ইউরোপের সামনে আরো ‘কঠিন’ সময়, একাধিক দেশে শুরু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ
বিশেষজ্ঞরা যেমন আশঙ্কা করছিলেন, ঠিক সেটাই হল। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ছে ইউরোপের একাধিক দেশে। ফলে নতুন করে ফের বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করেছে দেশগুলি। এরমধ্যে আরও আশঙ্কার খবর শুনিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 'হু'। আগামী অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ইউরোপে প্রতিদিন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছে 'হু'।
- FB
- TW
- Linkdin
গোটা বিশ্বে ক্রমেই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখা। ইতিমধ্যেই মোট আক্রান্ত ৩ কোটি ছুঁইছুঁই। মারা গিয়েছেন ৯ লক্ষ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। এমতাবস্থায় ফের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ফ্রান্স ও স্পেনে। ফের বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ শুরু হয়েছে দুই দেশেই। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মৃতের সংখ্যায়। মে জুন মাসে দুদেশেই করোনা সংক্রমণের জেরে মৃতের সংখ্যা কমতে শুরু করেছিল কিন্তু বর্তমানে তা আরও লাগামছাড়া ভাবে বেড়ে চলেছে। ফ্রান্সে এখনও মোট মৃতের সংখ্যা ৩১ হাজার । স্পেনে সেখানে ৩০ হাজার পার করেছে।
মার্চে করোনার দাপট যখন ইউরোপে শুরু হয়, তখন ফ্রান্সও তা সামাল দিতে নাজেহাল হয়ে পড়েছিল। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন ঘোষণা করে সে দেশের সরকার। কিন্ত মে থেকে ধীরে ধীরে দৈনিক সংক্রমণ কমতে থাকে ফ্রান্সে।
প্রায় চার মাস পর আবার যে ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে বিশেষজ্ঞরা বলেই দিয়েছেন প্রত্যাশিত দ্বিতীয় ঢেউই এবার শুরু হয়েছে ফ্রান্সে। সংক্রমণ কমার সঙ্গে সঙ্গে বিধিনিষেধ উড়িয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভিড় করছিলেন সে দেশের মানুষ। তার ফলে গত শুক্রবার থেকে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ফ্রান্স সরকার জানিয়ে দিয়েছে যে তারা আর লকডাউন করতে চায় না। তাই সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষকেই সতর্ক হতে হবে।
ইউরোপের মধ্যে এখনও সব থেকে খারাপ অবস্থা স্পেনের । ইতিমধ্যে সে দেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজারের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মার্চে অতিমারি শুরু হওয়ার সময়েও এক দিনে এত সংখ্যক নতুন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায়নি স্পেনে। স্পেনের সংক্রমণের হারটিও ভাবিয়ে তুলছে বিশেষজ্ঞদের। বর্তমানে স্পেনে সংক্রমণের হার রয়েছে ১১.৮ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন যে এই হারকে অন্তত পাঁচ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনতে হবে।
সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী ব্রিটেনেও। দেশটিতে ইতিমধ্যে মৃতের সংখ্যা ৪১ হাজার ছাড়িয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লক্ষ ছুঁইছুঁই। বিভিন্ন মহল থেকে খবর পাওয়া যাচ্ছে যে নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করতে পারে বরিস জনসনের সরকার। ইতিমধ্যে সোমবার থেকে জমায়েতের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে ব্রিটেনে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে ইজরায়েলেও। সে কারণে গত শুক্রবার থেকে লকডাউনে চলে গিয়েছে দেশটি। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, আগামী তিন সপ্তাহ লকডাউন থাকবে গোটা দেশ। বাসিন্দারা নিজেদের বাড়ির পাঁচশো মিটারের বাইরে বেরোতে পারবেন না
গত রবিবারই বিশ্বে এক দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যায় রেকর্ড হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, গত রবিবার বিশ্বের প্রায় তিন লাখ আট হাজার মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলেই শনাক্ত হয় প্রায় দুই লাখ।
'হু' জানিয়েছে, গত রবিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে অন্তত সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ৯ লাখ ৩৮ হাজার ছাড়িয়েছে। গত রবিবার বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল তিন লাখ সাত হাজার ৯৩০ জন, যা 'হু'-র হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বোচ্চ আক্রান্ত শনাক্ত হয় গত ৬ সেপ্টেম্বর, তিন লাখ ছয় হাজার ৮৫৭ জন।