- Home
- World News
- International News
- কোথা থেকে পায় এত যোদ্ধা, তালিবানদের কে দেয় টাকা - কীভাবে ২০ বছর ধরে যুদ্ধ করে গেল তারা
কোথা থেকে পায় এত যোদ্ধা, তালিবানদের কে দেয় টাকা - কীভাবে ২০ বছর ধরে যুদ্ধ করে গেল তারা
- FB
- TW
- Linkdin
কীভাবে ২০ বছর ধরে যুদ্ধ চালালো আফগানরা?
সোভিয়েত বাহিনীর পরাজয়ের পর ধীরে ধীরে আফগানিস্তান চলে গিয়েছিল ইসলামি চরমপন্থী গোষ্ঠী তালিবানদের হাতে। ৯/১১-র পর ২০০১ সালে তাদের ক্ষমতাচ্যুত মার্কিন সেনা। তারপর ২০ বছর কেটে গিয়েছে। ওয়াশিংটন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। কিন্তু, দুই দশকের এই যুদ্ধে তালিবানদের সামর্থ্য এতটুকু কমেনি। মার্নি সেনা সরলেই দেশটি আবার তালিবানদের হাতেই চলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু, কী করে এতদিন ধরে এতটুকু ক্ষতি স্বীকার না করে যুদ্ধ চালিয়ে গেল তালিবানরা? এতদিনের দীর্ঘ যুদ্ধ চালাতে গেলে লাগে তিনটি জিনিস - তহবিল, যোদ্ধা এবং স্থানীয় সমর্থন।
আফগানিস্তানের কত জায়গা তালিবানদের দখলে?
বুধবারই ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তালিবান মুখপাত্র তথা কমান্ডার মৌলানা ইুসুাফ আহমদি বলেছে, ৮৫ শতাংশ এলাকা তাদের দখলে, বাকি অংশও শীঘ্রই তাদের হাতে চলে আসবে। সিএফআর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০২১ সালের গোড়ার দিকে তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে ছিল আফগানিস্তানের মোট ৪০০ টি জেলার আনুমানিক পাঁচ ভাগের এক ভাগ। এক তৃতীয়াংশ ছিল আফগান সরকার নিয়ন্ত্রণে। আর বাকি জেলাগুলিতে লড়াই চলছিল। তবে মার্কিন সেনা আফগান মাটি থেকে সরে যাওয়া শুরু করতেই, তালিবানরা সেই দেশের আরও বেশ কয়েকটি জেলা এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত দখল করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রাদেশিক রাজধানীকে তারা ঘিরেও ফেলেছে।
তালিবানদের হাতে যোদ্ধার সংখ্যা কত?
বৈদেশিক সম্পর্ক পরিষদের (CFR) প্রতিবেদন অনুযাায়ী গত উনিশ বছরে, তালিবানরা সংখ্যার হিসাবে বর্তমানে সবথেকে শক্তিশালী। এখন প্রায় ৫৫,০০০ থেকে ৮৫,০০০ পূর্ণ-সময়ের যোদ্ধা রয়েছে তালিবানদের হাতে। চলতি বছরের শুরুতে এক মার্কিন সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এই গোষ্ঠীর মোট সদস্য সংখ্যা ২ লক্ষেরও বেশি। মূল যোদ্ধা ছাড়াও স্থানীয় তালিবানি মিলিশিয়ার সংখ্যা আরও ৯০,০০০-এর মতো। এছাড়া আরও কয়েক হাজার লোক রয়েছে যারা সরাসরি যুদ্ধ না করলেও সহায়তাকারীর ভূমিকা নেয়। উল্টোদিকে, আফগান বাহিনীর সংখ্যা সব মিলিয়ে ১ লক্ষ ৮৫ হাদারের মতো। আর পুলিশ সদস্য রয়েছে আরও ১০ লক্ষের মতো।
কোথা থেকে আসে এত যোদ্ধা?
সামরিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, মার্কিন আগ্রাসনে অন্তত কয়েক হাজার তালিবানি যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু, তাতে তারা খুব একটা কাবু হয়নি। কারণ, আফগানিস্তানে তাদের যোদ্ধা সংগ্রহের একটি মসৃণ ব্যবস্থা আছে, যা কাজ করে তেল দেওয়া যন্ত্রের মতো। এর বাইরে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে বসবাসকারী প্রায় ২০ লক্ষ আফগান শরণার্থীরাও তালিবান নেতৃত্বকে যোদ্ধার জোগান দেয়।
আফগানিস্তানে কেন জন-সমর্থন পায় তালিবানরা?
স্থানীয় জনগণের সমর্থন ছাড়া তালিবানরা এতদিন ধরে এই যুদ্ধটা চালিয়ে যেতে পারত না। তালিবান গোষ্ঠী মূলত পশতুন সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে গঠিত। পশতুনরাই আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় সম্প্রদায়। আফগানিস্তানের দক্ষিণ ও পূর্বের বেশিরভাগ অঞ্চলেই তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলেরও পশতুনরা অন্যতম প্রধান জাতিগোষ্ঠী। পশতু ভাষায় 'তালিবান' শব্দের অর্থ 'শিক্ষার্থী'। সোভিয়েত বাহিনী সরে যাওয়ার পর, আফগানিস্তানে যখন বিভিন্ন গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করতে চাইছে, তখন দেশে স্থিতিশীলতা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশের মানুষের সমর্থন আদায় করেছিল তালিবানরা। আফগানিস্তানের পশ্চিমাংশের পশতুনদের একটা বড় অংশ এখনও তালিবানদের সমর্থন করেন। তাঁরা দেশে পশ্চিমী কাঠামোর সরকার ও প্রশাসনের বিরোধী।
তালিবানদের তহবিল কে জোগায়?
তহবিলের বিষয়ে তালিবানদের কিন্তু অন্য কারোর সাহায্য় দরকার হয় না। ভৌগলিক অবস্থানের জন্য মাদকদ্রব্য, চোরাচালান, অবৈধ খনন সবই চলে আফগানিস্তান দিয়ে। আর এই অবৈধ কাজকারবারই হল তালিবানদের অর্থের উৎস। বছরে গড়ে ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করে থাকে তারা। ২০১৯-২০২০ অর্থবর্ষে তো তাদের আয় ছিল আনুমানিক ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার করেছে। ফলে, অন্য কোনও দেশের সরকার বা আফগান নাগরিকদের আর্থিক সহায়তার ছাড়াই তালিবানরা বছরের পর বছর যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে।
পাকিস্তানের কাছ থেকে তালিবানরা কী ধরণের সমর্থন পায়?
পাকিস্তানের কাছ থেকে যোদ্ধা বা অর্থ - সবরকম সহায়তাই পেয়ে থাকে তালিবানরা। সম্প্রতি, উজবেকিস্তানে আঞ্চলিক যোগাযোগ সম্পর্কিত এক সম্মেলনে, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উপস্থিতিতেই আফগান রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি অভিযোগ করেছিলেন, মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে ১০,০০০-এরও বেশি জিহাদি যোদ্ধা পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, আফগানিস্তানের শান্তি আলোচনার সময়ে তালেবানরা যাতে সেই আলোচনাাকে 'গুরুত্ব সহকারে' নেয়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট চাপও দেয়নি ইসলামাবাদ। সম্প্রতি খবর পাওয়া গিয়েছে, পাক সেনার কমান্ডাররাও, বর্তমানে তালিবান যোদ্ধাদের সঙ্গে আফগানিস্তানে জায়গা দখলে যুক্ত হয়েছে।