রাশিয়াকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বলেছে জাপোরিজিয়ায় যদি কোনও বিস্ফোরণ হয় তাহলে তা চেরনোবিলের তুলনায় ১০ গুণ ভয়ঙ্কর হবে। যার দায় নিতে হবে রুশ প্রেসি়ডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। কিন্তু এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেনি রাশিয়া।
সোভিয়েতের চেরনোবিল
সালটা ছিল ১৯৮৬। তখনও অক্ষত ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। প্রাক সোভিয়েতের সবথেকে বড় দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে এটি চিরনোবিল ছিল অন্যতম। তবে সেই সময় কোনও হামলা বা গোলাগুলি চলেনি। পারমাণবিক চুল্লির কর্মীদের ভুলেই ঘটেছিল দুর্ঘটনা। যা নিয়ে এখনও আলোচনা হয়। বর্তমানেও চেরনোবিল ইউক্রেনের অন্তর্গত।
চেরনোবিলের অবস্থান
বর্তমান ইউক্রেন ও বেলারুশের সীমান্ত অবস্থিত চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। আজ একটি একটি পরিত্যক্ত শহর। পরিত্যক্ত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় ৫০ মাইল এলাকা জুড়ে নেই কোনও লোকবসতি। গোটা এলাকা খাঁখাঁ করছে।
চেরলোবিল দুর্ঘটনা
১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল, রাত ১টা ২৩ মিনিয়ে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার মুখোমুখী হয়েছিল তৎকালীন রাশিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। রাতের অন্ধকারেই প্রবল বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে চেরনোবিল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারটি পারমাণবিক চুল্লি ছিল। চতুর্থ চুল্লি থেকেই দূর্ঘটনার সূত্রপাত।
দুর্ঘটনার কারণ
চেরনোবিল দুর্ঘটনা ঘটে শীতলীকরণের একটি পরীক্ষা চালানোর সময়। চতুর্থ চুল্লির টারবাইনে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ঠান্ডা জল দিয়ে দিয়েছিলেন পারমাণবিক কেন্দ্রের কর্মীরা। তাতে সেখানে প্রচুর পরিমাণে বাষ্প তৈরি হয় ও নিমেষেই বিস্ফোরণ ঘটে। পরপর দুটি বিস্ফোরণ ঘটে।
কর্মীদের ভুলে দুর্ঘটনা
দুর্ঘটনার জন্য দায়ি করা হয় কর্মরত কর্মীদের। মূলত রাতের শিফটের কর্মীদের জন্যই এই দুর্ঘটনা ঘটে। রিপোর্টে বলা হয়েছিল পারমাণবিক চুল্লিটি অনুপযুক্ত অবস্থায় চালানো হয়েছিল। যারফলে শক্তি নির্গমন অতিরিক্ত হয়ে গিয়েছিল। এই দুর্ঘটনার জন্য তিন জনকে ১০ বছর কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হয়।
কর্মীদের ভুলের কারণ
অপর একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে কর্মীদের রাতের শিফটে জোর করে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এইদিক থেকে চেরনোবিল দুর্ঘটনার জন্য ম্যানেজমেন্টকেও দায়ি করা হয়। এই রিপোর্টেই বলা হয়েছে যেসব কর্মীদের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাদের চুল্লি বন্ধ করার এখতিয়ার ছিল না। তাই দুর্ঘটনার পূর্বে তারা চুল্লিটি বন্ধ করতে পারেনি। আর রাতের বেলা যেহেতু সমস্যা তৈরি হয়েছিল তাই উর্ধ্বোতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করেনি কর্মরতরা।
বিস্ফোরণের ভয়াবহতা
চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রের চতুর্থ চুল্লিতে পরপর দুটো বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা একটাই বেশি ছিল যে চুল্লির ওপরে এক হাজার টন কংক্রিটের ঢাকটা সরে যায়। ভেঙে যায় চাদ। তৈরি হয় বিশাল গহ্বর। দুর্ঘটনার প্রায় ২০ ঘণ্টা পর ব বাইরের বাতাস সেখানে ঢোকে। তারপরই দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে এসে আগুন লাগিয়ে দেয় চুল্লিতে। ভয়ঙ্কর সেই আগুন জ্বলে ছিল ১০ দিন ধরে।
বিষাক্ত বাতাস
প্রচুর পরিমাণে পারমাণবিক পদার্থে আগুন লাগে। যার বিষক্রিয়ায় নাকাল হয় মানুষ। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে বিষাক্ত বাতাস। পরিবেষ দুষণ ভয়ঙ্কর আকার নেয়। যার ফল ভুগতে হয় সাধারণ মানুষকে। কেন্দ্রে আসেপাশে থাকা মানষকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তারমধ্যেই অনেকে অসুস্থ হতে শুরু করে।
চেরনোবিলের ক্ষতি
সোভিয়েত অধ্যায়ের একটি কালো দিন ছিল চেলনোবিল বিপর্যয়। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই প্ল্যান্টের চার কর্মী নিহত হয়। ৫০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যাদের মধ্যে ছিল ৬ লক্ষ শিশু। উদ্ধাকরারী প্রায় ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০০ বিলিয়ন ডলার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল তৎকালীন সোভিয়েত সরকার। বিষাক্ত সিসিয়াম ছড়েয়ে পড়েছিল প্রায় ১৬২.১৬০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। যার মধ্যে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া ছাড়াও ছিল ইতালি, বুলগেরিয়া, সিউজারল্যান্ড, নরওয়ে, অস্ট্রিয়ার সুইডেনের মত দেশগুলি।