- Home
- World News
- International News
- যৌনদাসত্বই চিনে উইঘুর যুবতীদের ভবিষ্যত, কারখানা মালিক থেকে পুলিশ - সুযোগ নিতে ছাড়ে না কেউ
যৌনদাসত্বই চিনে উইঘুর যুবতীদের ভবিষ্যত, কারখানা মালিক থেকে পুলিশ - সুযোগ নিতে ছাড়ে না কেউ
- FB
- TW
- Linkdin
জানা গিয়েছে ২০১৮ ও ২০১৯ - এই দুই বছরে ৫ লক্ষেরও বেশি উইঘুর যুবদের (যার মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা), দক্ষিণাঞ্চলীয় শিনজিয়াং প্রদেশের বিভিন্ন নৈতিক সংশোধানাগার থেকে ঝিজিয়াং, জিয়াংসু, হেনান, হেবেই এবং গুয়াংদং প্রদেশের পোশাক, এবং খেলনা কারখানায় কাজ করতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ২৪ ঘন্টাই তাঁদের ভিডিও নজরদারির অধীনে থাকতে হয়। এরমধ্যে প্রতিদিন ১৪ ঘণ্টারও বেশি সময় তাদের দিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করানো হয়। প্রহরীদের অনুমতি কারখানার বাইরে যাওয়ার অনুমতি পায় না তাঁরা।
সারা বিশ্বই জানে চিনা পণ্য মানেই সস্তা। কিন্তু সেই সস্তার পণ্য তৈরির পিছনে যে উইঘুরদের কতটা ঘাম-রক্ত শুষে নেওয়া হয়, তা অনেকেই জানেন না। ২০১৯ সালে মার্কিন বিদেশ দপ্তরের উদ্য়োগে শিনজিয়াং প্রদেশে জোর করে শ্রম আদায় নিয়ে যে শুনানি হয়েছিল, সেখানে স্বতন্ত্র গবেষক অ্যাড্রিয়ান জেনস, উইঘুর মানবাধিকার কর্মী নুরি টার্কেল এবং আরও দু'জন গবেষক জানিয়েছিলেন, সস্তা পণ্য উত্পাদন করতে গিয়ে চিন বিনামূল্যে বা একেবারে নামমাত্র বেতনে বন্দি উইঘুরদের খাটায়। আর তার জোরে ফুলে ফেঁপে উঠেছে চিনা অর্থনীতি। এই অর্থনীতির জোরেই বেজিং গোটা বিশ্বের উপর ছড়ি ঘোরাতে চাইছে।
এই ভয়াবহ অত্যাচারে অনেক উইঘুর যুবতীই প্রায়শই অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিনা কারখানার মালিকরা অসুস্থতার খবর পেলে ওই মেয়েদের কর্মক্ষেত্র থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের আর কখনও কারখানায় ফিরে আসতে দেখা যায়নি। কোথা নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের? শিনজিাং প্রদেশের বেশ কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করেছে তাদের বেশিরভাগই যৌন দাসত্বের শিকার হন।
বস্তুত চিনা কারখানার মালিকরা এবং চিনা সরকারি তত্ত্বাবধায়করা যে কোনও সময় যো কোনও উইঘুর মহিলা শ্রমিককেই যৌনমিলনের জন্য বাধ্য করতে পারেন বলে দাবি করছেন উইঘুর নেতারা। কারণ তাঁদের মানুষ বলেই মনে করেন না চিনা কর্তারা। নির্যাতিতা যুবতীরা কোনওদিন এই অত্যাচারের কথা বহির্বিশ্বে জানাতে পারেননি। কিন্তু কিছু কিছু সময় তাঁরা মরিয়া হয়ে পরিবার-পরিজনদের ফোনে সেই ভয়ানক ব্যবহারের কথা জানান। তবে তারপরই তাঁদের কাছ থেকে আর কোনওদিন নিকটজনরা কোনও ফোন পাননি, তাঁদের সঙ্গে ঠিক কী ঘটে তাও কারোর জানা নেই। আবার অনেকেই যৌন হেনস্থার পর আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। আর বাকিরা বেঁচে থাকার ইচ্ছেয় সেই পথটাই মেনে নেন।
উইঘুর টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী উইঘুর মহিলাদের এই যৌন ক্রীতদাসী হওয়া শুধু কারখানার দেওয়ালের ভিতরেই অবশ্য আটকে থাকে না। কারখানার অভ্যন্তরে বাইরেও তাঁদের দিয়ে 'এসকর্ট পরিষেবা' দিতে বা পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়।
তারও আগে শিনজিয়াং-এর বিভিন্ন ইউঘুর বন্দি শিবির, যেগুলিকে চিনা কর্তৃপক্ষ বলে থাকেন চরমপন্থীদের সুস্থ পথে ফিরিয়ে আনার নৈতিক সংশোধানার, সেই শিবিরগুলিতেও নিয়মিত বন্দিদের উপর যৌন অত্যাচার চলে। উরুমচি শহরের কাছে দাওয়ানচিং ক্যাম্পের এলাকার এরকমই এক শিবিরের এক রক্ষী একবার এক কাজাখস্তানের মানবাধিকার কর্মীকে একটি চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, উইঘুর শিবিরের মহিলা বন্দিদের বেশিরভাগই চিনা পুলিশের ধর্ষণের শিকার হন।
এরকম এক শিবির থেকে ইজরাইলে পালিয়ে যাওয়া এক উইঘুর মহিলা দাবি করেছেন, এই শিবিরগুলিতে 'যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ খুবই সাধারণ বিষয়'। শিবিরে সুন্দরী যুবতী দেখলেই তাঁদের ধর্ষণ করে চিনা পুলিশ। অনেকসময় মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে তাদের যাবতীয় প্রতিরোধ ভেঙে দেওয়ার জন্য শ-দুয়েক বা তার বেশি পুরুষ ও মহিলা বন্দিদের বসিয়ে, তাঁদের সামনেও কোনও কোনও যুবতীকে ধর্ষণ করা হয়।
উইঘুর মহিলাদের অমানুষিক পরিশ্রম করানো বা যৌনদাসী হতে বাধ্য করার মধ্যেই তাদের উপর চিনা সাংস্কৃতিক আঘাত সীমাবদ্ধ থাকে না। সম্প্রতি, হান পুরুষ অর্থাৎ অন্যান্য অংশের চিনা পুরুষদের সঙ্গে উইঘুর যুবতীদের জোর করে বিয়ে দেওয়া নিয়েও উইঘুরদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। উইঘুর মহিলাদের মধ্যে যাঁরা বেশি সুন্দরী, তাঁদেরই বেছে বেছে হান পুরুষদের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেকসময় বিবাহিত মহিলাদের স্বামীকে 'ভ্যানিশ' করে দিয়ে, তাকেও বিয়ে দেওয়া হচ্ছে হান পুরুষদের সঙ্গে, এমনই অভিযোগ রয়েছে।
এই সবই করা হচ্ছে উইঘুরদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য চিনের মাটি থেকে মুছে ফেলার লক্ষ্যে। এমনটাই দাবি করেছেন বেশ কয়েকজন উইঘুর মানবাধিকার কর্মী। আন্তর্জাতিক মহলও এখন বেজিং-এর এই চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বিগ্ন। অনেক উইঘুর সমস্যা বিশেষজ্ঞই এই বিষয়ে জিনপিং প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করছেন।